thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

ওয়াসার এমডির ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব

২০২০ সেপ্টেম্বর ২০ ০৯:১৮:১৩
ওয়াসার এমডির ৩ বছর মেয়াদ বাড়ানোর প্রস্তাব

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ওয়াসার এমডি তাকসিম এ খানের মেয়াদ আরো ৩ বছর বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বোর্ডসভায়। শনিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বোর্ডসভা এ সিদ্ধান্ত নেয়।

এর আগে, আবারও এমডি হিসেবে বোর্ডের সুপারিশ করিয়ে নিতে তিনি অনলাইনে বোর্ড সভা করার বিকেল ৫টায় এ সভা ডাকা হয়।

জানা গেছে, সভার একমাত্র অ্যাজেন্ডা তাকসিম এ খানকে তিন বছরের জন্য এমডি হিসেবে নিয়োগ দিতে স্থানীয় সরকার বিভাগে সুপারিশ প্রেরণ। ওয়াসার চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ রশিদ সরকার মারা যাওয়ার কদিনের মধ্যে এই সভা ডাকায় কয়েকজন বোর্ড সদস্য ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

২০০৯ সালের ১৩ অক্টোবর এমডি হিসেবে প্রথম নিয়োগ পান তাকসিম এ খান। এরপর টানা পাঁচবার তার সঙ্গে চুক্তি নবায়ন করেছে সরকার। তাকসিম এ খানের চলতি মেয়াদ শেষ হবে আগামী ১৩ অক্টোবর। ষষ্ঠবারের মতো এমডি হিসেবে নিয়োগ পেতে ওয়াসার বোর্ডের বেশ কয়েকজন সদস্যকে এরই মধ্যে তিনি ‘ম্যানেজ’ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুরুর দিকে বেশ কয়েকজন বোর্ড সদস্যকে চিঠিও দেয়া হয়নি। তবে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে তাদের বোর্ডসভার ব্যাপারে জানানো হয়। সরকারি সব অফিসের সভা অফলাইনে হলেও ওয়াসা সভা আহ্বান করেছে অনলাইনে। এই সভা অফলাইনে করার বিষয়ে একমত হয়েছিলেন ওয়াসার অন্য সদস্যরা। হঠাৎ করে অনলাইনে সভা ডাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তারা।

১১ বছর আগে যখন ঢাকা ওয়াসার দায়িত্ব নেন তাকসিম এ খান, তখনো ভারী বৃষ্টিতে ডুবতো রাজধানীর বেশির ভাগ এলাকা। এখনো একই অবস্থা। ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে ময়লা, দুর্গন্ধ থাকার অভিযোগ তখনো ছিল, এখনো আছে। রাজধানীর প্রায় ৮০ ভাগ এলাকায় পয়োনিষ্কাশনের ব্যবস্থা নেই। ১১ বছর আগেও একই অবস্থা ছিল। নাগরিক সেবার মান নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও নানা বিতর্কের মুখে পড়লেও ওয়াসার এমডি ও প্রধান নির্বাহী পদে আরো তিন বছর থাকতে চান তিনি।

ঢাকা ওয়াসা পরিচালিত হয় ১৯৯৬ সালে পাস হওয়া ‘ওয়াসা অ্যাক্ট’ অনুযায়ী। এ আইনে সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হচ্ছেন এমডি। ওয়াসা বোর্ডের প্রস্তাব বা সুপরিশ অনুযায়ী স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে এমডি পদে নিয়োগ দেয় সরকার। কিন্তু একই ব্যক্তি একই পদে সর্বোচ্চ কতবার বা কত বছর নিয়োগ পেতে পারেন, সে ব্যাপারে আইনে কিছু বলা নেই। ফলে ২০০৯ সালে প্রথম দফায় নিয়োগ পাওয়ার পর আর পদ ছাড়তে হয়নি তাকসিম এ খানকে। এরপর আরো চার দফা নিয়োগ পেয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই নিয়োগ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠছে, কখনো ওয়াসা বোর্ড তাকসিম এ খানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেছে, মন্ত্রণালয় বিরোধিতা করেছে, আবার কখনো মন্ত্রণালয়ের নির্দেশেই তাকসিমকে পুনর্নিয়োগ দেয়ার প্রস্তাব পাস করেছে ওয়াসা বোর্ড।

ঢাকা ওয়াসার এমডি পদে তাকসিম এ খানের নিয়োগ নিয়ে গত জুলাই মাসে একটি বিবৃতি দিয়েছিল ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। বিবৃতিতে ঢাকা ওয়াসায় সুশাসন নিশ্চিত করতে শীর্ষ পদে নিয়োগে আইনের যথাযথ অনুসরণ ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়েছে। ঢাকা ওয়াসার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ১৯৬৩ সালে। এর উদ্দেশ্য ছিল ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন করা, পরে এর সঙ্গে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্ব যোগ হয়। ওয়াসার কর্মকর্তাদের একাংশ দাবি করেন, এখন সংস্থাটি নগরবাসীর চাহিদার তুলনায় বেশি পানি উৎপাদন করে।

গত ১০ সেপ্টেম্বর মারা গেছেন ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এ রশিদ সরকার। তার মৃত্যুর এক সপ্তাহ না যেতেই এমডি হিসেবে নিয়োগ পেতে মরিয়া হয়ে ওঠার বিষয়টিকেও নেতিবাচক হিসেবে দেখছেন বোর্ড সদস্যরা।

ওয়াসা বোর্ডের এক সদস্য বলেন, এমডি নিয়োগের বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করার জন্য মিটিং ডাকা হয়েছে। আমাকে সন্ধ্যার দিকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে। বর্তমান এমডি বিভিন্নজনকে ম্যানেজ করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি রাজি ছিলাম না বলে চিঠি অনেক পরে দিয়েছেন হয়তো।

ওয়াসার আরেক বোর্ড সদস্য বলেন, তাকসিম এ খানের নির্দেশেই এমন আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে। আলোচ্যসূচিতে শুধু এমডি নিয়োগের প্রক্রিয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা উচিত ছিল। তা না করে এমনভাবে আলোচ্যসূচি নির্ধারণ করা হয়েছে তাতে মনে হচ্ছে, তাকসিম এ খানকে নিয়োগ দিতেই এ সভা হচ্ছে।

বোর্ডের আরেক সদস্য কাউন্সিলর হাসিবুর রহমান মানিক বলেন, চিঠি পেয়েছি। এই মিটিং সরাসরি হওয়ার কথা ছিল। শনিবার জানা যাবে কেন সভাটি অনলাইনে ডাকা হয়েছে।

এদিকে, তাকসিম এ খানের প্রথম নিয়োগ থেকে শুরু করে পরের সব নিয়োগই প্রশ্নবিদ্ধ বলে মনে করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, বোর্ড সভার আলোচ্য সূচি দেখে মনে হয়েছে, ঢাকা ওয়াসা বোর্ড তাকে নিয়োগ দেবে এটি পূর্বনির্ধারিত। সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানে তাকসিম এ খান দীর্ঘ মেয়াদে দায়িত্ব পালন করলেন, এই সময়ে তার সফলতা-ব্যর্থতা বোর্ড মূল্যায়ন করেনি। বোর্ড সত্যিকারের ভূমিকা পালন করছে বলে মনে হয় না।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/২০সেপ্টেম্বর, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর