thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল 24, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৭ শাওয়াল 1445

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ

মালিকদের হাতেই থাকলো ভর্তি কোটা

২০১৩ ডিসেম্বর ১৫ ২৩:২৩:১৮
মালিকদের হাতেই থাকলো ভর্তি কোটা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হাত ঘুরে অবশেষে অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজের মালিকদের হাতেই থাকল। ফলে এ কোটার দোহাই দিয়ে শিল্পপতিদের সন্তানদেরই মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করার সুযোগ তৈরি হলো।

আগে মেডিকেল কলেজের পরিচালনা পর্ষদ এই কোটায় শিক্ষার্থী ভর্তি করতো। কিন্তু ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় ২০১০ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ কোটায় ভর্তির দায়িত্ব নেয়। মালিকরাও মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ আনে। ব্যাপারটি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। পরে মামলা তুলে নিলে আবারো কলেজ পরিচালনা পর্ষদের হাতেই এ কোটায় ভর্তির দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব (চিকিৎসা শিক্ষা) মতিউর রহমান দ্য রিপোর্টকে জানান, মামলা তুলে নেওয়ার পর অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় ভর্তির দায়িত্ব কলেজের পরিচালনা পর্ষদকে দেওয়া হয়েছে। এখন থেকে তারাই এ কোটায় ভর্তির কার্যক্রম চালাবেন। তবে এই কোটায় ভর্তি করার জন্য ভাইভা বোর্ডে আমাদের প্রতিনিধি থাকবেন। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য আমাদের নজর থাকবে।

প্রাইভেট মেডিকেল কলেজ এসোসিয়েশনের (বিপিএমসিএ) সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুল হক দ্য রিপোর্টকে বলেন, গত বছরের মতো এবারো পরিচালনা পর্ষদ ভর্তি করবে। তবে কোটার চেয়ে চারগুণ বেশি আবেদনপত্র ভাইভা বোর্ডে দাখিল করতে হবে। বোর্ড সেখান থেকে এ কোটায় শিক্ষার্থী নির্ধারণ করবে। বোর্ডে পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছাড়াও মন্ত্রণালয় বা স্বাস্থ্য অধিদফতরের একজন প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের একজন প্রতিনিধি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা বিজ্ঞান অনুষদের ডিন থাকবেন বলেও জানান তিনি। সর্বোচ্চ স্বচ্ছতার সঙ্গে ভর্তি নিশ্চিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে এমবিবিএস ও বিডিএস কোর্সে ভর্তির জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ৫ শতাংশ কোটা অসচ্ছল ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত। প্রকৃত দরিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের সরকারি মেডিকেল কলেজের মতো কম বেতন ও সেশন চার্জ দিয়ে চিকিৎসা শিক্ষা চালানোর জন্য এ আসন সংরক্ষণ করা হয়। সংশ্লিষ্ট কলেজের পরিচালনা পর্ষদই (গভর্নিং বডি) এ কোটায় শিক্ষার্থী নির্বাচন করতো।

প্রকৃত অসচ্ছল ও মেধাবীরা এ কোটায় ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেত না বলে অভিযোগ ওঠে। মূলত এ কোটার দোহাই দিয়ে শিল্পপতিদের সন্তানদেরই মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ভর্তি করা হতো। এরপর ২০১০ সাল থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় কেন্দ্রীয়ভাবে একটি কমিটির মাধ্যমে এ কোটায় ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব একেএম আমির হোসেনকে (বর্তমানে পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক) প্রধান করে গঠিত ৮ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (চিকিৎসা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য জনশক্তি উন্নয়ন) হন সদস্য সচিব। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজগুলোর সংগঠনের প্রতিনিধি ছিলেন এ কমিটিতে।

এ কমিটির মাধ্যমে ‘অসচ্ছল ও মেধাবীরা’ এ কোটায় ভর্তির সুযোগ পাননি অভিযোগ তুলে পরের বছর মেডিকেল কলেজ মালিকরা এ কমিটি বাতিলের জন্য আদালতে রিট আবেদন করে। আদালত কমিটির কার্যক্রমে তিন মাসের জন্য স্থগিতাদেশ জারি করে। অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় ভর্তি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও মালিকদের মধ্যে টানাহেঁচড়া শুরু হয়।

তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, মালিকদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে অবশেষে তাদের হাতেই অসচ্ছল ও মেধাবী কোটায় ভর্তির দায়িত্ব দেওয়া হলো। মন্ত্রণালয়ের কমিটির মাধ্যমে ভর্তির উদ্যোগের কারণে কলেজগুলোর এ কোটায় ভর্তি নিয়ে বাণিজ্য করার সুযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তখন থেকেই মালিকরা ভর্তির দায়িত্ব নিজেদের হাতে নিতে তৎপর ছিলেন।

এবার গত ৫ অক্টোবর সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ফল প্রকাশ করা হয় ৭ অক্টোবর। দেশে সরকারি এবং বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ৯ হাজার ১৯৪টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে এবার ৬৮ হাজার ১৭২ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। দেশে ৫৪টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ রয়েছে। এর আসন সংখ্যা ৪ হাজার ৮০০। এছাড়া ১৮টি বেসরকারি ডেন্টাল ইনস্টিটিউটে আসন রয়েছে এক হাজার ৫০টি।

এবার সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে ভর্তি প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা।

(দ্য রিপোর্ট২৪/আরএমএম/নূরু/এইচএসএম/ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

বিশেষ সংবাদ এর সর্বশেষ খবর

বিশেষ সংবাদ - এর সব খবর