thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান

২০১৭ মে ২০ ১০:১৩:৫২
আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান

পাভেল রহমান, দ্য রিপোর্ট : আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণে গাইবে বাংলাদেশের জনপ্রিয় গানের দল জলের গান। আসামের শিলচরে আজ শনিবার (২০ মে) অনুষ্ঠানটি হবে। এ বছর বাংলাদেশ থেকে একটি সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিদল আসামের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে অংশ নিচ্ছে। এই দলটিতে রয়েছে বাংলাদেশের ভিন্ন ধারার গানের দল জলের গান। এছাড়া উদীচীর শিল্পীরা আসামের অনুষ্ঠানে অংশ নেবে। গত ১৮ মে(বৃহস্পতিবার) রাতে ভারতে রওয়ানা হয় জলের গানের সদস্যরা।

১৯৬১ সালে আসামের শিলচরের মানুষ মাতৃভাষা বাংলার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির জন্য সংগ্রাম শুরু করে। ১৯ মে বরাক উপত্যকায় ১১ জন তরুণ বুকের রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করেছিল। ১৯৫২ সালে পূর্ব বাংলার ভাষা আন্দোলনের মাত্র ৯ বছর পর আসামের বাঙালি জনগোষ্ঠী অসমীয়া ভাষার পাশাপাশি বাংলার সরকারি স্বীকৃতি দাবি করে ভাষা আন্দোলন শুরু করে। দীর্ঘ সংগ্রাম আর রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর ১৯৭২ সালে বাংলা ভাষা আসামের অন্যতম সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায়। মাতৃভাষা রক্ষার জন্য এই ত্যাগকে স্মরণ করে আসামের শিলচরের ‘ভাষা শহীদ স্টেশন শহীদ স্মরণ সমিতি’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশের জলের গান ও উদীচী।

জলের গানের সদস্য রাহুল আনন্দ বলেন, ‘বাঙালির অস্তিত্ব বিশ্বের কাছে দাপটের সঙ্গে উপস্থাপিত হয়েছে ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। ‘১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামের একটি দেশের জন্ম হয়েছে। ভাষার দাবীর উপর ভিত্তি করে একটা রাষ্ট্রের জন্ম পৃথিবীর ইতিহাসের বিরল ঘটনা। আমাদের ভাষা আন্দোলনের ৯ বছর পর আসামের মানুষ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। তাদের শ্রদ্ধা জানাতে আমরা সেখানে গান করবো।’

জানা গেছে, আসামের মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শনিবার (২০ মে) মঞ্চ মাতাবে জলের গান। পর দিন ২১ মে দলটি দেশে ফিরবে। আসামের ভাষাপ্রেমিদের গান শোনাতে নিজেদের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে জলের গানের সদস্য জার্নাল বলেন, ‘জলের গানের সদস্যরা সেখানে নিজেদের জনপ্রিয় গানগুলো পরিবেশন করবে। একই সঙ্গে দেশের গান, ভাষার গান গাওয়ার চেষ্টা করবো।’

জার্নাল আরো বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনে পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠী একটা ভয়ংকর অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে পড়েছে। প্রতিদিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে অনেক জাতীগোষ্ঠির মাতৃভাষা। সেখানে মাতৃভাষার জন্য জীবন দেয়ার ইতিহাস নতুন করে মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে প্রেরণা যোগাবে। বাঙালীরা মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। আসামের মানুষও মাতৃভাষার জন্য জীবন দিয়েছে। দুই অঞ্চলের মানুষের এই আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধা জানাতেই গাইবে জলের গান।’

আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণ করে গতকাল ১৯ মে বাংলাদেশে আয়োজিত হয়েছে অনুষ্ঠান। ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বাংলাদেশের সংস্কৃতিকর্মীরা আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণ করে আয়োজন করে অনুষ্ঠান। সেখানে আসামের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। এছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় এ বছরও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে তিতাস সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ।

বাংলাদেশে নব্বইয়ের দশকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমি আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান আয়োজন শুরু করে। এ তথ্য জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমির সভাপতি জয়দুল হোসেন বলেন, ‘১৯৯৮ সালের দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রথম আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। আগরতলার কবি ও মন্ত্রী অনীল সরকারের কাছ থেকে প্রথম আসামের ভাষা শহীদদের কথা জানতে পারি। পরবর্তীতে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় টানা কয়েক বছর ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে অনুষ্ঠান করি। সাহিত্য একাডেমির আয়োজনে এই অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিতাস সাহিত্য-সংস্কৃতি পরিষদ বিগত কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে আসামের ভাষা শহীদদের স্মরণে অনুষ্ঠান আয়োজন করছে।’

বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক হাসান আরিফ বলেন, ‘ভাষার জন্য জীবন দিয়ে আমরা বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম দিয়েছি। তাই ভাষার অধিকার রক্ষার আন্দোলনে পৃথিবীর অগ্রগামী জাতি বাঙালী। আমরা চাই পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠি তাদের নিজস্ব ভাষা-সংস্কৃতি নিয়ে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকুক। ভিন্ন ভিন্ন সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য তো মানব সভ্যতার সৌন্দর্য। আমরা আসামের ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই। দুই অঞ্চলের ভাষা শহীদেরা আমাদের শিখিয়ে দিয়ে গেছেন কিভাবে নিজস্ব সংস্কৃতিকে ধারণ করে মাথা উঁচু করে বাঁচতে হয়।’

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/এআরই/এনআই/মে ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর