thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

বৈষম্যমুক্ত বিশ্ব গড়ার প্রত্যয়ে শেষ হলো আইপিইউ সম্মেলন

ঢাকা ঘোষণায় অন্যদেশের হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ

২০১৭ এপ্রিল ০৫ ১৮:৫৯:৫৫ ২০১৭ এপ্রিল ০৫ ২০:৫৫:০০
ঢাকা ঘোষণায় অন্যদেশের হস্তক্ষেপ বন্ধের সুপারিশ

কাওসার আজম, দ্য রিপোর্ট : স্বাধীন-সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বানসহ চারটি রেজুলেশন এবং বৈষম্য কমাতে ৫দফা কর্মসূচি সম্বলিত ঢাকা ঘোষণার মাধ্যমে পাঁচদিনব্যাপী ১৩৬তম ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন-আইপিইউ এসেম্বলি শেষ হয়েছে।

রাজধানী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বুধবার বিকেলে ‘ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে পাঁচদিনব্যাপী আইপিইউর সফল সমাপ্তি ঘোষণা করেন আইপিইউ এসেম্বলির সাধারণ অধিবেশনের সভাপতি বাংলাদেশের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সম্মেলনে ঢাকা ঘোষণা গৃহীত হয়। এরমধ্যে রয়েছে নীতিগত ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ, আইনি কাঠামো ও সংসদকে আরও শক্তিশালীকরণ, তরুণদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করাসহ ৫ দফা। রেজুলেশনে কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধ, জঙ্গিবাদ নির্মূলে অর্থায়ন বন্ধ, এমপিদের মানবাধিকার রক্ষা, নারীদের ক্ষমতায়নে অর্থায়ন নিশ্চিত করার জন্য সম্মেলন থেকে রেজুলেশন নেওয়া হয়েছে।

আইপিইউর পরিচালনা পরিষদের সমাপনী সেশনে এসব রেজুলেশন গৃহীত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সাবের হোসেন চৌধুরী। বক্তব্য রাখেন আইপিইউ মহাসচিব মার্টিন চুনগং।

তিনি সফলভাবে সম্মেলন আয়োজনের জন্য বাংলাদেশকে অভিনন্দন জনান। এসময় বিপুল করতালিতে মুখরিত হয়ে ওঠে সম্মেলন কেন্দ্র। এরপর আগামী অক্টোবরে রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গে ১৩৭তম আইপিইউ এসেম্বলির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়।

সম্মেলন শেষে ঢাকা ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে আইপিইউ সম্মেলনের সভাপতি ও বাংলাদেশর স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সফলভাবে এই সম্মেলন শেষ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

তিনি বলেন, তার দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ মাত্র সাত দিনের ব্যবধানে সিপিএ-(কমনওয়েলথ পার্লান্টোরি এসোসিয়েশন) এবং আইপিইউ-এর মতো দুটি মর্যাদাপূর্ণ আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের সভাপতি নির্বাচিত হতে পেরেছি। তারই সার্বিক তত্ত্বাবধানে সফলভাবে এই সম্মেলন শেষ করতে পেরেছি।

তিনি আরও বলেন, এই সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘বৈষম্য নিরসনে সবার জন্য মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিতকরণ’। এ বিষয়ে সম্মেলনে অংশ নেওয়া স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদস্যরা নিজ নিজ দেশের পক্ষে সুনির্দিষ্ট যেসব প্রস্তাব তুলে ধরেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটেছে ঢাকা ঘোষণায়।

এরমধ্যে গুরুত্ব পেয়েছে ৬টি বিষয। অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য কমানোর অঙ্গীকার এবং এ বিষয়েনীতিগত ও আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ, তরুণদের কর্মসংস্থান করা, আইনি কাঠামো শক্তিশালীকরণ,সংসদকে আরো শক্তিশালী ও কার্যকরকরণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সহযোগিতা আরো বৃদ্ধিকরণ।

আইপিইউর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকা ঘোষণাকে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে উত্থাপনের মাধ্যমে এ ঘোষণাকে কার্যকর করার জন্য আহবান জানিয়েছেন। নতুবা এই ঘোষণা একটি কাগুজে ঘোষণা বা দলিলে পরিণত হবে।

তিনি আরও বলেন, এর আগে হ্যানয়ে ঘোষণা ভিয়েতনামের সংসদে গ্রহণের মাধ্যমে তাকে আইনগত ভিত্তি দিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বরেন, চলতি সম্মেলনে উত্থাপিত সবগুলোএজেন্ডার বিষয় আলোচনার মাধ্যমে মীমাংসা করা হয়েছে। কোন এজেন্ডা পেইন্ডিং নেই।

সম্মেলনে গৃহীত রেজুলেশনে বিদেশি শক্তির হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানানো হয়। স্বনির্ভরতা অর্জনের জন্য বিশ্বব্যাপী জনগণের মধ্যকার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বৈষম্য দূর করে সকলের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সদস্য দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানানো হয়। অর্থনৈতিক অসমতা লিঙ্গ বৈষম্যসহ নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি করে বিধায় অসমতার মৌলিক কারণগুলো দূর করতে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে তাগিদ দেওয়া হয়। পাশাপাশি সংসদ সদস্যদের মানবাধিকার সুরক্ষায় বিশ্বব্যাপী সংসদ সদস্যদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার এবং বিভিন্ন দেশসমূহের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে জনগণের মানবিক মর্যাদার নিশ্চয়তা প্রদানের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়।

সম্মেলনে বলা হয় আর্থিকখাতে পুরুষের থেকে নারীরা এখনও পিছিয়ে রয়েছে। তাই নারীদের উন্নয়নের মূল স্রোতধারায় অন্তর্ভূক্ত করতে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে নারীদের অংশীদারিত্ব বৃদ্ধি করতে হবে।

অনগ্রসর শ্রেণী আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে। তাই সমাজের সকল শ্রেণীর মতামতের প্রতিফলন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সঠিকভাবে উঠে আসছে না। এজন্য সকল মানুষের সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন একটি সামষ্টিক কাঠামোগত পুনর্বিন্যাস কর্মসূচি গ্রহণ করা।

এবারের সম্মেলনে মোট ১৩২টি দেশের ৪৫ জন স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার ও সংসদ সদস্যসহ মোট ১৩৪৮ জন প্রতিনিধি অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১লা এপ্রিল দেশের ইতিহাসের বৃহত্তম এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/এপ্রিল ০৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর