thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

চালু হচ্ছে হেল্প লাইন ১০৯

নারীর প্রতি সহিংসতারোধে জেলাভিত্তিক আইনি সহায়তা

২০১৭ মার্চ ০৭ ২৩:৪৪:১৩
নারীর প্রতি সহিংসতারোধে জেলাভিত্তিক আইনি সহায়তা

যুগে যুগে নারীরা বিভিন্ন ধরনের সহিংসতার শিকার হয়ে আসছেন। যৌতুক, যৌন নির্যাতন, কাজের পরিবেশে নিরাপত্তাহীনতা, চলতে-ফিরতে সমস্যা, পারিবারিক কলহ, নির্যাতনসহ নানা সমস্যা মোকাবেলা করতে হয় নারীদের। ইন্টারনেটের যুগে নতুন এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতা নারীদের জন্য বড় ধরনের উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আধুনিক এ প্রযুক্তির সঙ্গে নারীরা যুক্ত থাকুন বা নাই থাকুন, এর নেতিবাচক প্রভাবের শিকার হচ্ছেন তারা।

নারীদের প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ২০১৪ সালে নারীদের জন্য ন্যাশনাল হেল্প লাইন চালু করা হয়। যে কোনো অপারেটর থেকে ১০৯২১ এই নম্বরে ডায়াল করে নির্যাতন সম্পর্কে অভিযোগ করার জন্য এ হেল্প লাইন চালু করা হয়। এই সেন্টারে দিনরাত ২৪ ঘন্টা ফোন করে প্রয়োজনীয় তথ্য, পরামর্শ ও দেশে বিদ্যমান সেবা-সহায়তা সম্পর্কে জানা যায়। তবে গত তিন বছরে ১০৯২১ নম্বরটি দিয়ে নির্যাতিত নারীরা তেমন কোনো সুবিধা নিতে পারেননি। কারণ এ হেল্প লাইনের কথা খুব কম নারীই জানতেন। এ ছাড়া হেল্প লাইনে কল করার পর অনেক সময় সাড়া না পাওয়ার অভিযোগও করেছেন ভুক্তোভোগীরা। তাই ওই হেল্প লাইনের নম্বর পরিবর্তন এবং সকলের যাতে মনে থাকে, এ জন্য নম্বরটি ছোট করে ১০৯ করা হচ্ছে। খুব শিঘ্রই এ হেল্প লাইনটি চালু করা হবে। ‘হেল্প লাইন ১০৯’ নম্বরটি নারী নির্যাতন বন্ধ ও নারীদের সহযোগিতা দেবে।

এ ছাড়াও প্রতিটি জেলায় নারী নির্যাতন বন্ধ ও নারীদের সহযোগিতার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে লিগ্যাল এইডের সুবিধা রয়েছে। এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু এ সুবিধাগুলো নির্যাতিত নারীরা পাচ্ছেন না। কারণ তারা আসলে এ সেবাগুলো সম্পর্কে জানেনেই না, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের নারীরা। তাই নারীদের সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনগত সকল সুবিধা পাওয়ার জন্য এ সকল সেবা সম্পর্কে তাদের জানানোর ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেছেন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কারণ, নির্যাতিত নারীরা যদি তাদের অধিকার সম্পর্কে না জানেন তাহলে সেবা গ্রহণ করবেন কিভাবে!

জানা যায়, নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে ৭টি বিভাগীয় শহরে অবস্থিত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এবং ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ওয়ান স্টপ-ক্রাইসিস সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। দেশব্যাপী নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের সেবার জন্য জেলা পর্যায়ে ৪০টি এবং উপজেলা পর্যায়ে ২০টি ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিস) স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ক্যাম্পাসে আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন ন্যাশনাল ফরেনসিক ডিএনএ প্রোফাইলিং ল্যাবরেটরি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। নির্যাতিত নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সেবা প্রদান করার লক্ষ্যে ঢাকায় মহিলা বিষয়ক অধিদফতরে ন্যাশনাল ট্রমা কাউন্সেলিং সেন্টার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।

বাংলাদেশের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধানের অন্তত চারটি (১৫,১৯,২৮,২৯) অনুচ্ছেদে নারীদের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ আছে। ১৯ অনুচ্ছেদের ৩নং উপ-অনুচ্ছেদে ‘জাতীয় জীবনের সর্বস্তরে মহিলাদের অংশগ্রহণ ও সুযোগের সমতা রাষ্ট্র নিশ্চিত করিবেন’। সংবিধানের ২৯ অনুচ্ছেদের ২ উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদে বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।’

মাল্টি সেকটোরাল প্রোগ্রাম অন ভায়োলেন্স অ্যাগেইনস্ট উইমেন (multi sectoral programme on violence against women) প্রোজেক্ট ডিরেক্টর ড. আবুল হোসেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘নির্যাতিত নারীদের তাৎক্ষণিক সহযোগিতার জন্য একটি হেল্প লাইন প্রয়োজন। অনেক দেশেই জরুরি ভিত্তিতে সাহায্যের প্রয়োজন হলে হেল্প লাইনের বেশ কয়েকটি নম্বর রয়েছে। বিশেষ করে কেউ বিপদে পড়লে হেল্প লাইনের নম্বরে ফোন করলেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভুক্তোভোগীকে উদ্ধার করতে পারে। তারা ভুক্তোভোগীদের সমস্যা থেকে বের হওয়ার জন্য ফোনেও পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এমন একটি হেল্প লাইন বাংলাদেশের নারী নির্যাতন বন্ধের জন্য প্রয়োজন।’

তিনি আরো বলেছেন, ‘১০৯ এ নম্বরটি নির্যাতিত নারীদের সহযোগিতার জন্য খুব শীঘ্রই হেল্প লাইন হিসেবে চালু করা হচ্ছে। আশা করছি, খুব শীঘ্রই সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষকে ১০৯ হেল্প লাইন সম্পর্কে জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপর সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হলে ১০৯ হেল্প লাইন থেকে নির্যাতিত নারীরা সেবা নিতে পারবেন। তবে এ জন্য ১০৯ হেল্প লাইন সম্পর্কে প্রচারের প্রয়োজন। প্রচার করা না হলে বেশিরভাগ ভুক্তোভোগীরা সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হবেন।’

এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেছেন, ‘যে সকল কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে, সে কারণগুলো খুঁজে বের করতে হবে। তা বের করে প্রতিরোধও করতে হবে। যাতে এমন ঘটনা আর না ঘটে। আর তা না হলে শুধু আইন সংযোজন বা সংশোধন করে লাভ নেই। নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সকলের মনোস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন প্রয়োজন। শুধু আইন পরিবর্তন করে তা সম্ভব নয়।’

তিনি আরও বলেছেন, ‘বর্তমান সরকার প্রতিটি জেলায় নারী-শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ভুক্তোভোগীদের সহযোগিতার জন্য লিগ্যাল এইডের অফিস করেছে। সেখানে সিনিয়র জজ নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভুক্তোভোগীদের সরকারি খরচে আইনি সহযোগিতা দেওয়া হবে। প্রতিটি জেলায় এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বরাদ্দ দেওয়াও আছে। কিন্তু শতকরা ৫০ শতাংশ নাগরিকই এ সম্পর্কে জানেন না। সবাইকে এ সম্পর্কে জানাতে হবে। এ জন্য প্রচারের প্রয়োজন।’

জহিরুল হক আরও বলেছেন, ‘আগেও অনেক নারী-শিশু নির্যাতনের ঘটনা ঘটত। এখন যে এর পরিমাণ বেড়েছে, আসলে ব্যাপারটি তেমন নয়। এখন মিডিয়ার কল্যাণের খুব দ্রুত এ সকল ঘটনা মানুষ জানতে পারছে। তাই জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে মিডিয়াকে সঙ্গে রাখতে হবে। তাদের এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে। শুধু প্রথম সারির দু-একটি গণমাধ্যম রাখলেই হবে না, সকল গণমাধ্যমকে জনসচেতনতামূলক কাজের সময় সঙ্গে রাখতে হবে। তা না হলে নিরপেক্ষ সংবাদ সকলে নাও জানতে পারে।’

আইন ও বিচার বিভাগের সচিব আরও বলেছেন, ‘বাল্যবিবাহ করিয়েছে এমন কারও খবর জানতে পারলে জানাবেন। বিবাহ করালে রেজিস্ট্রি তো হবেই। আপনারা শুধু সেই তথ্যটি জানান, এরপর যদি পদক্ষেপ গ্রহণ না করা হয় তাহলে এসে বলবেন। এ সকল ঘটনায় আমরা সঙ্গে সঙ্গেই পদক্ষেপ গ্রহণ করি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি বেছে বেছেই সচিবদের উপযুক্ত দায়িত্বে বসিয়েছেন।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জেডটি/এনআই/মার্চ ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর