thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

‘আমরা পেছনের দেয়াল টপকে অনেক কষ্টে প্রেসক্লাবে এসেছি’

২০১৭ অক্টোবর ১৬ ০১:৩০:১৫

খুলনা ব্যুরো:

‘আমরা পেছনের দেয়াল টপকে অনেক কষ্টে প্রেসক্লাবে এসেছি’- পুলিশের হাতে চোখ হারানোর তিন মাস পর খুলনা প্রেসক্লাবে ঢুকে ক্ষু্দ্র ব্যবসায়ী শাহজালাল এভাবে পলায়নপর জীবন আর নির্যাতনের বিভৎস বিবরণ দেন। শাহজালালরবিবার (১৫ অক্টোবর) খুলনা প্রেস ক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তার ওপরঘটেযাওয়ানির্যাতনেরবর্ণনাদিতে গিয়ে আরো বলেন ‘খুলনার গোয়ালখালী মোড় থেকে হঠাৎ পুলিশ আমাকে আটক করে। এরপর থানায় নিয়ে দুই দফা মারধর চালায়। আমার স্ত্রী ও মায়ের কাছে মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা দিতে না পারায় চিকিৎসার কথা বলে থানা থেকে বের করে নেয়। আবু নাসের হাসপাতাল পার হয়েআমাকে বিশ্বরোডে নিয়ে যায় পুলিশ। সেখানে ব্রিজের আগে নির্জন স্থানে গাড়ি থেকে নামায়। এরপর পিঠের দিকে নিয়ে হাত বেঁধেফেলে। মুখের ভেতর গামছা ঢুকিয়ে দেয়। এরপর ওসি নাসিম খান বুকের ওপর উঠে বসে গলা চেপে ধরে। আমার মাথা শক্ত করে ঠেসে ধরেএসআই তাপস। এসআই সেলিম রেঞ্চ দিয়ে চোখ তুলে নেয়।’

হঠাৎ আটক হয়ে পুলিশের হাতে চোখ হারানোর তিন মাসের মাথায় খুলনা প্রেস ক্লাবে ডাকা এই সংবাদ সম্মেলনে শাহজালাল দাবি করেন, ‘আমার পরিবার এখনও নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে। পুলিশ মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। কোনও রকম সাক্ষ্য না দিতে ভয় দেখাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘সংবাদ সম্মেলনে যেন আসতে না পারি, সে জন্য পুলিশ বাধা দিয়েছে। কিন্তু আমরা পেছনের দেয়াল টপকে অনেক কষ্টে এখানে এসেছি। সবসময় পুলিশের নজরদারির মধ্যে থাকতে হচ্ছে। বাসায়ও স্বস্তিতে থাকতে পারছি না।’

চলতি বছরের ১৮ জুলাই মো. শাহজালাল পিরোজপুরের কাউখালি উপজেলার সুবিদপুর গ্রামের বাড়ি থেকে খুলনা মহানগরীর নয়াবাটিরেললাইন বস্তি কলোনির শ্বশুরবাড়িতে আসেন। ওইদিন দিনগত রাত ৮টায় শাহজালাল তার শিশুকন্যার দুধ কেনার জন্য বাসার পাশে গোয়ালখালী মোড় এলাকার দোকানে যান।ওই এলাকা দিয়ে রিকশায়করে যাওয়ার সময় সুমা আক্তার নামের একজন ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। পুলিশ ওই এলাকা থেকে শাহজালালকে আটক করেখালিশপুরথানায়নেয়।

রোববারের সংবাদ সম্মেলনে শাহজালালের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন অ্যাডভোকেট মিনা মিজানুর রহমান। এ সময় শাহজালাল, তার মা রেনুবেগম, বাবা মো. জাকির হোসেন, স্ত্রী রাহেলা বেগম, মানবাধিকারকর্মী মো. মোমিনুল ইসলাম ওশাহীন জামাল উপস্থিত ছিলেন। এসময়আরও উপস্থিত ছিল তার শিশুকন্যা আঁখি।

সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে শাহজালালআরও বলেন, ‘পুলিশ বিভিন্নভাবে মামলা করার পথে বাধা দিয়েছে। এখন আবার মামলা তুলে নিতে হুমকি দিচ্ছে। পুলিশ যদি ঘটনার দিনথানা হাজতের সামনের সিসিটিভির রেকর্ড মুছে না ফেলে তাহলে ওই ভিডিও থেকেই প্রকৃত তথ্য পাওয়া সম্ভব। ওই রাতে হাজতে আটক থাকা অন্যরাও আমার বিষয়ে প্রকৃত তথ্য দিতে পারবে। কিন্তু এখন পুলিশ নানাভাবে ছলনার আশ্রয় নিচ্ছে। একটি চোখের চিকিৎসা করিয়েদেওয়ারপ্রস্তাবদিয়েআবার তানাকচকরেছে।’

শাহজালালের স্ত্রী রাহেলা বেগম বলেন, ‘সেপ্টেম্বরের শুরুতে ঢাকা থেকে খুলনায় এসে আমি মামলা করার উদ্যোগ নেই। ওই সময় স্থানীয় লোকজন আমাকে ডেকে দৌলতপুরে এমপির বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে মামলা না করার জন্য বলা হয়। আমাকে একটি চাকরি ও ছয় লাখ টাকা দেওয়ার কথাও বলে। আমি তাতে রাজি না হওয়ায় নানাভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে সময় নষ্ট করায়। এরপর আমার শাশুড়ি রেনু বেগম বাদী হয়ে ৭ সেপ্টেম্বর আদালতে মামলা করেন। পরবর্তী সময়ে আদালত সে মামলা তদন্ত করতে পিআইবিকে দায়িত্ব দেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানি ১৮ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে।’

মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, ‘শাহজালালের বিরুদ্ধে দায়ের করা ছিনতাই মামলায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়েছে। ১৬ অক্টোবর আদালতে ওই মামলার শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ছিনতাই মামলায় শাহজালাল জামিন পেয়েছেন। কিন্তু পুলিশ কাউখালীর একটি মামলায় শাহজালালকে গ্রেফতার দেখায়। ওই মামলায়ও জামিন নিয়ে গত ৫ অক্টোবর শাহজালালকে খুলনা কারাগার থেকে মুক্তকরাহয়।’

নাগরিক নেতা শাহিন জামাল বলেন, ‘শাহজালালের চোখ তুলে নেওয়ার ঘটনার পর পুলিশের ভূমিকায় পরিবারটি চরম আতঙ্কে রয়েছে। এখন পুলিশের উচিত, আগে পরিবারটির নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। কিন্তু পুলিশ সে ধরনের কোনও দায়িত্ব পালন করছে না। যা উদ্বেগ ও হতাশার।’

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

অপরাধ ও আইন এর সর্বশেষ খবর

অপরাধ ও আইন - এর সব খবর