thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

হোটেল শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৩০০০ টাকা

২০১৭ মার্চ ০৭ ২২:৫২:৪৫
হোটেল শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি ৩০০০ টাকা

‘হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট’ শিল্পখাতের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করেছে সরকার।

বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় হোটেলে একজন অদক্ষ শ্রমিকদের (গ্রেড-৪) ন্যূনতম মূল মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার টাকা। অপরদিকে উচ্চতর দক্ষ (গ্রেড-১) শ্রমিক ১২ হাজার টাকা ও দক্ষ শ্রমিক ৬ হাজার টাকা, আধা-দক্ষ শ্রমিক ৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল মজুরি পাবেন। শিক্ষানবিসকালে একজন হোটেল শ্রমিক ও কর্মচারী মাসিক সর্বসাকুল্যে ৩ হাজার ২০০ টাকা পাবেন। শিক্ষানবীসকাল হবে ৩ মাস।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে মঙ্গলবার (৭ মার্চ) ন্যূনতম মজুরির নির্ধারণ করে আদেশ জারি করা হয়েছে।

হোটেল শ্রমিকদের অদক্ষ, আধা-দক্ষ, দক্ষ ও উচ্চতর দক্ষ শ্রেণিতে ভাগ করে বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকা, জেলা শহর, উপজেলা বা থানা ও অন্যান্য এলাকার ভিত্তিতে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। হোটেল-রেস্তোঁরায় প্রশাসনিক কাজ করা কর্মীদের তিনটি গ্রেডে ভাগ করে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে।

সব ক্ষেত্রেই বাড়ি ভাড়া ভাতা বিভাগীয় শহর ও সিটি কর্পোরেশন এলাকায় মূল মজুরির ৫০ শতাংশ, জেলা শহরে মূল মজুরির ৪৫ শতাংশ এবং উপজেলা/থানা ও অন্যান্য এলাকায় মূল মজুরির ৪০ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে।

সব গ্রেডেই বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকার শ্রমিক-কর্মচারীরা ৪০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা, ৫০০ টাকা যাতায়াত ভাতা পাবেন। জেলা শহরের শ্রমিক-কর্মচারীরা ৪০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও ৪০০ টাকা যাতায়াত ভাতা পাবেন। উপজেলা বা থানা ও অন্যান্য এলাকার শ্রমিকরা ৪০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা ও ৩০০ টাকা যাতায়াত ভাতা পাবেন।

গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে দেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে কর্মরত শ্রমিকরা ন্যূনতম ১০ হাজার টাকা মজুরি নির্ধারণের দাবিতে মিছিল ও সমাবেশ করে।

তাদের দাবি- সারাদেশের হোটেল ও রেস্টুরেন্টগুলোতে ২০ লাখের বেশি শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। শ্রম আইনের সুবিধাগুলো হোটেল থেকে তারা পান না। নামমাত্র মজুরিতে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন হোটেল শ্রমিকরা।

এরপর ওই বছরের ৩০ মার্চ শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে নিম্নতম মজুরি বোর্ডকে হোটেল-রেস্টুরেন্ট শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি কাঠামো প্রণয়নের নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে সিনিয়র জেলা জজ মো. আলী হায়দারকে চেয়ারম্যান করে একটি বোর্ড গঠন করা হয়।

বোর্ড গত বছরের ১৮ আগস্ট হোটেল শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরির খসড়া সবার মতামতের জন্য প্রকাশ করে। এখন সেটি চূড়ান্ত করে গেজেট আকারে জারি করা হয়েছে।

অদক্ষ শ্রমিক

বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় হোটেলে একজন অদক্ষ শ্রমিকদের (গ্রেড-৪) ন্যূনতম মূল মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার টাকা। জেলা শহরের হোটেলের অদক্ষ শ্রমিকের মূল বেতন হবে ২ হাজার ৪০০ টাকা। উপজেলা থানা ও অন্যান্য এলাকার হোটেলের শ্রমিকের মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে ২ হাজার ১৫০ টাকা।

বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশনের অদক্ষ শ্রমিকরা বাড়িভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতাসহ মোট ৬ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি পাবেন। ভাতাসহ জেলা শহরের শ্রমিকরা মোট ৫ হাজার ১৫০ টাকা, উপজেলা ও অন্যান্য এলাকার হোটেল শ্রমিকরা মোট ৪ হাজার ৬০ টাকা মজুরি পাবেন।

গ্রেড-৪ এ পার্সেল বয়, ডিস ওয়াস বয়, গ্লাস বয়, টেবিল বয়, ক্লিনার বা ঝাড়ুদার, কারিগর বয়, সহকারী ওয়েটার, অন্যান্য সাহায্যকারী অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত হবে।

আধা-দক্ষ শ্রমিক

আধা-দক্ষ হোটেল শ্রমিকরা বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ৩ হাজার ৬০০ টাকার সঙ্গে ভাতাসহ মোট ৬ হাজার ৩০০ টাকা মজুরি পাবেন। জেলা শহরের শ্রমিক মূল মজুরি ৩ হাজার টাকাসহ মোট ৫ হাজার ১৫০ টাকা ও উপজেলার শ্রমিক ২ হাজার ৪০০ টাকা মূল মজুরির সঙ্গে ভাতা যোগ করে মোট ৪ হাজার ৬০ টাকা পাবেন।

আধা-দক্ষ শ্রমিককের মধ্যে রয়েছে- বাবুর্চি (সহকারী-পুরুষ ও মহিলা), সহকারী নাস্তা কারিগর, সহকারী রুটি কারিগর, সহকারী কাবাব কারিগর, সহকারী গ্রীল কাবাব কারিগর, সহকারী ফালুদা বা লাচ্ছি কারিগর, সহকারী মিষ্টি স্পেশাল কারিগর, সহকারী কারিগর (মিষ্টি), সহকারী দই কারিগর, সহকারী সরমা কাবাব কারিগর, সহকারী চা/কফি/হ্যান্ডি কারিগর, ওয়েটার, মেট (পুরুষ), মেট (মহিলা)।

দক্ষ শ্রমিক

দক্ষ ক্যাটাগরির বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকার শ্রমিকরা ৬ হাজার টাকা, জেলা শহরের শ্রমিকরা ৪ হাজার ৮০০ টাকা ও উপজেলার শ্রমিকরা ৩ হাজার ৬০০ টাকা মূল বেতন পাবেন।

মূল মজুরির সঙ্গে তিন ধরনের ভাতা যোগ করে বিভাগীয় ও সিটি করপোরেশন এলাকার দক্ষ শ্রমিকরা মোট ৭ হাজার ৫০০ টাকা, জেলা শহরের শ্রমিকরা মোট ৭ হাজার ৭৬০ টাকা ও উপজেলার হোটেল শ্রমিকরা মোট ৫ হাজার ৭৪০ টাকা মজুরি পাবেন।

দক্ষ শ্রমিকদের মধ্যে রয়েছে- মিষ্টি স্পেশাল কারিগর, নাস্তা কারিগর, রুটি কারিগর, কাবাব কারিগর, গ্রিল কাবাব কারিগর, ফালুদা বা লাচ্ছি কারিগর, কারিগর (মিষ্টি), কারিগর (রুটি পরোটা), দই কারিগর, চটপটি কারিগর, সরমা কাবাব কারিগর, চা বা কফি বা হ্যান্ডি কারিগর।

উচ্চতর দক্ষ শ্রমিক

প্রধান পাচক (বাবুর্চি), বাবুর্চি (বাংলা), বাবুর্চি (চাইনিজ) উচ্চতর দক্ষ (গ্রেড-১) শ্রমিক হিসেবে বিবেচিত হবেন।

গ্রেড-১ এর উচ্চতর দক্ষ বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকার শ্রমিকদের মূল মজুরি ১২ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া ভাতা, চিকিৎসা ভাতা ও যাতায়াত ভাতাসহ এ শ্রমিকরা মোট মজুরি হিসেবে ১৮ হাজার ৯০০ টাকা পাবেন।

কর্মচারী গ্রেড-১

এছাড়া হোটেলের প্রশাসনিক কাজ করা কর্মীদের তিনটি গ্রেডে ভাগ করে ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে। গ্রেড-১ এ রয়েছেন- সিনিয়র হিসাব সহকারী, সিনিয়র স্টোর কিপার, সিনিয়র টাইপিস্ট বা সিনিয়র কম্পিউটার অপারেটর, সিনিয়র ক্লার্ক ও সিনিয়র ক্যাশিয়ার।

বিভাগীয় শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকার এ কর্মচারীরা ৬ হাজার টাকার মূল মজুরির সঙ্গে ভাতাসহ মোট ৯ হাজার ৯০০ টাকা, জেলা শহরের কর্মচারীরা ৪ হাজার ৮০০ টাকা মূল মজুরির সঙ্গে তিন ধরনের ভাতাসহ ৭ হাজার ৭৬০ টাকা ও উপজেলার কর্মচারীরা ৪ হাজার ৪০০ টাকা মূল মজুরির সঙ্গে ভাতাসহ মোট ৬ হাজার ৮৬০ টাকা মজুরি পাবেন।

কর্মচারী গ্রেড-২

গ্রেড-২ এ রয়েছেন- হিসাব সহকারী, সহকারী স্টোর কিপার, সহকারী টাইপিস্ট বা সহকারী কম্পিউটার অপারেটর, সহকারী ক্লার্ক, সহকারী ক্যাশিয়ার, টেলিফোন অপারেটর ও ড্রাইভার। এই গ্রেডের কর্মচারীরা বিভাগীয় শহর এলাকায় ৪ হাজার ৪০০ টাকা মূল মজুরির সঙ্গে ভাতা যোগ হয়ে ৭ হাজার ৫০০ টাকা, জেলা শহরের কর্মীরা ৪ হাজার টাকা মজুরিসহ মোট ৬ হাজার ৬০০ টাকা, উপজেলার কর্মীরা ৩ হাজার ৬০০ টাকার সঙ্গে ভাতাসহ মোট ৫ হাজার ৭৪০ টাকা মজুরি পাবে।

কর্মচারী গ্রেড-৩

হোটেল ও রেস্তোরাঁর দারোয়ান, চৌকিদার বা পিয়ন, নাইট গার্ড, সুইপার, মালী, গাড়িচালক হেলপার গ্রেড-৩ এর কর্মচারী হিসেবে বিবেচিত হবেন।

বিভাগীয় শহরের এসব কর্মী ৩ হাজার টাকা মূল মজুরি সঙ্গে তিন ধরনের ভাতাসহ ৫ হাজার ৪০০ টাকা, জেলা শহরের কর্মীরা ২ হাজার ৪০০ টাকার সঙ্গে ভাতাসহ ৪ হাজার ২৮০ ও উপজেলার কর্মীরা ২ হাজার ১৫০ টাকার সঙ্গে ভাতাসহ মোট ৩ হাজার ৭১০ টাকা মজুরি পাবেন।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/এনআই/মার্চ ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর