thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

ঢাকায় প্রতি ১১ জনের একজন চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত!

২০১৭ জুলাই ০৭ ২০:৫২:৫২
ঢাকায় প্রতি ১১ জনের একজন চিকনগুনিয়ায় আক্রান্ত!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতি ১১জনের একজন চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রোগতত্ত্ব ও রোগ নিয়ন্ত্রণ এবং গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাম্প্রতিক একটি জরিপে থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

প্রায় একদশক ধরে বাংলাদেশে চিকুনগুনিয়া রোগের দেখা মিলছে। তবে এবারের মতো আগে কখনোই এতটা প্রকোপ আগে দেখা যায়নি।

এই রোগে প্রচণ্ড জ্বর থেকে ওঠার পরেও শরীরে ব্যথা থেকে যায় দীর্ঘদিন।

চিকুনগুনিয়া ভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষজন, বিশেষ করে যাদের প্রতিদিনকার আয়ের উপর নির্ভর করতে হয়।

ঢাকার গ্রিন রোডের একজন মুদি দোকানদার মো. মকবুল বলছেন, ‘আমি চিকুনগুনিয়া রোগে ১৫দিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম। দোকান চালাতে পারি নাই, আয় রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে। ঋণ করে এতদিন চলেছি, প্রায় ১৫ হাজার টাকা দেনা হয়ে গেছে।’

একটি দোকানের বিক্রয় কর্মী ফাইজুল বলছেন, ‘একবার জ্বর হয়ে যাওয়ার পর এখন আবার শরীর খারাপ হয়েছে। অনেকদিন কাজে কামাই করেছি, গত দুইদিন ধরেও কাজে যেতে পারছি না। একদিন যেতে না পারলে বেতন কেটে রাখে।’

এই রোগের শিকার হওয়ার পর অনেকদিন নিজের কাজে যেতে পারেননি ঢাকার গ্রিন রোডের মাজেদা বেগম। একই সময়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন তার স্বামীও।

মাজেদা বেগম বলছেন, ‘আমি বাসায় কাজ করি। জ্বর হওয়ার পর ১০-১২ দিন কাজে যেতে পারি নাই। একটু ভালো হয়ে তিন-চারদিন গেছি। এরপর আবার যেতে পারিনাই। এজন্য আমার দুইটা কাজ চলে গেছে।’

তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে সমাজের সব শ্রেণি পেশার মানুষ।

একদিন সকালে হঠাৎ করেই এনজিওকর্মী রুথ লিপিকা হিরা বুঝতে পারেন, তিনি চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত। পনেরো দিন অসুস্থ থাকার পর, এখনো তিনি পুরোপুরি সুস্থ হতে পারেননি।

তিনি বলছেন, ‘একদিন সকালে উঠে বুঝতে পারি, আমার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে, শরীরে ব্যথা। এরপর ১৫দিন বিছানায় পড়ে থাকতে হয়েছে। পরে মুখে রাশ উঠেছে। এখনো শরীরে অনেক ব্যথা, হাঁটুতে ব্যথা হয়।’

রুথ লিপিকা হিরা বলছেন, ‘যেদিন অসুস্থ হলাম, সেদিন অফিসে জরুরি মিটিং ছিল। কিন্তু ছুটি নিতে হয়েছে। আর এখন কাজে ফিরে এতদিনের সব কাজ একসাথে করতে হচ্ছে।’

তবে শুধু যারা আক্রান্ত হয়েছেন তারাই নয়, পরিবারের সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ায় ঝড় যাচ্ছে পরিবার প্রধানদের উপর দিয়েও। এরকম একজন মো. আলম, যার স্ত্রী ও দুই মেয়েই এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

মো. আলম বলছেন, ‘বাড়ির লোকজন সবাই অসুস্থ। আমি তাদের দেখব নাকি কাজে যাব, তাই বুঝছি না।’

ঢাকার গ্রিন লাইফ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নাজিয়া হক জানিয়েছেন, গত কয়েক মাসে অন্য জ্বরের রোগীর তুলনায় চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীই তাদের কাছে বেশি আসছে।

ডা. নাজিয়া হক বলছেন, ‘জ্বর আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে গত কিছুদিন ধরে আমাদের এখানে চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীই বেশি আসছেন। এদের মধ্যে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা উচ্চবিত্ত সবাই রয়েছেন।’

ডেঙ্গু রোগের বাহক এডিস মশাই চিকুনগুনিয়া রোগেরও কারণ। এখনো এই রোগের পুরোপুরি প্রতিকার আবিষ্কৃত হয়নি।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক মিরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বলেছেন, ‘২০০৮ সাল থেকে এই রোগটি বাংলাদেশে শনাক্ত হলেও এবছরই সবচেয়ে বেশি প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। মোবাইল নাম্বারের ভিত্তিতে র‌্যান্ডমলি আমরা ৪ হাজার মানুষের মধ্যে একটি জরিপ করেছি। এখনো সেই জরিপের ফলাফল চূড়ান্ত হয়নি, পর্যালোচনা চলছে, তবে একটি ধারণা দিতে পারি। এই চার হাজার লোকের মধ্যে ৩৫৭জন চিকুনগুনিয়া জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। এ থেকে হয়তো ধারণা করতে পারেন যে, কত শতাংশ মানুষ রোগটিতে আক্রান্ত হয়েছে।’

তাদের ধারণা, বৃষ্টি যতদিন থাকবে, অর্থাৎ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই রোগের প্রকোপ থাকতে পারে।

চিকিৎসকরা বলছেন, ততদিন মশা থেকে সতর্কতাই, যেমন মশারি বা ওষুধ ব্যবহার করাই হবে এ থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায়। বৃষ্টির পর যাতে পানি জমে থাকতে না পারে, যেখানে মশা ডিম পাড়তে পারে, সেদিকেও নজর দিতে তারা পরামর্শ দিয়েছেন।

বিবিসি বাংলার সৌজন্যে

(দ্য রিপোর্ট/জেডটি/এনআই/জুলাই ০৭, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর