thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

২০১৭ মার্চ ৩০ ১৪:১৪:৪০
ইসলামে মাতৃভাষার গুরুত্ব

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : মা, মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি—এই তিনটি শব্দ সব মানুষের কাছে পরম আবেগের। মাতৃভাষা মানে মায়ের ভাষা। জন্মের পর মানুষ মায়ের মুখ থেকে শুনে শুনে যে ভাষা শেখে তাই মতৃভাষা। দুনিয়ার সব দেশের নিজ নিজ ভাষা রয়েছে। এ ভাষা তাদের মুখের ভাষা, মায়ের ভাষা, স্বপ্নের ভাষা এবং জীবনযাপনের ভাষা। মায়ের কাছ থেকে এ ভাষা শিখে বিধায় এর নাম হয়েছে মাতৃভাষা।

পৃথিবীতে বহু ভাষা রয়েছে। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাঁর কালাম কোরআনে বলেন : মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলোর মধ্যে (একটি নিদর্শন হলো) আসমান ও জমিন সৃষ্টি এবং মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতা। এর মধ্যে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য উপদেশ রয়েছে। (সুরা রুম : আয়াত : ২২)

এই আয়াতে আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর মানুষের ভাষা ও বর্ণের ভিন্নতাকে তাঁর একটি নিদর্শন বলে আখ্যায়িত করেছেন। ভাষার জ্ঞান ও হৃদয়গ্রাহী বর্ণনায় বক্তব্য উপস্থাপন করার যোগ্যতা ও দক্ষতা ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। সুন্দর ভাষায় বক্তব্য উপস্থাপন ও উত্তম বাচনভঙ্গিতে কথা বলতে অপারগতার কারণেই হজরত মুসা (আ.) দীনের দাওয়াত নিয়ে ফিরাউনের কাছে যাওয়ার সময় সুন্দর ভাষা হৃদয়গ্রাহী কথাবার্তায় পারঙ্গম সহোদর হারুন (আ.)কে নিজের সঙ্গী করার জন্য আল্লাহ তায়ালার কাছে আবেদন জনিয়ে তিনি বলেছিলেন : ‘আমার ভাই হারুন, তিনি আমার থেকে অনেক বেশি প্রাঞ্জল ভাষী। তাই আপনি তাকে আমার সহযোগী করে প্রেরণ করুন; যাতে সে আমাকে (দাওয়াতের ক্ষেত্রে তার প্রঞ্জল ভাষার দ্বারা) সত্যায়িত করে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি (আমার বক্তব্য সত্য হওয়া সত্ত্বেও) তারা আমাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করবে। ’ (সূরা কাসাস; আয়াত : ৩৪)

মানুষের হেদায়াতের জন্য আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে যত নবী রসুল প্রেরণ করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককেই তাঁদের মাতৃভাষায় বা স্বগোত্রীয় ভাষায় প্রেরণ করেছেন। যাতে তাঁরা তাঁদের জাতিকে সুস্পষ্ট ভাষায় আল্লাহ তায়ালার হুকুম বুঝাতে পারেন এবং মানুষও নবী রসূলের ভাষা বুঝে আমল করতে পারে।

এ জন্য আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক নবীর কিতাব তাঁর ভাষায়ই অবতীর্ণ করেছেন। যেমন : হজরত মুসা (আ.)-এর ওপর তাওরাত শরিফ অবতীর্ণ করেছেন হিব্রু ভাষায়, হজরত দাউদ (আ.)-এর ওপর জবুর শরিফ অবতীর্ণ করেছেন ইউনানি ভাষায়, আর হজরত ঈসা (আ.)-এর ওপর ইঞ্জিল শরিফ অবতীর্ণ করেছেন সুরিয়ানি ভাষায়। সমগ্র জাতির হেদায়াতের পথপ্রদর্শক শেষ নবী মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর প্রদর্শিত পথেই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ। তাঁর ওপরই অবতীর্ণ হয়েছে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল-কোরআন। আর এ কোরআনের ভাষাও আরবি। আল্লাহতায়ালা তাঁর কালাম কোরআনেও এ কথা বলেছেন- ‘আমি প্রত্যেক নবীকেই তাঁর নিজ নিজ জাতির ভাষায় প্রেরণ করেছি; যেন তিনি তাদের সুস্পষ্টভাবে বোঝাতে পারেন।’ (আল-কোরআন, সুরা ইব্রাহিম আয়াত : ০৪)

মাতৃভাষা বাংলাকে বাংলা মায়ের কোলেই আজীবন রাখার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আমাদের দেশের কিছু সাহসী সন্তান বুকের তাজা রক্তে রাজপথ রঞ্জিত করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে কোনো জাতি ভাষার জন্য প্রাণ দেয়নি। একমাত্র বাঙালি জাতিই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়ে পৃথিবীতে মাতৃভাষার সম্মান আকাশচুম্বী করেছে। তাই পৃথিবীবাসী ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে গ্রহণ করেছে।

কোরআন-হাদিসের মাধ্যমে মাতৃভাষার গুরুত্ব যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে সেভাবে জব্বার, রফিক, সালাম, শফিক, বরকতের মতো সাহসী মানুষের আত্মত্যাগের মাধ্যমে বাংলা ভাষার এক আলোকোজ্জ্বল সূর্য পৃথিবীর আকাশে উদিত হয়েছে।

আগের যুগে আরবের শহরের ছোট বাচ্চাদের স্বচ্ছ ও শুদ্ধ আরবি ভাষা শেখার জন্য গ্রামে পাঠানো হতো। গ্রামের লোকেরাও শহুরে শিশুদের নিয়ে যাওয়ার জন্য শহরে চলে আসত। যা আমরা রসুল (সা.)-এর জীবনী থেকে জেনে আসছি।

আমরা যেন মাতৃভাষার সম্মান রক্ষার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতে পারি আল্লাহতায়ালা আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দান করুন।

(দ্য রিপোর্ট/একেএ/এনআই/মার্চ ৩০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর