thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

কুসিক নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ

নৌকা-ধানের শীষের অস্তিত্বের লড়াই, ইসির অগ্নিপরীক্ষা

২০১৭ মার্চ ২৯ ২৩:৩৯:৩৩ ২০১৭ মার্চ ৩০ ০১:৫৫:০০
নৌকা-ধানের শীষের অস্তিত্বের লড়াই, ইসির অগ্নিপরীক্ষা

জাতীয় নির্বাচনের আমেজেই কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক)নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ)। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় (মেয়র পদে) দেশের প্রধান দু্ই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী।

নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকে বড় পরিসরে এটা প্রথম নিবার্চন। তাই দু্ই দলের জন্য অস্তিত্বের এ লড়াই নতুন ইসির জন্য নিরপেক্ষতা প্রমাণের অগ্নিপরীক্ষাও।

নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এ নির্বাচনে জয় পেতে মরিয়া। ফলে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকে দুই দলই প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছে সমান তালে।

আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মতোই কুমিল্লা সিটি নির্বাচনেও বিজয় নিশ্চিত করতে কৌশলী আওয়ামী লীগ। এজন্য সেখানকার নারী প্রার্থীকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছে দলটি। আর দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে কুমিল্লা সিটির ২২ ওয়ার্ডে ২২ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রচার-প্রচারণা ও দলীয় কোন্দল মেটানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনী কৌশল নিধারণ করতে গত বরিবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা অনির্ধারিত বৈঠকে করেন। সেখানে এসব কথা জানানো হয়। বৈঠকে কুমিল্লা সিটির ২২ ওয়ার্ডে ২২ জন কেন্দ্রীয় নেতাকে প্রচার-প্রচারণা ও দলীয় কোন্দল সমাধানের জন্য দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত হয়, তাদের মাঠ থেকে সমন্বয় করবেন চট্টগ্রাম বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। এ ছাড়া কয়েকজন কেন্দ্রীয় তাকে সহযোগিতা করবেন।

ইতোপূর্বে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনেও ওয়ার্ডগুলো কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিল দলটি।

আওয়ামী লীগের পক্ষে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে সম্বয়কারী আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরুল্লাহ জানান, কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে যত রকম সহযোগিতা লাগে তা দেওয়া হবে। আমরা নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছি, জনগণ সিদ্ধান্ত নিবে কাকে ভোট দিবে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে যে কোনো ফলাফল আমারা মেনে নেব।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও কুসিক নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে ভোট অাদায়ে মাঠ চষে বেড়িয়েছেন। তারাও ধানের শীষের বিজয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষের প্রার্থী মো. মনিরুল হক সাক্কুই আবার মেয়র পদে বিজয়ী হবেন, এ বিশ্বাস তাদের।

কুসিক নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে আঞ্জুম সুলতানা সীমা ও বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে মো. মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ হবে। এ নির্বাচনে আঞ্জুম সুলতানা সীমা, মো. মনিরুল হক সাক্কু ছাড়া আরও দুজন মেয়র প্রার্থী রয়েছেন। তারা হলেন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের শিরিন আক্তার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মেজর (অব.) মামুনুর রশীদ।

২৭টি ওয়ার্ডে সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১১৪ জন ও ৯টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রার্থী রয়েছেন।

বুধবার কুমিল্লা টাউন হল থেকে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জামাদি প্রিজাইডিং অফিসারদের বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখতে নির্বাচনী মাঠে টহল দিচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি ও আনসার সদস্যরা।

রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মন্ডল বলেন, নির্বাচনকে নির্বিঘ্ন করতে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে রয়েছেন বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের সদস্যরা। ভোট কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা হলে অ্যাকশনে যাওয়ার নির্দেশনা রয়েছে।

কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হলেও সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শঙ্কা কাটছে না সংশ্লিষ্টদের। এ নির্বাচনে ৪ জন সংসদ সদস্যের পছন্দ ও অপছন্দের প্রার্থী রয়েছেন। পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করতে পরোক্ষভাবে মাঠে রয়েছে তাদের লোকজন। সদর দক্ষিণের ১৯নং থেকে ২৭নং ওয়ার্ডে ৬০ হাজার ৬২৯ জন ভোটার রয়েছেন। মূল শহর থেকে এ এলাকাটি দূরবর্তী হওয়ায় এবং সেখানে কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির হস্তক্ষেপের কারণে ওই এলাকার কেন্দ্রগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। কয়েকটি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছেন। এসব প্রার্থী জয় পেতে সহিংসতায় জড়াতে পারেন বলেও আশঙ্কা রয়েছে।

এ ছাড়া ৬টি ওয়ার্ডে জামায়াতের কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছে। এ নির্বাচনে ৩ হাজার ৮৩৬ জন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মাঠে থাকছেন। এর মধ্যে পুলিশ ২ হাজার ৫৬ জন, আনসার ১ হাজার ২৩৬, র‌্যাব ৩৩৮, বিজিবি ৬০০ জন । ভোট উপলক্ষে সিটি এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

এখানে ২৭টি ওয়ার্ডে মোট ভোটার ২ লাখ ৭ হাজার ৫৬৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ২ হাজার ৪৪৭ ও মহিলা ভোটার ১ লাখ ৫ হাজার ১১৯ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১০৩টি। ভোটকক্ষ ৬২৮। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ১ হাজার ৯৮৭ জন।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জানান, কুমিল্লায় ১৫/১৬ জন প্রিজাইডিং কর্মকর্তার নিরপেক্ষতা নিয়ে আমাদের আপত্তি রয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে অগ্নিপরীক্ষা মনে করছি না। তবে এটি একটি কঠিন পরীক্ষা।

কুসিক নির্বাচনে ভোট সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনের নেওয়া পদক্ষেপের প্রতি আস্থা রাখতে চায় বিএনপি। একটি প্রতিনিধি দল ভোটের আগের দিন বুধবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বে বিএনপির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল বুধবার দুপুরে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে সিইসির সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন।

পরে সাংবাদিকদের নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমাদের মনে হয়েছে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ইসি খুব সিরিয়াস। সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন সিইসি। কমিশন এ পর্যন্ত যেসব কথা বলেছে তার সঠিক বাস্তবায়ন হলে আমরা মনে করি ভোট সুষ্ঠু হবে।’

সিইসির সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘কুমিল্লার একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর নেতৃত্বে, বিশেষ করে সিটি করপোরেশনের দক্ষিণভাগে, ভোট চুরি, কারচুপির নীলনকশা করা হয়েছে বলে জেনেছি। বিষয়টি সিইসিকে অবহিত করে তা প্রতিরোধের জন্য বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো ফেভার চাই না; সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। ইতোমধ্যে সিইসি কুমিল্লায় গিয়ে বলেছেন, এখান থেকেই গণতন্ত্রের নবযাত্রা হবে। সিইসিকে আমরা বলেছি- আপনি যেকথা বলেছেন তা বাস্তবায়ন করবেন।’ সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করবেন না বলে আশ্বস্ত করেছেন সিইসি, জানান নজরুল ইসলাম খান।

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, আমরা আশা করবো নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট প্রদানের পরিবেশ নিশ্চিত করতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবেন।

আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পক্ষ থেকে যথাক্রমে ৩৭ ও ৪৩টি কেন্দ্রকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ চিহ্নিত করে সোমবার নির্বাচন কমিশনে চিঠি দেওয়ার কথা গণমাধ্যমে এলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল বলেছেন কোনো ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র নেই।

আচরণবিধি লঙ্ঘনের কোনো অভিযোগ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাননি বলেও জানান তিনি।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/জেডটি/এনআই/মার্চ ২৯, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর