thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

হরতালে ভোগান্তিতে রোগী

২০১৩ নভেম্বর ১১ ২০:১৯:২৬
হরতালে ভোগান্তিতে রোগী

রানা হানিফ ও মৌমিতা, দিরিপোর্ট২৪ : ১৮ দলের ডাকা ৮৪ ঘন্টার হরতালের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ দুটি হাসপাতালের রোগীরা ভোগান্তিতে পড়েছেন।

শাহবাগের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল ও বারডেম হাসপাতালে সোমবার সরেজমিনে দেখা গেছে, জরুরী বিভাগ ও বর্হিবিভাগে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম।

বিএসএমএমইউয়ের বর্হিবিভাগে টিকেট কাউন্টারগুলোতে চিরচেনা সেই লম্বা লাইন আর নেই। আবাসিক ডাক্তারদের চেম্বারেও রোগীর ভিড় কম।

বর্হিবিভাগের টিকেট কাউন্টারে (গাইনী, চক্ষু ও নাক-কান-গলা) যোগাযোগ করে জানা যায়, অন্যান্য দিনের তুলনায় রোগীর সংখ্যা অনেক কম।

হাসপাতালের বর্হিবিভাগের নাক-কান-গলা বিভাগের চিকিৎসক ডা. শাকিল রেজা দিরিপোর্ট২৪ ডটকমকে বলেন, ‘অন্যান্য দিন বেশি রোগীর চাপ থাকে। তবে হরতালের দিনে রোগীর সংখ্যা অনেক কম হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে রোগী দেখা শেষ করতে পারছি। রোগীদের যথেষ্ঠ সময়ও দেওয়া যাচ্ছে।’

তবে জরুরি বিভাগের রোগীদের নিয়ে বিপাকে আছেন কর্তৃপক্ষ। হরতালে বাড়ি ফেরা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই রোগীদের ছাড়পত্র দেয়ার পরও তারা কেবিন ও সিট ছাড়তে নারাজ। এজন্য নতুন রোগীদের সিট বা কেবিন দিতে পারছেন না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতালের সার্বিক অবস্থা নিয়ে বিএসএমএমইউ’র পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুল মজিদ ভূঁইয়া দিরিপোর্ট২৪ ডটকমকে বলেন, ‘বর্হিবিভাগের স্বাভাবিক দিনের তুলনায় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ ভাগ কম রোগী আসছে। এতে করে আবাসিক ডাক্তারদের উপর চাপটাও একটু কম। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে জরুরী বিভাগের রোগীদের নিয়ে। জরুরী বিভাগের রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের মতো। কিন্তু বাসা দূরে এমন যেসব রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তারা সুস্থ হওয়ার পরও হরতালের জন্য সিট বা ক্যাবিন ছাড়ছেন না।’

তিনি বলেন, ‘সুস্থ রোগীদের ছাড়পত্র দিয়ে সিট ছাড়ার তাগিদ দেয়া হলে তারা বলছেন, হরতাল না ছাড়লে আমরা বাড়ি যাবো কিভাবে? এজন্য নতুন ভর্তি হওয়া রোগীদের সিট দিতে পারছি না আমরা।’

চিকিৎসকদের রাজনৈতিক বিভক্তি রোগীদের সেবায় ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে কিনা প্রশ্নের জবাবে আবদুল মজিদ বলেন, ‘হাসপাতালে বিভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের ডাক্তার, কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকলেও হরতালে আমরা দায়িত্ব পালনে সবাই সচেষ্ট। এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন কর্ম-বিরতি বা গাফিলতি দেখা যাচ্ছে না। মানবিক দিক বিবেচনা করেই তারা তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।’

বারডেম হাসপাতালের জরুরী বিভাগেও হরতালের দ্বিতীয় দিন দেখা যায় ভিন্ন চিত্র । রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক দিনের চেয়ে কম।

জরুরি বিভাগের তথ্য সরবরাহকারী রুবাইয়া বলেন, ‘আগে হরতাল ডাকা হলে রোগীর সংখ্যা অনেকটাই কমে যেত।কিন্তু এখন আর এমন দেখা যায় না। স্বাভাবিক দিনে ইমারজেন্সিতে প্রতিদিন প্রায় ৬০ জন রোগী ভর্তি হতো। হরতালেও এর ব্যতিক্রম হয় না।’

জরুরি বিভাগের নার্স আনোয়ারা এ বিষয়ে একটু ভিন্ন মত প্রকাশ করে বলেন, ‘স্বাভাবিক দিনে আসলে ইমারজেন্সি বিভাগের সামনে পা রাখার জায়গা পাওয়া যায় না। কিন্তু আজকে একটি রোগীও নেই।এখানে দুএকজন যাদের দেখা যাচ্ছে তারা কেউই রোগী নয়।সকলেই এখানকার মেডিকেল রিপ্রেজেনটেটিভ।’

হরতালে ডাক্তার বা ঔষুধ নিয়ে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা প্রতিদিনই সময় মত আসছেন।তবে রোগীই আসছে না।তাছাড়া ঔষধও আসছে পরিমিত পরিমানে।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গেন্ডারিয়া থেকে আসা মুক্তা দিরিপোর্ট২৪ কে বলেন, ‘মাকে দেখাতে নিয়ে এসেছি।আজকে তার ডায়বেটিকস পরীক্ষা করার তারিখ।রাস্তা ফাকা ছিল।কিন্তু আসার সময় পুরো রাস্তাতেই ভয়ে ভয়ে ছিলাম।কখন আবার কোথায় ককটেল বিস্ফোরণ হয়।’

ডায়বেটিকস পরীক্ষা করতে মাদারটেক থেকে বারডেমে আসা মাজেদা বলেন, ‘বাসার সামনে থেকে রিকসায় উঠেছি। কোনো সমস্যা নেই রাস্তায়। তাছাড়া অন্য দিনের চেয়ে অনেক তাড়াতাড়ি পৌছেছি আজকে। জ্যাম তো নেই বললেই চলে।’

বারডেমের ফার্মেসিতে কর্মরত রাসেল বলেন, ‘স্বাভাবিক দিনে ঔষুধ বিক্রি করে শেষ করা যায় না। বাধ্য হয়ে রোগীদের লাইনে দাড় করিয়ে ঔষধ বিক্রি করতে হয়। কিন্তু হরতালের দিনগুলোতে রোগীদের ভিড় তুলনামূলক কম।’

(দিরিপোর্ট২৪/আরএইচ/এম/এইচএস/এমডি/নভেম্বর ১১, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

স্বাস্থ্য এর সর্বশেষ খবর

স্বাস্থ্য - এর সব খবর