thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে 24, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১১ জিলকদ  1445

লৌহজংয়ে সাড়া জাগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নাট্যমেলা

২০১৭ মার্চ ০৮ ১৪:০৭:৫৮
লৌহজংয়ে সাড়া জাগিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নাট্যমেলা

পাভেল রহমান, দ্য রিপোর্ট : ঢাকা থেকে বাসযোগে দেড় ঘন্টার পথ পেরিয়ে পৌঁছানো গেলো মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলায়। মাওয়া থেকে উপজেলা সদরের পথ ধরে গেলে রাস্তার দু-ধারে দেখা মিলবে মুক্তিযুদ্ধের নাট্যমেলার বিলবোর্ড। এই কর্পোরেট বাণিজ্যিক সময়ে উপজেলা সদরে বাণিজ্যিক পন্যের বিলবোর্ডের সঙ্গে নাট্যমেলার বিলবোর্ড যেন ভিন্ন এক সৌন্দর্য নিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে।

পদ্মা নদীর কূলঘেঁষে স্থানীয় কলেজ মাঠে লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে দ্বিতীয়বারের মতো অনুষ্ঠিত হচ্ছে সপ্তাহব্যাপি মুক্তিযুদ্ধের নাট্যমেলা। গতকাল মঙ্গলবার ছিলো এই নাট্যমেলার সমাপনী সন্ধ্যা। এদিন বিকেলে কলেজ মাঠের চায়ের দোকানে আলোচনার বিষয়বস্তু গতকালের বটতলার নাটক ‘ক্রাচের কর্ণেল’।

একজন বলছেন, ‘কর্ণেল তাহের নিয়া এই নাটকটা ভালো লাগছে। অনেক কিছু জানি না। আর নাটকটা এতো দ্রুত অভিনয় হইছে। কিছু বুঝছি, কিছু বুঝি নাই। এই নাটকটা আরো কয়েকবার এখানে হইলে সবাই দেখতে পারতো।’

এগিয়ে গিয়ে জানতে চাইলাম নাট্যমেলায় কোন নাটকটি বেশী ভালো লেগেছে? কাসেম মিয়া নামের একজন উত্তর দিলেন, ‘কনডেমড সেল’, ‘মেরাজ ফকিরের মা’ নাটক দুটো বেশী ভালো লেগেছে। এর আগে ‘কোর্ট মার্শাল’ নামের একটা নাটক ছিলো। এটাও ভালো লাগছে। তবে বুঝতে একটু সমস্যা হইছে। আর্মি নিয়া তো, একটু কঠিন।’

স্বাধীনতার মাস মার্চের প্রথম সপ্তাহে মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে স্থানীয় কলেজ মাঠে অনুষ্ঠিত হয়েছে সপ্তাহব্যাপি ‘মুক্তিযুদ্ধের নাট্যমেলা’। গত ১ থেকে ৭ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য এই নাট্যমেলার শেষ হয় গতকাল মঙ্গলবার।

সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে দেশ বরেণ্য অভিনয়শিল্পীদের পরিবেশনায় মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক নাটক উপভোগ করেছেন লৌহজংয়ের হাজারো মানুষ। নাট্যমেলার চতুর্থ দিন (৪ মার্চ) মেরাজ ফকিরের মা নাটক নিয়ে মেলায় অংশ নেন ইন্টারন্যাশনাল থিয়েটার ইন্সটিটিউটের সাম্মানিক সভাপতি রামেন্দু মজুমদার।

তিনি বলেন, ‘লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার মাসে এমন চমৎকার একটি নাট্যমেলার আয়োজন করেছে। এটি প্রশংসার দাবীদার। তৃণমূলের আওয়ামী লীগ নেতারা সারা দেশের জন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করেছেন। জঙ্গীবাদ, সাম্পদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণ প্রজন্মকে নিজেদের সংস্কৃতির প্রতি আরো বেশী যুক্ত হতে হবে। এই নাট্যমেলা তরুণদের আরো বেশী শেকড়মুখি করবে। লৌহজং উপজেলা আওয়ামী লীগের এই আয়োজনটি যেন ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। সারা দেশে এ ধরণের নাট্যমেলার আয়োজন হোক।’

স্থানীয় সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি গত ১ মার্চ নাট্যমেলা উদ্বোধন করেন। উদ্বোধনী সন্ধ্যায় মঞ্চস্থ হয় ঢাকার শূন্যন রেপার্টরী নাট্যদলের নাটক ‘লাল জমিন’। পর দিন ২রা মার্চ প্রাঙ্গণেমোর মঞ্চস্থ করে ‘কনডেমড সেল’। ৩রা মার্চ থিয়েটার আর্ট ইউনিট মঞ্চস্থ করে ‘কোর্ট মার্শাল’। চতুর্থ দিন ‘থিয়েটার নাটক সরণী’ (বেইলী রোড) মঞ্চস্থ করে নাটক ‘মেরাজ ফকিরের মা’। ৫ম দিন শব্দ নাট্যচর্চকেন্দ্র মঞ্চস্থ করে ‘বীরঙ্গনার বয়ান’। ৬ষ্ঠ দিন বটতলা মঞ্চস্থ করে ‘ক্রাচের কর্ণেল’।

নাট্যমেলার সমাপনীতে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় আয়োজন করা হয় ‘সাম্প্রদায়িকতা মুক্ত বাংলাদেশ গড়তে তরুণদের ভূমিকা’ শীর্ষক এক মতবিনিয় সভা। এতে মুখ্য আলোচক ছিলেন ড. বিপ্লব বালা। আলোচনায় অংশ নেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি চৈতালী হালদার চৈতি’সহ স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। সমাপনী সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের একতা নাট্যগোষ্ঠী মঞ্চস্থ করে হুমায়ুন আহমেদ রচিত ১৯৭১ এবং এস এম সোলায়মান রচিত জনম দুঃখী মা নামের দুটি নাটক। এছাড়া গান পরিবেশন করেন শিশির রহমান।

নাট্যমেলার অন্যতম উদ্যোক্তা, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল রশীদ শিকদার বলেন, ‘তরুণ প্রজন্মকে নিয়েই তো গড়তে হবে আগামীর বাংলাদেশ। তাই তরুণদের জন্যই লৌহজং উপজেলা এই নাট্যমেলা আয়োজন করেছে। উপজেলার সবগুলো স্কুল, কলেজের ছেলেমেয়েরা তাদের বাবা-মা’দের নিয়ে নাট্যমেলায় প্রতি সন্ধ্যায় নাটক দেখেছেন। মুক্তিযুদ্ধ এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ছড়িয়ে দিতে এই নাট্যমেলা ভূমিকা রাখবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।’

প্রতি বছর এই নাট্যমেলার আয়োজন করা হবে জানিয়ে আব্দুল রশীদ শিকদার বলেন, ‘এই আয়োজনটি প্রতি বছর করা হবে। দেশের সেরা নাটকগুলো লৌহজংয়ের মানুষের সামনে নিয়ে আসা হবে। একই সঙ্গে লৌহজংয়ের বিভিন্ন স্কুল, কলেজে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। আমাদের শিক্ষার্থিদের বিভিন্ন পরিবেশনাও মঞ্চস্থ করা হবে নাট্যমেলায়।

আমরা বিশ্বাস করি, জেলায় জেলায় সাংস্কৃতিক আয়োজন যত বাড়বে, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মতো ব্যাধী তরুণদের কাছ থেকে তত দূরে সড়বে।’

নাট্যমেলার সমন্বয়ক পিয়ার মোহাম্মদ বলেন, পর পর দুই বছর মুক্তিযুদ্ধের নাট্যমেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে লৌহজংয়ে। সাধরণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে এই নাট্যমেলা। বিভিন্ন স্কুল কলেজ থেকে শুরু করে স্থানীয়রা স্বতস্ফূর্তভাবে নাটক দেখতে এসেছেন। সবার অংশগ্রহণ আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। আমরা এই নাট্যমেলা প্রতি বছর করতে চাই। এরই মধ্যে নাট্যমেলার অন্যতম উদ্দোক্তা আব্দুল রশীদ শিকদার প্রতি বছর আরো বড় পরিসরে এই নাট্যমেলা আয়োজনের আশ্বাস দিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের এই নাট্যমেলার সঙ্গে আরো বেশী যুক্ত করা হবে।’

(দ্য রিপোর্ট/পিএস/মার্চ ৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর