thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ মে 24, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৩ শাওয়াল 1445

প্রধানমন্ত্রীর সুইজারল্যান্ড সফর

কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

২০১৭ জানুয়ারি ১৪ ১৮:৪৭:০৯
কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেছেন, আগামী ১৭ জানুয়ারি সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)-এর ৪৭তম বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অংশগ্রহণের ফলে দেশের আর্থ-সামাজিকখাতে কাঙ্ক্ষিত ফল বয়ে আনবে।

প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণের ফলে এ সম্মেলনটি বিশ্বের শীর্ষ বহুজাতিক কোম্পানি, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিকখাতে বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধকরণের ক্ষেত্রেও অনুঘটকের ভূমিকা পালন করবে বলে আশবাদ ব্যক্ত করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডব্লিউইএফ-এর সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য চারদিনের সফরে রবিবার রাতে সুইজারল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন। সুইজারল্যান্ডের ডাভোস শহরে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরাম (ডব্লিওইএফ)-এর ৪৭তম বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চারদিনের ডাভোস সফর নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে বিস্তারিত তুলে ধরেন। খবর বাসসের।

সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেন, ডব্লিউইএফ-এর নির্বাহী চেয়ারম্যান প্রফেসর ক্লাউস সোয়ান-এর বিশেষ আমন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছেন। প্রফেসর ক্লাউস গত সেপ্টেম্বর মাসে নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ চলাকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করে তাঁকে এ বছরের সম্মেলনে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ জানান। ডাভোস সম্মেলনে যোগদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে তিনি এবং বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ রয়েছেন।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, ডব্লিওইএফ সুইজারল্যান্ড ভিত্তিক একটি অলাভজনক সংস্থা যা সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিশ্ববাণিজ্য বৃদ্ধি ও প্রসারে নিয়ামকের ভূমিকা পালন করে থাকে। সমসাময়িক বিশ্ব-রাজনীতি ও অর্থনৈতিক বাস্তবতা নিরূপণ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের গতি-প্রকৃতি, নিয়ামক ও করণীয় বিশ্লেষণের মাধ্যমে সম্ভাব্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় উদ্ভাবনী ধারণা, পন্থা এবং সমাধানের উপায় ব্যাপক আলোচনার মধ্য দিয়ে খুঁজে বের করা সংস্থাটির মূল উদ্দেশ্য। সাম্প্রতিক সময়ে নীতি-নির্ধারক, শীর্ষ স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাণিজ্য, শ্রম ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গসহ সমাজের সকল পর্যায়ের অংশগ্রহণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনে ডব্লিউইএফ বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে থাকে।

তিনি বলেন, প্রতি বছরের শুরুতে অনুষ্ঠিত ডব্লিউইএফ-এর বার্ষিক সভায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সরকারি, বেসরকারি, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গ অংশগ্রহণ করে থাকেন।

এবারের সভায় সুইডেন, কানাডা, নেদারল্যান্ডস, শ্রীলঙ্কা, পেরু, জর্ডান, মিশর ও কাতারসহ বিশ্বের প্রায় ৪৫টি দেশের রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান এবং ইউনেস্কো, ইউএনডিপি, ইউএনসিটিএডি, বিশ্ব ব্যাংক, আইএমএফ, এডিবি, বিভিন্ন সংস্থার প্রধানসহ প্রায় ৩ হাজার প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করবেন। জাতিসংঘের নবনির্বাচিত মহাসচিব অ্যান্তেনিও গুতেরেসও এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করবেন।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান বিশ্ব-রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিরাজমান অস্থিতিশীলতা, অনিশ্চয়তা এবং ক্রমপরিবর্তনশীল মেরুকরণের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা ও অগ্রগতির বিষয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা প্রস্তাবনার আলোকে এবারের সম্মেলনটি এক বিশেষ তাৎপর্য বহন করছে।

আবুল হাসান মাহমুদ আলী আরো বলেন, এ বছর ডব্লিউইএফ-সভার প্রতিপাদ্য ‘রেসপন্সিভ এন্ড রেসপন্সিবল লিডারশিপ’। বৈশ্বিক এবং আঞ্চলিক পর্যায়ে শিল্প, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, উন্নয়ন এবং নিরাপত্তা বিষয়ক অগ্রগতি ও করণীয় সম্পর্কে এ সভায় আলোচনা হবে। সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের ভিত্তি ও ক্ষেত্রসমূহ এ সভার মধ্য দিয়ে আরো মজবুত ও প্রসারিত হবে।

তিনি বলেন, এবারের বার্ষিক সভায় প্রধানমন্ত্রী পানি অর্থনীতি, টেকসই উন্নয়ন, আঞ্চলিক সহযোগিতা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা, তথ্য-প্রযুক্তি এবং নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন বিষয়ে বিভিন্ন প্লেনারি ও প্যানেল সেশনে অংশগ্রহণ করবেন।

এ সকল প্যানেল আলোচনা ও সেশনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা ও মরিশাসের রাষ্ট্রপতিদ্বয়, নরওয়ে, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস ও পেরুর প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিশ্বখ্যাত ব্যক্তিবর্গ সমসাময়িক বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করবেন।

প্রধানমন্ত্রী ডাভোসের কংগ্রেস সেন্টারে ‘শ্যাপিং এ নিউ ওয়াটার ইকনোমি’ শীর্ষক এক কর্মশালায়ও যোগ দেবেন। শেখ হাসিনা বিকেলে কংগ্রেস সেন্টারে অনুষ্ঠিত দক্ষিণ এশিয়ায় হার্মসিং রিজিওনাল কো-অপারেশন বিষয়ক একটি মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন।

তিনি বলেন, এবারই প্রথম ডব্লিউইএফ বাংলাদেশের কোন নির্বাচিত সরকার প্রধানকে এই সম্মানজনক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছে। ফলে এই আমন্ত্রণ একদিকে যেমন বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশের শক্তিশালী ভূমিকা ও অবস্থানকে প্রতিফলিত করে, অন্যদিকে তেমনি প্রধানমন্ত্রীর সুযোগ্য ও দূরদর্শী নেতৃত্ব যে আজ তাঁকে বিশ্ব দরবারে এক অনন্য আসনে বসিয়েছে তারও ইঙ্গিত বহন করে।

মাহমুদ আলী বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক অর্জন, সাফল্য ও বিনিয়োগ সম্ভাবনার বিভিন্নদিক সম্পর্কে আলোকপাত করা। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ইস্যুতে, বিশেষ করে অর্থনীতি ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাংলাদেশের স্বার্থ আরও সুদৃঢ় করার লক্ষ্যে ডব্লিউইএফ বার্ষিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর অংশগ্রহণ কাঙ্খিত ফল বয়ে আনবে বলে আমরা আশা করছি। এর ফলে বিশ্বপরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক, উদার, গণতান্ত্রিক ও দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে আরো একবার তুলে ধরার সুযোগ তৈরি হবে।

প্রসঙ্গত, সুইজারল্যান্ডের পূর্বাঞ্চলীয় আল্পস অঞ্চলে গ্রাউবান্ডেনে পার্বত্য রিসোর্ট ডাভোসে আগামী ১৭ থেকে ২০ জানুয়ারি চার দিনব্যাপী এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে ‘প্রতিবেদনশীল এবং দায়িত্বশীল নেতৃত্ব।’

প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী ইতিহাদ এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইট রবিবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবে।

ফ্লাইটটি সোমবার স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌছুবে। সুইজারল্যান্ডে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং জাতিসংঘ কার্যালয়ে স্থায়ী প্রতিনিধি শামিম আহ্সান বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে অভ্যর্থনা জানাবেন।

বিমানবন্দর থেকে প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিক মোটর শোভাযাত্রা সহকারে সিলভ্রেটা পার্কহোটেলে নিয়ে যাওয়া হবে। সুইজারল্যান্ড সফরকালে তিনি এই হোটেলেই অবস্থান করবেন। ডাভোস যাওয়ার পথে শেখ হাসিনা সংযুক্ত আরব আমিরাতের আবুধাবি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিট যাত্রাবিরতি করবেন।

পাঁচদিনের সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী ২০ জানুয়ারি দুপুর ২টা ৩৫ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশ্যে জুরিখ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করবেন এবং ২১ জানুয়ারি দুবাই হয়ে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পৌঁছবেন।

(দ্য রিপোর্ট/এস/এপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর