thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

‘হরতাল, জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করি না’

২০১৭ মার্চ ০৮ ২২:২২:০২
‘হরতাল, জ্বালাও-পোড়াওয়ে বিশ্বাস করি না’

ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। রাজনীতির পাশাপাশি তিনি বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগে প্রায় ৩০ বছর ধরে আইনজীবী হিসেবে কর্মরত। শেখ শওকত হোসেন নিলুর নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মহাসচিবও ছিলেন তিনি। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের অংশীদার এনপিপি’র চেয়ারম্যান।

তবে ২০১৪ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাওয়াতে অংশ নেওয়ার কারণে এনপিপির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলুকে ২০ দলীয় জোট থেকে বের করে দেওয়া হয়। পরে ফরহাদ দলটির চেয়ারম্যান হয়ে জোটে থেকে যান। এরপর উভয় গ্রুপের মধ্যে বহিষ্কার ও পাল্টা-বহিষ্কারের ঘটনা ঘটে এবং উভয় পক্ষই নিজেদের বৈধ এনপিপি হিসেবে দাবি করে। বিষয়টি নির্বাচন কমিশন (ইসি) এবং আদালতে পর্যন্ত গড়ায়। এনপিপির কার্যক্রমের ওপর নিষেধাজ্ঞা চেয়ে শেখ শওকত হোসেন নিলু আবেদন করেন। আদালত তা খারিজ করে দেন।

বিরাজমান রাজনীতি ও নিজ দলের চড়াই-উতরাই নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টে নিজ কক্ষে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা বলেছেন ফরিদুজ্জামান ফরহাদ। তার সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন দ্য রিপোর্টের নিজস্ব প্রতিবেদক মাহমুদুল হাসান

দ্য রিপোর্ট : বিরাজমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জোট ভাঙ্গার গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য জানতে চাই।

ড. ফরহাদ : ২০ দলীয় জোট ভাঙ্গার কোনো সম্ভাবনা নেই, আরও সুসংহত হবে। আগামী নির্বাচন যাতে নিরপেক্ষ হয়, সেই জন্য আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া ‘সহায়ক সরকার’ এর ডাক দিয়েছেন। আমরা চাই, বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষ, যার ভোট তিনি দিবেন। অন্য কেউ যাতে বল প্রয়োগ না করেন। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলেছি। সেটা ‘সহায়ক সরকার’ বলেন আর ‘নিরপেক্ষ সরকার’ই বলেন; মানুষের ভোটের অধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য দেশে একটি সহায়ক সরকার দরকার।

দ্য রিপোর্ট : ‘সহায়ক সরকার’ এর দাবিতে ২০ দলীয় জোট কতটা ঐক্যবদ্ধ?

ড. ফরহাদ : জোট ঐক্যবদ্ধ আছে। সহায়ক সরকার নিয়ে জোটের মধ্যে কোনো আপত্তি নেই। কারণ, ম্যাডাম (খালেদা জিয়া) এই সহায়ক সরকার নিয়ে জোটের মধ্যে আলোচনা করেছেন। সবাই সহায়ক সরকার বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছে। মূল দাবি হচ্ছে, কোনো দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নয়।

দ্য রিপোর্ট : বিএনপির সঙ্গে কি জোটের কোনো দূরত্ব তৈরি হয়েছে?

ড. ফরহাদ : না না না…। জোট যাতে শক্তিশালী হয়, জোটে গণতন্ত্র থাকে সেই জন্য প্রতিটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ম্যাডাম জোট নেতাদের ডাকেন। নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা নির্বাচন বিষয়ে এবং আন্দোলনের ডাক দেওয়ার আগে জোটের মতামত নিয়ে তারপর তা ঘোষণা করেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জোটের নেতাদের সঙ্গে সমন্বয় করেন। তিনিও সব সময় অত্যন্ত আন্তরিক।

দ্য রিপোর্ট : আগামী নির্বাচন নিয়ে জোটের ভাবনা কি?

ড. ফরহাদ : দেশের প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা এমন একটি নির্বাচন দেবেন, যাতে দেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। তিনি এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করবেন, সকল দল যাতে ওই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে।

দ্য রিপোর্ট : তাহলে আপনারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাচ্ছেন?

ড. ফরহাদ : ’৯৬ সালে শেখ হাসিনা প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আন্দোলন করেছেন। ’৯১ সালে সরকার গঠন করে বেগম খালেদা জিয়া তখন ক্ষমতায়। উনি (শেখ হাসিনা) যদি খালেদা জিয়ার অধীনে নির্বাচনে না যেতে চান, তাহলে উনার (শেখ হাসিনা) অধীনে কেন নির্বাচনে যাবেন? শেখ হাসিনার অধীনে যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে সেগুলো সুষ্ঠু ও সঠিক হয়নি। এ কারণেই আমরা নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলছি। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের কথা যদি বলি, বাংলাদেশের ইতিহাসে এত হত্যা, খুন ও জখম হয়নি কখনো।

দ্য রিপোর্ট : সংবিধানের আলোকেই দলীয় সরকারে অধীনে আগামী নির্বাচন হবে- ক্ষমতাসীনদের এমন দাবি প্রসঙ্গে আপনি কি বলবেন?

ড. ফরহাদ : এটা কথার কথা। আসল সময়ে তারা এটা থেকে সরে আসবে।

দ্য রিপোর্ট : দাবি আদায়ে জোটের কতটা সামর্থ্য রয়েছে?

ড. ফরহাদ : এ দেশের ৬০ ভাগ মানুষ খালেদা জিয়াকে সমর্থন করে। দাবি আদায়ের জন্য যা যা করার, আমরা তাই করব। শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলন করব।হরতাল, জ্বালাও-পোড়াওয়ে আমরা বিশ্বাস করি না। সম্প্রতি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। যেহেতু আমরা জ্বালাও-পোড়াও বিশ্বাস করি না, তাই জনসচেতনতা সৃষ্টিতে (গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিরুদ্ধে) লিফলেট বিতরণ করেছি।

দ্য রিপোর্ট : দেশে উন্নয়ন হচ্ছে, কেন মানুষ আপনাদের কথা শুনবেন?

ড. ফরহাদ : দুই-একটা ব্রিজ-কালভার্ট দিয়ে উন্নয়ন হয় না। শেখ হাসিনা যদি এতই উন্নয়ন করে থাকেন তাহলে একটি নিরপেক্ষ ভোট দিয়ে দেখুন যে জনগণ কাকে ভোট দেয়। নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে খালেদা জিয়া জিতলে খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হবেন, শেখ হাসিনা জিতলে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হবেন।

দ্য রিপোর্ট : দলীয় (এনপিপি) পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছু বলুন?

ড. ফরহাদ :আমরা ২০ দলীয় জোটে আছি। আমার দলের নিবন্ধনের জন্য ফাইট করছি। নিলু সাহেব বলেছিলেন, তিনি ছাড়া অন্য কেউ এনপিপি করতে পারবেন না। হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছেন। আপিলেট ডিভিশনে গিয়েছিলেন, কোর্ট নিলু সাহেবের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এখন সেই হিসেবে এনপিপির দাবিদার আমিই। আর মার্কা কি হবে এটা নিয়ে নিম্ন আদালতে মামলা চলছে। এই নিবন্ধন এবং এই মার্কায় (আম) নিলু সাহেবের কোনো অবদান নেই। তখন আমি পার্টির মহাসচিব ছিলাম। আমরা এবং অন্যরাসহসম্প্রতি ৪৪ জন নিলুর দল থেকে পদত্যাগ করলাম, আমরা সবাই মিলেইপার্টির জন্য কাজ করেছি। প্রতিটি জেলা, থানায় কমিটি করা হয়। তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আমাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল এটা প্রমাণ হয়েছে।দল কোনো নিজস্ব সম্পত্তি নয়। দল সবাইকে নিয়ে করতে হয়। দলের চেয়ারম্যান, মহাসচিব, প্রেসিডিয়াম সদস্য থাকবে- এটা কমিটির ফরমেট। এখানে খেয়াল খুশি মতো কিছু করা যাবে না।

দ্য রিপোর্ট : জোটের অনেক দলেরই নিজস্ব দলীয় কার্যালয় নেই, ওয়ানম্যান পার্টি-এমন অভিযোগ আছে। আপনি কি বলবেন?

ড. ফরহাদ : আমাদের জোটের কথা বাদ দেন, ১৪ দলের কয়টা দলের নাম মানুষ জানে? আমাদের জোটে অলি আহমেদ, সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, শফিউল আলম প্রধানের মতো নামকরা লোক আছেন, জামায়াতে ইসলামী আছে। নানা কথা বলে আমাদের জোটকে ছোট করার চেষ্টা করা হয়।১০ বছরক্ষমতায় থেকে তারা (১৪ দল) কি করছে? আমাদের অফিসে বসা যায় না, গুম করে ফেলা হয়। প্রশাসন বাদ দিয়ে আসেন, দেখা যাবে অফিস আছে কি নাই। কারা কেমন আন্দোলন করে সেটাও দেখা যাবে।

দ্য রিপোর্ট : দ্য রিপোর্টকে সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

ড. ফরহাদ : আপনাকেও ধন্যবাদ

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/জেডটি/এনআই/মার্চ ০৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর