thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

রমজান প্রতিদিন

পবিত্র লাইলাতুল  কদর  আজ  

২০১৮ জুন ১২ ০৯:০১:২৫
পবিত্র লাইলাতুল  কদর  আজ
 

এ.কে.এম মহিউদ্দীন, দ্য রিপোর্ট: আজ মঙ্গলবার ২৬ রমজান, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের বিশ্বাস; আজকের রাতটিই লাইলাতুল কদর হিসাবে গণ্য। হাজার মাস অপেক্ষা এক অতিউত্তম রাত এই কদর। মূলত লাইলাতুর কদর আরবি শব্দ। লাইলাতুন শব্দের অর্থ রাত, আর কদর শব্দের অর্থ মহিমা, সর্বোত্তম ইত্যাদি। সুতরাং লাইলাতুল কদর শব্দের অর্থ-মহিমান্বিত রাত, শ্রেষ্ঠ রাত। লাইলাতুল কদরের গুরুত্ব বা মাহাত্ম্য হলো এটি রমজান মাসের এমন একটি রাত যেটি বছরের অন্যান্য রাতের চেয়ে অনেক অনেক উত্তম এবং এটা সেই রাত, যে রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছিলো। একারণে কোরআনে বলা হচ্ছে, আমি একে নাজিল করেছি শবে কদর সম্পর্কে আপনি কি জানেন ? শবে কদর হচ্ছে এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ মাস। [সুরা কদর]

সুতরাং বোঝা যাচ্ছে কদর হলো বছরের সর্বোত্তম রাত এবং এই রাতে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়েছে। এরাত সম্পর্কে আরো বলা হয়েছে যে, এই রাতে করা কোন ভাল কাজ অন্য হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই হাজার মাসকে যদি ১২ দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে হিসাব দাঁড়ায় ৮৩ বছরের চেয়ে কিছু বেশি এবং এটা মানুষের গড় আয়ুর চেয়ে অনেক বেশি। অর্থাৎ শুধু এই একরাতে ইবাদত করা হলে তার মর্যাদা সারা জীবন ইবাদত করার চেয়ে আরো অনেক বেশি। এটা এমন এক রাত যেখানে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত খোদার বিশেষ রহমত এবং শান্তি বর্ষিত হতে থাকে।

কোরআনে বলা হচ্ছে, আমি একে নাজিল করেছি এক বরকতময় রাতে। নিশ্চয়ই আমি সতর্ককারী, এ রাতে প্রত্যেক প্রজ্ঞাপূর্ণ বিষয় স্থিরিকৃত হয়। [সূরা দুখান] এছাড়া বলা হচ্ছে আমি কোরআনকে বোঝার জন্য সহজ করে দিয়েছি। সুতরাং লাইলাতুল কদর ভাগ্যেরো রাত। মহামহিম প্রভু এ রাতে প্রত্যেকের জন্য পরবর্তী লাইলাতুল কদরের আগ পর্যন্ত ভাগ্য নির্দারণ করে দেন। মুহাম্মদ [সা.] বলেন, লাইলাতুল কদরের রাতে যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে খোদার পুরস্কারের আশায় ইবাদত করে তিনি তার পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দিবেন। [বুখারী] প্রসঙ্গত, আরেকটি বিষয উদ্ধৃত করা জরুরী, কোরআনে যে হাজার শব্দটি ব্যবহার করেছে তা মূলত প্রতীকি শব্দ। সে সময়ের আরব জাতির জ্ঞানের পরিধির আলোকে রাব্বুল আলামিন তার বক্তব্য পেশ করেছেন। আরবরা হাজারকে সর্বশেষ ও সর্বাধিক সংখ্যা মনে করত। তারা বর্তমান যুগের মিলিয়ন ও বিলিয়নের সাথে পরিচিত ছিলনা। তাই তারা হাজার সংখ্যাকে শীর্ষ সংখ্যা বলে বিবেচনা করত।

সুতরাং বোঝা গেল এটা হলো দয়া ও মহিমার রাত। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কবে আসলে লাইলাতুল কদর ? এর উত্তর খুঁজতে আমরা নিম্নোক্ত হাদিসের সহযোগিতা নিতে চাই। পাশা পাশা একটি গাণিতিক হিসাবে মিলিয়ে দেখা যেতে পারে, কারো কারো মতামত সূরা কদরে মোট ৩০টি শব্দ আছে। হিয়া হাত্তা মাতলায়িল ফাজ্র। এটিতে ‘হিয়া’ শব্দটি ২৭তম শব্দ। আবার অন্যদের মতে, ইন্না আনঝালনাহু ফি লাইলাতিল কদর-এই আয়াতটি সুরা কদরে ৩ বার এসেছে। প্রতি আয়াতে ৯টা করে অক্ষর আছে। ফলে ৩ ৯=২৭ হচ্ছে কদরের রাত। এটা হচ্ছে, প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত। বাস্তবত কদরের রাতটি রহস্যঘেরা। খোদা তায়ালা প্রথমে তার বন্ধুকে তা জানিয়ে দেন এবং পরে আবার তাকে ভুলিয়ে দেন। এটি গোপন রাখার উদ্দেশ্য, মুসলমানগণ যেন তা লাভ করার জন্য যারপর নাই চেষ্টা সাধনা করেন।

যির ইবন হুবাইশ রহ. বলেন, আমি উবাই ইবন কা‘বকে জিজ্ঞাসা করে বলি, তোমার ভাই ইবন মাসউদ বলেন, যে ব্যক্তি সারা বছর রাতে কিয়াম করবে সে লাইলাতুল কদর লাভ করবে। তিনি বললেন, রাব্বুল আলামিন তার ওপর রহম করুন, তার উদ্দেশ্য মানুষ যেন অলস না হয়, অন্যথায় তিনি ভাল করে জানেন যে, লাইলাতুল কদর রমজানে, বিশেষ করে শেষ দশকে, বরং সাতাশে। অতঃপর তিনি শপথ করে বলেন, এতে সন্দেহ নেই লাইলাতুল কদর সাতাশে। আমি বললাম, আপনি তা কিভাবে বলেন, হে আবু আব্দুর রহমান, তিনি বললেন, নিদর্শন দেখে অথবা রাসূলের নির্দেশিত আলামত দেখে, সেদিন সূর্য উদিত হবে যে, তার কিরণ থাকবে না। ইমাম আহমদের এক বর্ণনায় আছে, সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে, যেন তা গামলা, যার কোন আলো নেই।

তিরমিযির এক বর্ণনায় আছে, উবাই বলেছেন, খোদার শপথ ইবন মাসউদ নিশ্চিত জানে যে, লাইলাতুল রমজানে, এবং তা সাতাশে, কিন্তু তিনি তোমাদেরকে সংবাদ দিতে চাননি, যেন তোমরা অলস বসে না থাক।

মুয়াবিয়া [রা.]‎ থেকে বর্ণিত, নবী [সা.] বলেছেন, লাইলাতুল কদর হচ্ছে সাতাশের রাত। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস [রা.] বলেন, এক ব্যক্তি নবী মুহাম্মাদের [সা.] নিকট এসে জিজ্ঞাসা করে হে নবী, আমি খুব বৃদ্ধ ও অসুস্থ লোক, আমার দ্বারা দাঁড়িয়ে থাকা খুব কঠিন, অতএব আমাকে এমন এক রাতের কথা বলুন, যেন সে রাতে খোদা আমাকে লাইলাতুল কদর দান করেন, তিনি বললেন, তোমার উচিত সাতাশ আঁকড়ে ধরা।

শিক্ষা ও মাসায়েল:

এক. আমাদের পূর্বসূরিগণ কল্যাণের প্রতি আগ্রহী ছিলেন, তারা ইবাদতে মগ্ন থাকার জন্য ফযিলতপূর্ণ সময় অনুসন্ধান করতেন। দুই. কারণবশত কোন বিষয় না বলা আলেমের জন্য বৈধ, যেমন মানুষের অলসতা ও নেক আমলে ত্রুটির সম্ভাবনা ইত্যাদি।

তিন. নিশ্চিত জ্ঞান বা প্রবল ধারণার ওপর কসম করা বৈধ। চার. কিরণহীন সাদা-উজ্জ্বলতা নিয়ে সকালে সূর্যের উদয় হওয়া, লাইলাতুল কদরের আলামত। পাঁচ. মুসলিমদের উচিত ফযিলতপূর্ণ মৌসুমের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করা, যেমন লাইলাতুল কদর অন্বেষণে রমজানেরশেষ দশক, যেন অল্প আমলে তার অধিক কল্যাণ অর্জন হয়। ছয়. আলেমদের বিশুদ্ধ মত হচ্ছে: লাইলাতুল কদর পরিবর্তনশীল, তবে সাতাশের রাত অধিক সম্ভাবনাময়, যেমন উবাই ইব্ন কাব শপথ করে বলেছেন। সাত. নবী (সা.) বৃদ্ধ লোককে লাইলাতুল কদর সাতাশে বলা অন্যান্য হাদিসের পরিপন্থী নয়, যেখানে অন্যরাতে লাইলাতুল কদর বলা হয়েছে, কারণ নবী (সা.) তাকে সে বছরের কথা বলেছেন, যে বছর সে জিজ্ঞাসা করেছে। লাইলাতুল কদর সম্পর্কে সব হাদিসের মধ্যে সমতা রক্ষার জন্য এ ব্যাখ্যার বিকল্প ব্যাখ্যা নেই।


(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ জুন ১২,২০১৮)


পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর