thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে ৪ ভাঙন

মৌলভীবাজারে শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

২০১৭ জুন ০৫ ১৮:৩১:৩২
মৌলভীবাজারে শতাধিক গ্রামের মানুষ পানিবন্দি

সেলিম আহমেদ, মৌলভীবাজার : মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া গ্রামের প্রায় ১০০ ফুট এলাকা জুড়ে রবিবার (০৪ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে একটি ভাঙন দেখা দেয়। এছাড়া রাজনগর উপজেলা অংশে কামারচাক ইউনিয়নের চাটিমেলাগড় ও টেংরা ইউনিয়নের উজিরপুর ও একামধু এলাকায় ভাঙনের সৃষ্টি হয়। গত দু’দিনে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধের ৯টি স্থানে ভাঙনের ফলে শতাধিক গ্রামের হাজার হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি। সর্বশেষ ২০০৭ সালে মনু নদের প্রতিরক্ষা বাঁধে ভাঙন সৃষ্টি হয়েছিল। আর ১০ বছর পর মনু নদের রুদ্রমূর্তি দেখলো নদী তীরবর্তী দুই পারের মানুষ।

সরেজমিন কুলাউড়া উপজেলার টিলাগাঁও ইউনিয়নের মিয়ারপাড়া ভাঙন এলাকায় গেলে মিয়ারপাড়া গ্রামের লোকজন কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, রাতে হঠাৎ করে বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গ্রামের বেশিরভাগ মানুষের ধানসহ মালামাল পানির স্রোতে ভেসে যায়। ভাঙন এলাকার সম্মুখের বাড়ির অনু মিয়ার স্ত্রী জানান, তার স্বামী টিলাগাঁও বাজারে ছিলেন। হঠাৎ পানির তীব্র স্রোতে ধানসহ অনেক মালামাল পানিতে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। একার পক্ষে মাল সামলানো সম্ভব হয়নি। মিয়ারপাড়া গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ সেহরি না খেয়ে রোজা রেখেছেন। না খেয়ে রোজা রাখা মানুষেরা ইফতার নিয়েও ছিলেন বিচলিত।

টিলাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আব্দুল মালিক জানান, মিয়ারপাড়া এলাকার ভাঙন দিয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকে প্লাবিত হয় মিয়ারপাড়া, শাহজাদাপুর, সন্দ্রাবাজ, খন্দকারগ্রাম, ডরিতাজপুর, গন্ডারগড়, লহরাজপুর, বাগৃহালসহ ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তাছাড়া এক হাজার একর জমির আউশ ধান ও আমনের চারা ফসল নষ্ট হয়েছে। কমপক্ষে ৭০টি ফিশারির মাছ ভেসে গেছে পানির স্রোতে। স্থানীয়ভাবে ইউনিয়নের পক্ষ থেকে কিছু শুকনা খাবার যেমন চিড়া গুড় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে।

এদিকে মিয়ারপাড়া এলাকার সৃষ্ট ভাঙনের ফলে কুলাউড়া- ব্রাহ্মণবাজার-শমসেরনগর সড়কের হিঙ্গাজিয়া এলাকায় আধা কিলোমিটারের বেশি রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।

এদিকে আগের দিন শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর এলাকায় সৃষ্ট ভাঙনকবলিত এলাকার হাজীপুর ও শরীফপুর ইউনিয়নের নিশ্চিন্তপুর, পাইকপাড়া, মাদানগর, ভূঁইগাঁও, আলীপুর, দত্তগ্রাম, সোনাপুর, ইসমাইলপুর, রনচাপসহ কমপক্ষে ২০টি গ্রামের মানুষ মারাত্মক দুর্ভোগের শিকার। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আবুল কালাম, আব্দুল লতিফ, আব্দুল হান্নান জানান, রবিবার রাতে এলাকার বেশিরভাগ মানুষ নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। কেননা রাতে বৃষ্টি না হলেও মনু নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তাছাড়া ভাঙন আরও বড় হওয়ায় বেশি পরিমাণ পানি লোকালয়ে প্রবেশ করছিল। তাতে মানুষ ছিলেন উদ্বেগ উৎকণ্ঠায়।

শরীফপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. জোনাব আলী জানান, হুমকির মুখে চাতলাঘাট এলাকার মনু সেতু পরিদর্শন করেন কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী।

রাজনগর উপজেলার টেংরা ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. রিপন মিয়া জানান, রবিবার রাতে উজিরপুর ও একামধু এলাকায় দুটি বিশাল ভাঙন দেখা দেয়। এতে উজিরপুর, একামধু, হরিপাশা, কাশিপুর আংশিক, কান্দিরকুল, আদিনাবাদ, কোনাগাঁও গ্রাম বন্যাকবলিত হয়। এতে কয়েকশ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার চৌধুরী মো. গোলাম রাব্বি জানান, কুলাউড়া উপজেলায় দুর্গত মানুষের জন্য মাত্র ৬ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ পেয়েছি। মঙ্গলবার এই ত্রাণ বিতরণ করা হবে। তাছাড়া সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যানগণকে তাদের অবস্থান থেকে যেন দুর্গত মানুষকে সহায়তার জন্য বলা হয়েছে।

কুলাউড়া উপজেলা চেয়ারম্যান আসম কামরুল ইসলাম জানান, আমি সরেজমিন নিশ্চিন্তপুর ও মিয়ারপাড়া ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছি। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষের জন্য অল্প পরিমাণ ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মো. তোফায়েল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিকভাবে আমার হাতে যা ছিল, অর্থাৎ ৪০ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকা সবটাই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য বরাদ্দ দিয়েছি। এই বরাদ্দ পাবে মনু ও ধলাই নদীর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ।

(দ্য রিপোর্ট/এপি/এনআই/জুন ০৫, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর