thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলা বন্ধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

২০১৭ ফেব্রুয়ারি ২১ ২২:০২:০১
ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলা বন্ধ করতে হবে : প্রধানমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : ইংরেজি ঢঙে বাংলা বলার প্রবণতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন-‘এটা ছেলেমেয়েদের মধ্যে সংক্রামক ব্যাধির মতো ছড়িয়ে যাচ্ছে। যেন ওইভাবে কথা না বললে তাদের মর্যাদাই থাকে না। এই জায়গা থেকে আমাদের ছেলেমেয়েদের সরিয়ে আনতে হবে। যখন যেটা বলবে, সেটা সঠিকভাবে বলবে, সঠিকভাবে উচ্চারণ করবে, সঠিকভাবে ব্যবহার করবে।’

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে মঙ্গলবার বিকেলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই আহ্বান জানান। এই অনুষ্ঠানে ভাষা বিজ্ঞানী, গবেষকরাসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা উপস্থিত ছিলেন।

ভাষা শহীদ দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলা শুদ্ধভাবে ব্যবহারের উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন-‘আমাদের ভায়েরা জীবন দিয়ে, রক্ত দিয়ে এই ভাষা আমাদের উপহার দিয়ে গেছে। এর মর্যাদা আমাদের রক্ষা করতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েদের এই ভাষা শিখতে হবে।’

প্রমিত বাংলার পাশাপাশি আঞ্চলিক ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন- ‘বাংলার কথ্য ভাষায় বৈচিত্র্য আছে এবং সেটা থাকা উচিৎ।’

এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণে আঞ্চলিক উচ্চারণের প্রয়োগের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন- ‘‘জাতির পিতার ৭ই মার্চের ভাষণ শোনেন... দেখবেন সেখানে গোপালগঞ্জের ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে। আমি বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিলাম। বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা বলতেন, ‘উনি এভাবে বললেন কেন?’ আমি বলতাম, ‘স্যার উনি যখন কথা বলেন, জনগণের জন্য কথা বলেন। জনগণের জন্য সহজে উপলব্ধি করার মতো করেই তিনি বলতেন’।”

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠায় ইউনেস্কোর সহায়তার জন্য জাতিসংঘকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন-‘আমরা এত দ্রুত এই ইনস্টিটিউটের কাজ শুরু করেছিলাম এবং গবেষণা শুরু করেছি। অনেক ভাষার নমুনা এখানে সংরক্ষণ করা আছে। ইউনেস্কো এই প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটাগরি দুইয়ে উন্নীত করেছে। আমরা সেভাবে এই ইনস্টিটিউটকে গড়ে তুলতে চাই। আশা করি, বিশ্বের বুকে একদিন এই ইনস্টিটিউট আলাদা মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হবে।’

জ্ঞান পিপাসা ও প্রযুক্তির চাহিদা মেটাতেও অন্য ভাষা শেখার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন- ‘অন্য ভাষার প্রতি বৈরিতা নয়। মাতৃভাষা শিখতে হবে, সাথে সাথে আমরা অন্য ভাষাও শিখব। জীবন-জীবিকার জন্য অনেক সময় অন্য ভাষা শিখতে হয়। আমরা অন্য ভাষা শিক্ষার বিরোধী না। অন্য ভাষা শিখতে হবে। কিন্তু মাতৃভাষা ভুললে চলবে না।’

বাংলা ভাষার জন্য আত্মত্যাগের ইতিহাস ব্যাপকভাবে প্রচারের উপর গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন-‘আমরা বাঙালি.. আমাদের প্রতিটি মুহূর্তে সংগ্রাম করে প্রতিটি দাবি অর্জন করতে হয়েছে। কোনো কিছু সহজে আসে নাই। ঐতিহাসিকভাবে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শাসক এসেছে। কিন্তু এদেশের মানুষ কাউকে মেনে নেয়নি।’

বাংলাদেশের সব অর্জনের আওয়ামী লীগ ও বঙ্গবন্ধুর সম্পৃক্ততার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এই মাটির সন্তান হিসাবে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানই মনে হয় একজন, যিনি এই দেশে এই মাটির সন্তান হয়ে এই দেশকে শুধু স্বাধীন করেন নাই, এই দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় ছিলেন। আর তারপর আমি একজন ... অভাগা আছি। এর বাইরে যারাই যখন এসেছে .. আপনারা যদি একটু খোঁজ নিয়ে দেখেন; তারা কিন্তু এই বাংলার মাটিতে জন্মগ্রহণ করেনি। আশপাশের দেশে জন্মগ্রহণ করে আমাদের দেশে এসেছে। এটা হলো বাস্তবতা। সেই জন্য স্বাভাবিকভাবে এই মাটির সন্তান হিসাবে, আমাদের এই মাটির প্রতি টান আছে। মাটির টানটা কিন্তু বড় টান।’

জাতিসংঘের দাফতরিক ভাষা হিসাবে বাংলার স্বীকৃতি আদায়ে আরও সক্রিয় হওয়ার কথাও জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন-‘জনসংখ্যার দিক থেকে বাংলা ভাষাভাষীর স্থান ষষ্ঠ। সেই হিসাবে জাতিসংঘের একটি ভাষা হিসেবে বাংলাকে গ্রহণ করে কি না- এ ব্যাপারে আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি। যদিও এটা কার্যকর করতে অনেক রকম সমস্যা আছে। তবুও আমরা আমাদের দাবিটা তুলে রেখেছি। আমরা দাবিটা একদিন বাস্তবায়ন করতে পারব।’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের সভাপতিত্বে এই অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক জিন্নাত ইমতিয়াজ আলী, বাংলাদেশের ইউনেস্কোর আবাসিক প্রতিনিধি বিয়েত্রিস কালদান বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ইউনেস্কোর লিঙ্গুয়াপ্যাক্স ইনস্টিটিউটের উপদেষ্টা আনভিটা অ্যাবি। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা সচিব সোহবার হোসেন।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর