thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

সিলেট ওসমানী মেডিকেলে কিশোরীকে ধর্ষণের সত্যতা মিলেছে

২০১৮ জুলাই ২৪ ২০:০৮:১১
সিলেট ওসমানী মেডিকেলে কিশোরীকে ধর্ষণের সত্যতা মিলেছে

সিলেট প্রতিনিধি: সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর সঙ্গে আসা নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগের সত্যতা মিলেছে।

হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ওই ছাত্রীকে পরীক্ষা করে তৈরি রিপোর্ট এরইমধ্যে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে এই ঘটনায় ওসমানী মেডিকেল গঠিত তদন্ত কমিটিও অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে। পুলিশ ও তদন্ত কমিটি সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে। হাসপাতাল গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে আরও ১৫ দিনের সময় নিয়েছে। এদিকে ওই ছাত্রীর বাবা দাবি করেছেন, অভিযুক্ত ধর্ষক ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহীর পরিবারের পক্ষ থেকে বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বারবার তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

১৫ জুলাই রাত দেড়টার দিকে ওসমানী মেডিকেলের নাক-কান-গলা বিভাগের ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী নবম শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীকে (১৪) ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। মেয়েটি তার নানির সঙ্গে হাসপাতালে ছিল। ফাইল দেখার কথা বলে মাহী মেয়েটিকে তার রুমে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। ধর্ষণের অভিযোগে মাহীকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এ ঘটনায় ১৬ জুলাই ওই মেয়ের বাবা কোতোয়ালি থানায় মাহীর বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ এনে মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৬)। পরে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন আদালতে হাজির করলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের তৃতীয় তলার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১৭ নম্বর বেডে ভর্তি ছিলেন ওই ছাত্রীর নানি। এরপর রাতে ইন্টার্ন চিকিৎসক মাহী ওই শিক্ষার্থীকে চতুর্থ তলার ৭নম্বর ওয়ার্ডে ডেকে নিয়ে যান বলে অভিযোগ ওঠে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ওসমানী হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) রিপোর্টে ওই ছাত্রীকে ধষর্ণের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে এই রিপোর্টটি ওসিসি থেকে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। তদন্ত কর্মকর্তা ওসিসি থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর ওই ছাত্রী ও ইন্টার্ন চিকিৎসক মাহীর ডিএনএ স্যাম্পল (নমুনা) সংগ্রহ করে সিআইডি’র ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার এসআই আকবর হোসাইন ভূঁইয়া জানান, ‘কয়েক দিন আগে ওসিসি থেকে ডাক্তারি পরীক্ষার রিপোর্ট পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। সেই রিপোর্টে ধর্ষণের সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে বিষয়টি আবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য সিআইডি’র ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হবে ২/১ দিনের মধ্যেই। এছাড়াও ভিকটিম ও ইন্টার্ন চিকিৎসকের ডিএনএ স্যাম্পল ইতোমধ্যে সংগ্রহ করা হয়েছে।’

মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পুলিশ বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখছে। ইতোমধ্যে ভিকটিম আদালতে ২২ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ঘটনা বর্ণনা করেছে। সিআইডি থেকে রিপোর্ট পাওয়ার পর পুলিশ বিষয়টি নিয়ে আরও এগিয়ে যাবে।’

ধর্ষণের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে গত ১৭ জুলাই সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. এনকে সিনহাকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের এই কমিটি গঠন করেন হাসপাতালের পরিচালক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির প্রধানের নেতৃত্বে অন্য সদস্যরা একাধিকবার হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৭নম্বর ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন। পাশাপাশি ঘটনার দিন দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তারক্ষীদের কাছ থেকে লিখিতভাবে জবানবন্দি নেয় তদন্ত কমিটি। পাশাপাশি ওই ওয়ার্ডের সিসি ক্যামেরার ভিডিও ফুটেজও সংগ্রহ করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, ওই কিশোরী সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে হাসপাতালের চতুর্থ তলার ৭নম্বর ওয়ার্ডে প্রবেশ করছে। তদন্ত কমিটি তাদের প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে। এজন্য পুরো বিষয়টি আরও ভালো করে খতিয়ে দেখতে কমিটি আরও ১৫ দিনের সময় নিয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) সময় বাড়ানোর আবেদন করলে হাসপাতালের পরিচালক তা মঞ্জুর করেন।

এছাড়াও তদন্ত কমিটি ডাক্তার মাহী ও ওই ছাত্রীর বক্তব্য নেওয়ার জন্য হাসপাতালের পরিচালকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ২/১ দিনের মধ্যেই এই আবেদন করা হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগের অধ্যাপক ডা. এস কে সিনহা জানান, ‘আমরা সাতদিনের সময় পেয়েছিলাম। কিন্তু এই সময়টা আমাদের জন্য খুবই কম ছিল। যার কারণে আমরা আবার ১৫ দিনের সময় চেয়ে হাসপাতালের পরিচালকের কাছে আবেদন করলে তিনি তা মঞ্জুর করেন। আমরা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হয়েছি ওই ছাত্রীর সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিৎসকের কিছু একটা হয়েছে। আমাদের কাজ প্রায় শেষ হওয়ার পথে ছিল। কিন্তু তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা ভিকটিম ও ইন্টার্ন চিকিৎসকের বক্তব্য নেওয়ার কথা জানালে আমরা তা পরিচালককে জানাই। কারণ, বর্তমানে বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন। তাই আদালতের অনুমতি পাওয়ার পর ভিকটিম ও কারাগারে থাকা ইন্টার্ন চিকিৎসকের বক্তব্য লিখিত আকারে নেওয়া হবে। এরপর তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দাখিল করবে। আশা করছি এই সময়ের মধ্যেই সবকিছু হয়ে যাবে।’

সিলেট ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক দেবপদ রায় বলেন, ‘তদন্ত কমিটিকে সাত দিনের সময় দেওয়া হলে ঘটনাটি খতিয়ে দেখার জন্য তারা আরও ১৫ দিনের সময় চেয়ে মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) হাসপাতালের পরিচালকের কাছে আবেদন করে। তাদের আবেদনটি আমলে নিয়েছেন পরিচালক। তদন্ত কমিটির কাছ থেকে জানতে পেরেছি, ওসিসি থেকে একটি রিপোর্ট পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে ওই ছাত্রীর বাবা দাবি করেন, ‘ঘটনাটি মীমাংসা করতে চিকিৎসক মাহীর পরিবার আমাদের সঙ্গে বসার জন্য অনেকবার অনুরোধ জানিয়েছে। এমনকি তারা সিলেটের প্রভাবশালী কয়েকজনের কাছে গিয়ে এ বিষয়টি মীমাংসা করার জন্য বলেছে। তারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলেও আমি তাদের প্রস্তাবে রাজি হইনি।’

পুলিশ জানায়, ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহীর বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছায়। তার বাবার নাম মোখলেসুর রহমান। তিনি ওসমানী মেডিকেলের জিয়া হোস্টেলের ২১৪নম্বর কক্ষে বসবাস করে আসছিলেন। তিনি বিবাহিত ও এক সন্তানের জনক। গত ২৭ জুন সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নাক-কান-গলা বিভাগে নিয়োগ পান ইন্টার্ন চিকিৎসক মাকামে মাহমুদ মাহী। নিয়োগের ১৮ দিনের মাথায় তার বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএসআর/জুলাই ২৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর

জেলার খবর - এর সব খবর