thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১২ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

দারিদ্র্যকে জয় করলেন আসিক ইসলাম

২০১৭ মে ০৬ ১৭:১৯:১২
দারিদ্র্যকে জয় করলেন আসিক ইসলাম

দিনাজপুর প্রতিনিধি : দারিদ্র্যের কাছে মাথা নত নয় ববং দারিদ্র্যকে জয় করেই এগিয়ে যেতে হবে। সমাজে সবাইতো বিত্তবান হয় না। তাই বলে বসে থাকলে চলবে না। দারিদ্র্যকে জয় করে শিক্ষার পাশাপাশি সততার সঙ্গে কাজ করতে হবে। এতে লজ্জার কিছু নেই। ফুটপাতে তরমুজ বিক্রয়কালে এমনটি জানালেন এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়া দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মেধাবী মুখ মো. আসিক ইসলাম।

অভারের কারণে লেখাপড়ার পাশাপাশি পৌর শহরের তাজমহল সিনেমা হলের সামনে ফুটপাতে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দেওয়া ছিল তার নিত্যদিনের কাজ। তবে সেই সিনেমা হলটি বন্ধ থাকলেও বন্ধ থাকেনি আসিক ইসলাম দারিদ্র্য জয়ের স্বপ্ন দেখা। অদম্য ইচ্ছা শক্তিই প্রেরণা যুগিয়েছে তার দারিদ্র্য জয়ের।

বীরগঞ্জ পৌরশহরের খালপাড়া এলাকার মো. হাসেম আলীর ছেলে মো. আসিক ইসলাম। বাবা একজন মৌসুমী ফল ব্যবসায়ী। মা মোছা. আফিনা বেগম গৃহিণী। পৌর শহরের তাজমহল সিনেমা হল মোড়ে শীতকালে ফুটপাতে ডিম বিক্রয় করে এবং অন্যান্য সময় মৌসুমী ফল বিক্রয় করে তাদের সংসার চলে। সম্পদ বলতে বসত ভিটার ৩ শতক জমি। পরিবারের ৩ ভাই ও ১ বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় সে।

বীরগঞ্জ কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয় হতে বিজ্ঞান বিভাগে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ প্লাসসহ জিপিএ ফাইভ নিয়ে পাশ করে আসিক ইসলাম। প্রাইমারী স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৪ দশমিক ২৫ পয়েন্ট এবং জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষায় ৪ দশমিক ২৮ পেয়ে পাশ করেছে।

আসিক ইসলাম বলেন, ‘আমি অর্থনৈতিক অভাবের কারণে প্রাইভেট পড়তে পারিনি। তবে শিক্ষকদের সহযোগিতার অভাব ছিল না আমার। মায়ের পাশাপাশি বাবার উৎসাহে আমার এই সফলতা। লেখাপড়া ফাঁকে অবসর সময়ে বাবার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে সময় দেওয়া ছিলো আমার নিত্যদিনের কাজ। স্কুল বন্ধ থাকলে দিনভর ফুটপাতে বাবার দোকানে বসতাম। এতে লজ্জার কিছু নেই। পরিশ্রম করে দারিদ্র্যর সাথে লড়াই করাটা লজ্জা কিসের! ভিক্ষা অথবা কোন অপরাধ তো করছি না। ভবিষতে আমি বিসিএস কাডারের একজন বড় প্রশাসনিক কর্মকর্তা হতে চাই।’

আসিকের বাবা মো. হাসেম আলী বলেন, ‘ইচ্ছে তো অনেক। তবে ফুটপাতে বসে অর্জিত অর্থে ছেলেকে কতদূর পড়াতে পারবো জানি না। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে আমাদের মতো গরিবের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। এখন নতুন করে একটি চিন্তা যোগ হয়েছে ছেলেকে নিয়ে। কোথায় ভর্তি করাবো। তার ভর্তি এবং পড়াশুনার টাকা আসবে কোথা থেকে। পড়াশুনার পাশাপাশি দোকানে বসতো সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। তাই এখনো জানি না তার পড়াশুনা চলবে নাকি বন্ধ করে দিতে হবে। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে সমাজের সকলের সহযোগিতা এবং দোয়া কামনা করছি।’

কবি নজরুল উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলাম দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন, মো. আসিক ইসলাম খুব মেধাবী ছাত্র। সে কিছুটা লাজুক স্বভাবের। নিয়মিত ক্লাস করতো। তার বাবা ফুটপাতে ব্যবসা করেন। এ কারণে অর্থাভাব থাকলেও লেখাপড়ার ক্ষেত্রে পরিবারের চেষ্টার কমতি ছিলো না। আমরাও তাকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি। আশা করছি আগামী দিনে সে দেশ ও আমাদের সমাজের মুখ উজ্জ্বল করবে। তার দারিদ্র্য জয়ের চেষ্টা সমাজের কাছে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

(দ্য রিপোর্ট/কেএনইউ/এপি/মে ০৬, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর