thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

দু’দিন পর উত্তরের বন্যার উন্নতি হতে পারে

পদ্মার পানি বৃদ্ধি বাড়াচ্ছে শঙ্কা

২০১৭ জুলাই ১৩ ১৮:৩১:৩৬
পদ্মার পানি বৃদ্ধি বাড়াচ্ছে শঙ্কা

যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে এজন্য আগামী দু’দিন পর দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের চলমান বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে পারে। অপরদিকে দেশের অন্যতম প্রধান নদী পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এটা অব্যাহত থাকলে নতুন নতুন এলাকা বন্যায় প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলীরা।

ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বৃহস্পতিবার ১০টি নদীর পানি ১৪টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। নদীগুলো হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ধরলা, ঘাঘট, আত্রাই, ধলেশ্বরী, কপোতাক্ষ, সুরমা, কুশিয়ারা ও কংস।

দেশের প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বৃদ্ধির কারণে দেশের ১৩টি জেলায় বন্যা দেওয়া দিয়েছে। বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ভাঙন। সরকারি হিসাব অনুযায়ী বন্যায় সাড়ে ৬ লাখ লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে- সিলেট, মৌলভীবাজার, জামালপুর, বগুড়া, গাইবান্ধা, সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী।

তবে এই মুহূর্তে স্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করছেন না বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) প্রকৌশলীরা। পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমার স্থায়ী বন্যার আশঙ্কা করছি না। স্থায়ী বন্যার ক্ষেত্রে এক সঙ্গে দেশের প্রধান তিন নদী পদ্মা, মেঘনা ও যমুনার পানি বাড়তে হবে। এখন মেঘনায় পানি বৃদ্ধির কোন আশঙ্কা আমরা দেখছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এবার বন্যার মূল কারণ যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি। পানি আজ কিছুটা বাড়লেও যমুনার পানি বৃদ্ধি স্থিতিশীলতার দিকে যাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। এরপরই পানি কমতে শুরু করবে বলে আশা করছি।’

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের বৃহস্পতিবার সকাল ৯টার তথ্য অনুযায়ী, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানির সমতল ৮ সেন্টিমিটার কমেছে। যদিও কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ১৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

কুশিয়ার নদীর পানি সুনামগঞ্জের অমলশীদ পয়েন্টে ৩ সেন্টিমিটার কমে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে ও শেওলা পয়েন্টে ২ সেন্টিমিটার করে বিপদসীমার ৪৯ সেন্টিমিটার বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নদ-নদীর পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবেদনে বৃহস্পতিবার বলা হয়েছে, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে যমুনা নদীর পারি ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া এই নদীর পানি বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে ৫৮ সেন্টিমিটার, সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে ৬৬ ও সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধায় ঘাঘট নদীর পানি বিপদসীমার ৪৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের পানি কুড়িগ্রামের চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়িতে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ১০, ধলেশ্বরী নদীর পানি টাঙ্গাইলের এলাসিনে বিপদসীমার ৪০ সেন্টিমিটার, কপোতাক্ষের পানি যশোরের ঝিকরগাছায় বিপদসীমার ৪ সেন্টিমিটার উপরে রয়েছে।

সিলেটের কানাইঘাটের সুরমা নদীর পানি ৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে বলেও জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। অপরদিকে নেত্রকোণার জারিয়াজঞ্জাইল এলাকায় কংস নদীর পানি বিপদসীমার ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র আরও জানিয়েছে, বুধবার সকাল ৯টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৯০টি পানি সমতল স্টেশন পরীক্ষা করে দেখা গেছে ৫৭টি পয়েন্টে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে, পানি কমেছে ২৭টি পয়েন্টে, দু’টি নদীর পানি অপরিবর্তিত রয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালনকারী উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বৃহস্পতিবার দুপুরে দ্য রিপোর্টকে বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, গঙ্গা-পদ্মা এবং সুরমা নদ-নদীর পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে কুশিয়ারা নদীর পানির সমতল কমছে।’

তিনি বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টায় স্থিতিশীল হয়ে যেতে পারে। তবে গঙ্গা-যমুনা নদীর পানির বৃদ্ধি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় অব্যাহত থাকতে পারে।’

সুরমা ও কুশিয়ারা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে বলেও জানান এ প্রকৌশলী।

উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘পদ্মা নদীর পানি আগামী ‍কিছুদিন বৃদ্ধি পেতে পারে। যমুনার পানি যেহেতু স্থিতিশীল অবস্থার দিকে চলে আসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, তাই বন্যা পরিস্থির আর অবনতি হবে না। তাই উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের বন্যার অবনতির আশঙ্কা করছি না। বৃষ্টির প্রবণতাও কমে গেছে, আগামী কয়েকদিনে বৃষ্টি বৃদ্ধির কোন পূর্বাভাস আমরা পাইনি।’

পদ্মার পানি বাড়লেও এখনও সবগুলো স্টেশনে তা বিপদসীমার নিতে রয়েছে জানিয়ে উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী বলেন, ‘তবে কয়েকটি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। বিশেষ করে গোয়ালন্দ, আরিচা, ভাগ্যকুল, সুরেশ্বর- এসব অঞ্চলে পানি বিপদসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে।’

পদ্মার পানি বৃদ্ধি কয়েকদিন অব্যাহত থাকলে বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হবে। এতে নদী অববাহিকায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে বলেও জানান প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান।

উজানে থেকে পানি নামার কারণে পদ্মা ফুঁসে উঠছে বলে জানিয়েছেন পাউবোর প্রকৌশলীরা।

অপরদিকে আগামী কয়েকদিন অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। আগামী তিনদিনে বৃষ্টির এই প্রবণতা আরও কমে যাবে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।

আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, মৌসুমী বায়ুর বাংলাদেশের উপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সাথে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।

বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রায় সব জায়গায়ই বৃষ্টি হয়েছে। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে রাজশাহীতে ১০৭ মিলিমিটার। অন্য কোথাও বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৪০ মিলিমিটার অতিক্রম করেনি।

(দ্য রিপোর্ট/আরএমএম/এপি/জুলাই ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর