thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ 24, ৫ চৈত্র ১৪৩০,  ৯ রমজান 1445

যে মৃত্যু আরো বেশি মহান আরো বেশি জীবন্ত করেছে তাকে!

২০১৯ অক্টোবর ০৯ ১১:৫৬:০৬
যে মৃত্যু আরো বেশি মহান আরো বেশি জীবন্ত করেছে তাকে!

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক: ‘আমি জানি তুমি আমাকে হত্যা করতে এসেছো, গুলি করো কাপুরুষ, তুমি শুধু একজন মানুষকেই হত্যা করবে (তার বিপ্লবী চেতনাকে নয়)।’ বলিভিয়ার জঙ্গলে মার্কিন মদদপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর হাতে আটক হওয়া চে গুয়েভারা শহীদ হওয়ার আগে এভাবেই চিৎকার করে বলেছিলেন বন্দক তাক করে থাকা সৈনিকের দিকে তাকিয়ে।

১৯৬৭ সালের এই ৯ অক্টোবরই মুক্তির জন্য বিপ্লবের জন্য আত্মত্যাগের বার্তা ছড়িয়ে প্রাণ দেন চে গুয়েভারা। তার সেই মৃত্যু তাকে আরো মহিমান্বিত করে তুলেছে আরো বেশি ছড়িয়ে পরেছে তার আদর্শ আর লড়াইয়ের বার্তা। চে গুয়েভারা নামটিই যুগে যুগে কালে হয়ে উঠেছে মুক্তির মন্ত্র।

এই বিপ্লবী নেতা তার জীবন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন মুক্তির লড়াই কিভাবে লড়তে হয়। দেশ কাল সীমানার গন্ডি অতিক্রম করে চে দেখিয়ে দিয়েছেন লোভ আর স্বার্থের সীমানা ছোট খুবই ছোট হয় বিপরীতে মুক্তির সীমানা অনেক বড় দীর্ঘ থেকে ক্রমেই আরো দীর্ঘ হয়। তাইতো আর্জিন্টিনায় জন্মেছেন। লড়েছেন কিউবার জনগণের মুক্তির জন্য। সেই কিউবায় বিপ্লব ঘটিয়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন অস্ত্র হাতে ঠিক তেমনি দেশ গঠনেও লড়েছেন। মন্ত্রীত্বের দায়িত্ব পালন করেছেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কারখানায় কাজ করেছেন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে। দীর্ঘ সময় তিনি ছুটির দিনগুলোতে এই কাজ করে গেছেন শ্রমিকদের ভেতর শ্রম সংস্কৃতি শৃঙ্খলাকে ছড়িয়ে দিতে।

আবার সেই মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে ছুটে গেছেন জঙ্গলে বঞ্চিত শোষিত অসহায় মানুষের মুক্তির লড়াই গড়ে ‍তুলতে। কিউবা ছেড়ে কঙ্গোতে গেছেন, ল্যাতিন আমেরিকার পথে পথে ঘুরে বেড়িয়েছেন, লড়েছেন বলিভিয়ার স্বৈরশাসকের হাতে জিম্মি জনগণের মুক্তির জন্য।

আর্জেন্টাইন এই মানুষটি দেশ, কালের গন্ডি পেরোনো এক বিপ্লবী মহাপুরুষ। ১৯৬৭ সালের ৯ অক্টোবর বলিভিয়ায় নিরস্ত্র অবস্থায় ৯টি গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল বন্দী চে গুয়েভারাকে।

১৯২৮ সালের ১৪ জুন আর্জেন্টিনায় জন্মগ্রহণ করেন চে গুয়েভারা। তার প্রকৃত নাম এর্নেস্তো গুয়েভারা দে লা সের্না। সারা বিশ্বে তিনি চে গুয়েভারা নামেই পরিচিত। তিনি ছিলেন একজন আর্জেন্টিনীয় তাত্ত্বিক মার্ক্সবাদী ও বিপ্লবী, চিকিৎসক, লেখক, চিত্রগ্রাহক, বুদ্ধিজীবী, গেরিলা নেতা, কূটনীতিবিদ, সামরিক তত্ত্ববিদ ও কিউবার এবং পরবর্তীতে সমগ্র ল্যাটিন আমেরিকার বিপ্লবের প্রধান ব্যক্তিত্ব।

তরুণ বয়সে চিকিৎসা বিজ্ঞানে পড়ার সময় চে দক্ষিণ আমেরিকার বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণ করেন। সেখানে দেখতে পান মানুষের মাঝে মানুষের কি বৈষম্য। শোষণের পীড়নের যাতাকলে মানুষ কত অসহায়। যা তাকে অসহায় মানুষের দুঃখ কষ্ট অনুধাবন করার সুযোগ এনে দেয়। চে বুঝতে পারেন ধনী গরিবের এই ব্যবধান ধ্বংস করে দেবার জন্য বিপ্লব ছাড়া আর কোন উপায় নেই।

বিপ্লব অনিবার্য- এই বোধে পৌঁছাতে চে দীক্ষা নিয়েছিলেন মার্ক্সবাদে। গুয়াতেমালায় গিয়ে টিকে থাকার ব্যর্থ চেষ্টার পর চলে গিয়েছিলেন মেক্সিকোয়, নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। সেখানেও একই দৃশ্য। লাতিন আমেরিকাজুড়ে চলমান সিআইএর হিংস্র তাণ্ডবলীলা। সবখানেই শ্রেণিবৈষম্য আর শ্রেণিশোষণ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসন। চে বিপ্লবের জন্য অস্থির হয়ে ওঠেন। মুক্তি চাই তার এই শোষনের নড়ক থেকে।

১৯৫৫ সালের জুলাইয়ে ফিদেল কাস্ত্রোর সঙ্গে দেখা হলো তার। কাস্ত্রো তখন কিউবার স্বৈরশাসক বাতিস্তার বিরুদ্ধে লড়ছেন। তার গেরিলা দলে যোগ দিলেন চে। ১৯৫৬ সালের ২৫ নভেম্বর কিউবার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে কাস্ত্রোর গেরিলা দলের যুদ্ধজাহাজ গ্র্যানমা। ১৯৫৭ সালে কাস্ত্রোর গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার নির্বাচিত হলেন। ১৯৫৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ দিকে সান্তা ক্লারার যুদ্ধে তার সফল নেতৃত্ব যুদ্ধের নিয়তি নির্ধারণ করে দিল। কিউবার স্বৈরশাসক বাতিস্তা সদলবলে পালালেন কিউবা ছেড়ে। বিপ্লব হলো কিউবায়।

১৯৬১ থেকে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত চে কিউবার শিল্প বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। এসময় তিনি কিউবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেন। এসময় কিউবান নোটগুলোতে তার স্বাক্ষরে শুধু ‘চে’ লেখা থাকতো।

১৯৬৫ সালে চে আবার বিপ্লবের ময়দানে ঝাপিয়ে পড়েন। আফ্রিকায় নিষ্পেষিত মানুষের জন্য লড়াই করার জন্য অস্ত্র তুলে নেন হাতে। তার ইচ্ছা ছিল কঙ্গো-কিনশাসা ও বলিভিয়াতে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা এবং সেখানকার মানুষের মুক্তি। বলিভিয়াতে বিপ্লব করতে গিয়ে ১৯৬৭ সালের ৭ অক্টোবর তিনি সি আই এ মদদপুষ্ট বলিভিয়ান বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন। এরপর তাকে হত্যা করা হয়।

কিন্তু আদর্শের মৃত্য হয় না। চে গুয়েভারা মুক্তির যে মহামন্ত্রধ্বনি উচ্চারণ করেছিলেন, তা আজও দেশে দেশে দুঃশাসনের অন্ধকারে ধ্রুবতারা হয়ে জ্বলছে। মুক্তির লড়াইয়ে তিনি হয়ে ওঠেন প্রেরণা, বিশ্বাস, শক্তির একটি নাম। চে গুয়েভারা বলতেন, ‘আসতা লা ভিকতোরিয়া সিয়েম্প্রে’। বিজয় না হওয়া পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও। তিনি আরো বলেছেন, ‘তুমি যদি প্রতিটি অন্যায়ের বিরুদ্ধে জ্বলে ওঠো তাহলে তুমি আমার একজন সহযোদ্ধা।’

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/অক্টোবর ০৯,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

বিশ্ব এর সর্বশেষ খবর

বিশ্ব - এর সব খবর