thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

সংসদে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

২০১৭ জুন ২০ ১৬:৩১:২৬
সংসদে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের কঠোর সমালোচনা করে তার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির এমপি জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। ব্যাংকিংখাতে লুটপাত হওয়ার পরও মূলধন সংকটের কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রাখায় এই দাবি জানান তিনি। অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে তিনি বলেন, আপনি সসম্মানে চলে যান। বিদায় নেন। আপনার অনেক বয়স হয়েছে। আর কত। আপনি বিদায় নিয়ে ১৬ কোটি মানুষকে মুক্তি দেন। আমি আপনার পদত্যাগ চাই।

মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ‍উপর আলোচনায় অংশ নিয়ে একথা বলেন জাতীয় পার্টির প্রেডিসডিয়াম সদস্য ও সাবেক মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। এসময় সংসদের সভাপতিত্বে ছিলেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় সংসদে উপস্থিত থাকলেও অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত উপস্থিত ছিলেন না।

জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু বলেন- এটা উন্নয়নের বাজেট নয়, সীমাহীন করের বাজেট। এই করের বাজেট থেকে আমরা মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, মু্ক্তি চাই।ভূমি ধসের মতো বাজেট ধস হয়েছে।

তিনি বলেন, আমি সরকারি দলের এমপিদের কাছে প্রশ্ন করব আমরা কি উন্নয়নের মহাসড়কে আছি না লুটপাটের মহাসড়কে আছি? আপনারা বিবেকের কাছে জিজ্ঞেস করেন। আপনি কি উন্নয়নের মহাসড়কে আছেন নাকি দুর্যোগের মহাসড়কে আছেন? সেটা বিবেচনার বিষয়।

অর্থমন্ত্রী নাইটঙ্গেলের কল্পনার সু্ন্দর জগতে আছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, কিন্তু বাস্তবজগত অনেক কঠিন। তার বাজেট বক্তৃতা শুনে মনে হয়েছে বিধ্বস্ত মন্ত্রীর বর্ণাঢ্য রূপকল্প।

ঘাটতি বাজেট সম্পর্কে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী বলেছেন ঘাটতি ১ লাখ ১২ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। এই ঘাটতি বৈদেশিক খাত থেকে আসবে ৫১ হাজার ৯২৪ কোটি টাকা। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ উৎস মানে ট্যাক্স থেকে আসবে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। আর দৈন্যদশা ব্যাংক থেকে নিবেন ২৮ হাজার ২০৩ কোটি টাকা এবং গরীব মানুষের সঞ্চয়পত্রসহ অন্যান্য ব্যাংক বহির্ভূত থেকে নিবেন ৩২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা। এটি কি সম্ভব? এখন ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে গেছে, অক্সিজেন নিয়ে রাখা হয়েছে। গত বাজেটে যে ঘাটতি ছিল তা বৈদেশিক উৎস থেকে মাত্র ২৮ হাজার কোটি টাকা পেয়েছেন। এই বাজেটেও তিনি বৈদেশিক উৎস থেকে টাকা আনতে পারবেন না বলে আমি হলফ করে বলতে পারি।

তিনি বলেন, অর্থ প্রতিমন্ত্রী প্রস্তাবিত বাজেটে কিছু পরিবর্তনের কথা বললেও অর্থমন্ত্রী বলেছেন এই বাজেট পরিবর্তন করার এখতিয়ার শুধু আমার। আর কারো না। সরকারের মধ্যে যদি এই মতভেদ থাকে তাহলে তো কোনো কিছু বাস্তবায়ন হবে না। তিনি বলেন, জিডিপি একমাত্র উন্নয়নের মাপকাঠি না। মিথ্যার বেসাতি নিয়ে আপনারা মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।

ব্যাংকিং খাতের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ১ লাখ ১৬ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে আসছে। তার মধ্যে আপনারা ৪২ হাজার কোটি টাকা অবলোপন করেছেন। ব্যাংকে তো সরকার টাকা দেয় না। ব্যাংকে আমানতকারীদের টাকা। তাদের গচ্ছিত টাকা। সেই টাকা লুটপাট হচ্ছে, বিদেশে পাচার হচ্ছে। সেই ব্যাপারে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী কোনো কিছু উল্লেখ করেননি। কীভাবে প্রতিরোধ করা যায়, কীভাবে পাচার করা টাকা আনা যায়, খেলাপিঋণ উদ্ধার করা যায় সেটা নিয়ে কোনো বক্তব্য এই বাজেট বক্তৃতায় নাই। খেলাপিঋণ যদি আমরা উদ্ধার করতে পারতাম তাহলে ভ্যাটের আওতা বাড়ানোর দরকার ছিল না। আবগারি শুল্ক বাড়ানোর দরকার ছিল না। আজকে মানুষের মধ্যে একটা আতংক সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, এই ব্যাংকিং সেক্টরে যে লুটপাট হচ্ছে তারা কারা ? এরা কি আপনাদের চেয়ে শক্তিশালী? সরকারের চেয়ে শক্তিশালী? তাদেরকে কেন আপনারা আইনের আওতায় আনছেন না ?

তিনি বলেন, বেসিক ব্যাংকের যে চেয়ারম্যান ছিল সে এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন নাকি কিছুই পায়নি। কিন্তু সারাদেশের মানুষ জানে যে লুটপাট করেছে। আমরা চাই সব টাকা উদ্ধার করে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক। ব্যাংকিং খাতের লুটপাট হচ্ছে। লুটের টাকাকে ভরণপোষণ করার জন্য এই বাজেটে বলেছেন ২ হাজার কোটি টাকা আপনারা ট্যাক্স পেয়ারের মানি দিবেন। মানুষের টাকা দিয়ে আপনারা লুটের টাকা পূরণ করবেন। এটা কি কোনো নৈতিকতার মধ্যে পড়ে? এটা ইমমোরাল এপ্রোচ। এই ২ হাজার কোটি টাকা শিক্ষা কিংবা স্বাস্থ্যখাতে দিক। কিন্তু লুটের টাকা পূরণ করার জন্য কেন দিবেন? শুধুএবারই নয় এর আগে ৩ বছরে তিনি৫ হাজার কোটি টাকা দিয়েছেন।এটি তো তার দেওয়ার কথা নয়, সরকারের দেওয়ার কথা নয়, ট্যাক্স পেয়ারের দেওয়ার কথা নয়।

অর্থমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে তিনি আরও বলেন, উনাকে তো আইনের আওতায় আনতে হবে। উনাকে তো আইনের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। এই কারণে উনার বিরুদ্ধে ক্রিমিনাল চার্জ আনা উচিত। উনি এটা কীভাবে প্রস্তাব করে? এটি নৈতিকতা ও আইনবিরোধী।

তিনি বলেন, এলসির মাধ্যমে টাকা পাচার হলেও তা আমরা বন্ধ করতে পারছি না।

ক্যাপিটাল মার্কেট সম্পর্কে তিনি বলেন, ২০১০ সালে শেয়ার মার্কেটকে ধ্বংস করা হয়েছে। বাংলাদেশের স্টক মার্কেট ক্রাস হয়েছে। কিন্তু কারা হাজার হাজার লোককে রাস্তায় বসিয়ে দিয়েছে তা খতিয়ে দেখতে কমিটি প্রতিবেদন দিলেও সেটা কি এমপি হিসেবে আমাদের জানার অধিকার নাই। অবশ্যই আমাদের অধিকার আছে। এটি অবিলম্বে প্রকাশ করুন। প্রকাশ করে দেশবাসীকে জানান কারা লুটপাট করেছে। এই শেয়ার মার্কেট এখন প্রায় মৃত। বিচিত্র এই অর্থমন্ত্রী, বিচিত্র তার বাজেট। ইব্রাহিম খালেদ কমিটি যে প্রতিবেদন দিয়েছেন তা প্রকাশ করার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।

তিনি বলেন, আপনারা মানুষকে কেন বিভ্রান্ত করছেন, কেন প্রতারণা করছেন? আমরা জনগণকে প্রতারণার করতে এখানে আসিনি। জনগণের ভাগ্য পরির্তন করতে এখানে আসছি।

দেশের বিনিয়োগ ও বেকার সমস্যা নিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন- ভ্যাটের আওতা বৃদ্ধির ফলে ১৬ কোটি মানুষকে ভ্যাট দিতে হবে। মোটা চালের দাম বেড়ে যাওয়ার ফলে মানুষের জীবন ওষ্ঠাগত। বাজেট পেশ করার পর মোটা চালের দাম বেড়ে গেছে। আমরা উন্নয়ন দেখছি কিন্তু সুশাসন নেই। সুশাসন না থাকলে মানুষ উন্নয়নের সফল ভোগ করতে পারবে না।

তিনি বলেন, জিডিপি গ্রোথ কি উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি? অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বিতর্কে না গিয়ে আমি বলতে পারি জিডিপিগ্রোথ কি একমাত্র পেরামিটার অব ইকোনমি? অবশ্যই উন্নয়নের একমাত্র মাপকাঠি নয়। উন্নয়নের অনেকগুলো মাপকাঠির মধ্যে এটি একটি। এটি নিয়ে গর্ব করা যায় না। মিথ্যার বেসাতি নিয়ে আপনার মানুষকে বিভ্রান্ত করছেন।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/জুন ২০, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর