thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১ নভেম্বর ২০২৪, ১৭ কার্তিক ১৪৩১,  ২৮ রবিউস সানি 1446

আইপিইউ’র সিদ্ধান্ত আসছে বুধবার

‘কোনো সার্বভৌম দেশে হস্তক্ষেপ নয়’

২০১৭ এপ্রিল ০৪ ২০:১২:১২ ২০১৭ এপ্রিল ০৪ ২০:২০:০০
‘কোনো সার্বভৌম দেশে হস্তক্ষেপ নয়’

কোনো স্বাধীন সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ রোধে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা সংক্রান্ত খসড়া প্রস্তাবসহ আরও ৪টি প্রস্তাবের খসড়া সংশ্লিষ্ট স্ট্যান্ডিং কমিটিতে অনুমোদন পেয়েছে। বুধবার (০৫ এপ্রিল) সম্মেলনের শেষ দিনে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) মূল কমিটিতে এটি পাশ বা অনুমোদনের পরে ঢাকা ডিক্লিয়ারেশনে অন্তর্ভূক্ত হবে বলে আইপিইউ সূত্রে জানা গেছে।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মঙ্গলবার সকালে আইপিইউ এর ৪র্থ দিনের কার্যসূচি শুরু হয়। মোট ১১টি বিষয়ে ৪টি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে আলোচনা হয়।

স্বাধীন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অন্য কোনো দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে-আইপিইউ সম্মেলনে স্টান্ডিং কমিটিতে একটি প্রস্তাব ৪৪-১০ ভোটে গ্রহণ করা হয়েছে। এরমধ্যে দিয়ে আইপিইউভুক্ত দেশের আইন প্রণেতাদের বেশিরভাগ সদস্য অঙ্গীকার করেছেন অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। বিশেষ কোনো কারণে যদি প্রয়োজনও হয় তাহলে জাতিসংঘের আইন অনুযায়ী করার ওপর মত দেন এসব আইন প্রণেতা।

ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) ১৩৬তম অ্যাসেম্বলির চতুর্থদিনে মঙ্গলবার ‘শান্তি ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিষয়ক’ আইপিইউর স্ট্যান্ডিং কমিটির সভায় দিনভর এ খসড়া প্রস্তাবের পক্ষে-বিপক্ষে তীব্র বিতর্ক হয়। পরে ভোটাভুটিতে পাশ হলে বিষয়টির উপর খসড়া প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়। এসময় কমিটিতে সভাপতিত্ব করছিলেন ম্যাস্কিকোর প্রতিনিধি দলের প্রধান লোরা রোজাস। মঙ্গলবার স্ট্যান্ডিং কমিটিতে গৃহীতএ প্রস্তাবটির খসড়া বুধবার এক্সিকিউটিভ কমিটিতে যাবে। ১৭ সদস্যের ওই এক্সিকিউটিভ কমিটির সভাপতি আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া ৬ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ১০ জন সদস্য রয়েছেন এক্সিকিউটিভ কমিটিতে। সেখানেই চূড়ান্ত হবে প্রস্তাবটি।

অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ বন্ধে আনীত এই খসড়া প্রস্তাবটির ওপর ০২-০৪ এপ্রিল বিভিন্ন দেশের সংসদ সদস্যরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এসময় এক দেশ অন্য দেশের দোষারোপ করতে থাকেন।

প্রস্তাবটি আলোচনা শেষে স্ট্যান্ডিং কমিটিতে গ্রহণের আগে ভোট অনুষ্ঠিত হয়। সেই ভোটে বাংলাদেশ, ভারত, চীন, রাশিয়াসহ ৪৪টি দেশ পক্ষে মত দেয়। অন্যদিকে ১০টি দেশ এই প্রস্তাব সরাসরি বাতিলের পক্ষে মত দেয়। একটি দেশ ভোট দান থেকে বিরত থাকে। বিপক্ষে ভোট দেওয়া রাষ্ট্রগুলো হচ্ছে-জার্মানি, যুক্তরাজ্য, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, কানাডা, তুর্কী, আইসল্যান্ড, নরওয়ে, সুইজারল্যান্ড ও ইউক্রেন। ভোট প্রদান থেকে বিরত থেকেছে বেলজিয়াম।

বিপক্ষে ভোট দেওয়া দেশের ফিনল্যান্ডের প্রতিনিধি বলেন, প্রস্তাবটি আমরা ঠিকমতো বুঝতে পারি নাই। যে কারণে আমি মনে করি অনেক দেশের প্রতিনিধিই এই প্রস্তাব বুঝতে না পেরে ভোট দেয়নি।

বাংলাদেশ ডেলিগেশন টিমের প্রধান ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, বুধবার (০৪ এপ্রিল) আইপিইউ-এর মূল কমিটিতে প্রস্তাবটির চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হবে। সেটা ভোটাভুটির মাধ্যমেও হতে পারে।

প্রস্তাবটি অনুমোদন হলে এক দেশের উপর আরেক দেশের হস্তক্ষেপ বন্ধ হবে কিনা-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সামান্যতমহলেও এর ইফেক্ট পড়বে। আইপিইউতো একটা ওয়ার্ল্ডওয়াইড অর্গানাইজেশন। তুমি যদি ডেমোক্রেসি চাও আর ডেমোক্রেটিক রেজ্যুলেশন না মানো তাহলে তো হতে পারে না। এটা সত্য কোন দেশই অন্য দেশের ওপর হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। এটা করাও উচিত না।

এ ব্যাপারে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান এমপি বলেন, আশা করছি আগামীকাল (বুধবার)আইপিইউ-এর গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে রেজ্যুলেশনটি চূড়ান্ত অনুমোদন হবে।

তিনি বলেন, বিশেষ কোনো কারণে কোনো দেশের উপর যদি হস্তক্ষেপ করতেই হয় তাহলে আগে জাতিসংঘে রেজ্যুলেশন হতে হবে। শুধুমাত্র জাতিসংঘের মাধ্যমেই প্রয়োজনে কোনো দেশের উপর হস্তক্ষেপ করা যেতে পারে। এ ছাড়া স্বাধীন কোনো দেশ অন্য কোনো দেশের উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না।প্রস্তাবটি গ্রহণ করায়

চায়নার প্রতিনিধি সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, আমরা খুব খুশি যে প্রস্তাবটি গ্রহণ করা হয়েছে। এটা গণতন্ত্রের জন্য ভালো।

ভোট প্রদানের পর বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য মঈনুদ্দিন খান বাদল বলেন, ‘আমরা কোন দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে না খোঁচাই না। এই সম্মেলনে আমরা বলেতে চাই সব শেষে গণতন্ত্রকে সমর্থন দিতে হবে।

কমিটি সূত্রেজানা যায়, চীন, ভারত, রাশিয়াসহ অনেক দেশে এ প্রস্তাবের পক্ষ নিলেও জি-১২ প্লাস গ্রুপ এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নেয়।

উল্লেখ্য, গত রবিবার কমিটির বৈঠকে বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রীডা. দীপু মণি খসড়া প্রস্তাবে একটি সংযোজনী আনার প্রস্তাব করে বলেন, বর্তমানে অনেক দেশ ‘এনজিও’র মাধ্যমে অন্য দেশে নাক গলানোর চেষ্টা করে। এটি বন্ধ করতে হবে। প্রতিটি দেশের নিজস্ব স্বাধীনতা রয়েছে। ‘প্রতিটি দেশের অধিকার আছে নিজেকে শাসন করার এবং কীভাবে উন্নয়ন করবে সেটি ঠিক করার। তবে অনেক দেশ মনে করে তারা ইরাক বা সিরিয়াতে নাক গলানোর অধিকার রাখে এবং এর ফলে সে দেশে সন্ত্রাসী গ্রুপ সৃষ্টি হচ্ছে।’তিনি বলেন, প্রায় এক বছর আলোচনার পর এ রেজ্যুলেশনের খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু বেশ কয়েকটি দেশ এ খসড়ার বিরোধিতা করেছে। তারা এটিকে বাতিল করার প্রস্তাব করেছে। পরে এনজিওর বিষয়টি বাতিল হয়ে যায়।

এ খসড়া প্রস্তাব সমর্থন করে চীন বলে, বিদেশি শক্তি এবং এর প্রভাব গ্রহণযোগ্য নয়। ২০০৩ সালে গণবিধ্বংসী অস্ত্রের অজুহাত দেখিয়ে একটি দেশ ইরাক আক্রমণ করেছিল কিন্তু পরে দেখা গেছে সেখানে এ ধরনের কোনও অস্ত্র নেই। রাশিয়া এ খসড়া সমর্থন করে জানিয়েছে, এটি বাতিল করা হলে সারাবিশ্বে একটি ভুল বার্তা যাবে। ভারতওএ রেজ্যুলেশন সমর্থন করে বলে জানায় বৈঠক সংশ্লিষ্ট সূত্র।

মঙ্গলবার পাশ হওয়া আরও একটা প্রস্তাব- ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান,সোমালিয়া ও উত্তর কেনিয়ার তীব্র খরায়কবলে পড়া দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আইপিইউ-এর স্ট্যান্ডিং কমিটিপাশ করে। এর আগে গত রবিবার সম্মেলনের সাধারণ আলোচনায় প্রস্তাবটি ভোট গ্রহণ করা হয়। সোমবার এর ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

রবিবার বেলজিয়াম, যুক্তরাজ্য ও কেনিয়ার প্রতিনিধি দলের পক্ষ থেকে প্রস্তাবটি আইপিইউ অধিবেশনে তোলা হয়। তবে মেক্সিকোর দেওয়া ‘বিশ্বজুড়ে কঠোর অভিবাসন নীতি ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঝুঁকি’ এবং আরব গ্রুপের পক্ষে ফিলিস্তিনের দেওয়া ‘বসতি স্থাপন প্রক্রিয়াকে ইসরায়েলের আইনি বৈধতা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন’ শীর্ষক দুটি প্রস্তাব ভোটে নাকচ হয়ে যায় সেদিন।

দুর্ভিক্ষ নিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়- ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও উত্তর কেনিয়ায় চলমান দুর্ভিক্ষ চরম মানবিক বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। গত ১০ মার্চ জাতিসংঘও এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সতর্ক করে দিয়েছে।

এছাড়া বৈশ্বিক জঙ্গীবাদ রোধ ওবৈষম্য নিরসন বিষয়ে আরও দুটি প্রস্তাব স্টিয়ারিং কমিটি গ্রহণ ও অনুমোদনের জন্য ড্রাফ্ট করেছে বলে জানা গেছে।

এবিষয়ে আইপিইউ-এর সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সম্মেলনের মূল বিষয় ছিল বিশ্বব্যাপী নানা ধরনের বৈষম্য নিরসনে কার্যকর ভূমিকা পালন করা। আর গত ৪দিন যাবৎ আইপিইউ এর ৪টি কমিটিতে এ বিষয়সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ইয়েমেন, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া ও উত্তর কেনিয়ার তীব্র খরায়কবলে পড়া দুর্ভিক্ষপীড়িত মানুষের সাহায্যে দ্রুত এগিয়ে আসার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন। এছাড়া কোনো রাষ্ট্র যাতে অন্য কোনো রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে না পারে সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কমিটিতে আলোচনা হয়ে প্রস্তাবটির উপর ড্রাফ্ট করেছে। যা আগামীকাল (বুধবার) মূল কমিটিতে তারা প্রস্তাব আকারে পাঠাবে এবং মূল কমিটি এটির উপর আলোচনা করে অনুমোদন দেবে। যা ঢাকা ডিক্লিয়ারেশনের অন্তর্ভূক্ত করা হবে।

তিনি বলেন, আইপিইউ মূলত বিশ্বব্যাপী অসমতা দুর করা, জঙ্গিবাদের প্রসার রোধ করা, সুশাসনের অভাব, নানাবিধ বৈষম্যের অবসান করা, মানবাধিকার রক্ষা ও ক্ষুধা দারিদ্রমূক্ত পৃথিবী গড়ার উপর জোর দিয়েছে। কীভাবে সরকারের সঙ্গে সঙ্গে পার্লামেন্টের সদস্যদের ক্ষমতা বাড়ান যায় সে বিষয়ে আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি।

সাবের চৌধুরী আরও বলেন, অনেক সময় আমরা জঙ্গিবাদ, বৈষম্য, দারিদ্র্যতা নিয়ে আলোচনা করি। এ সম্মেলনে এসবের অন্তর্নিহিত কারণ কি তা বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে। আইপিইউ মনে করে জঙ্গিবাদ সামরিক ব্যবস্থা দিয়ে রোধ করা যাবে না। এটির কারণ খুঁজে এর মূল উৎপাটন করতে হবে। আর এ নিয়ে আমরা আলোচনা চালাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইয়েমেন, সিরিয়া, ভেনিজুয়েলার সমস্যা দীর্ঘদিনের। এ সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তা নিয়ে আইপিইউ আলোচনা করেছে। আমরা এসব দেশের সরকারের ক্ষমতার সাথে সাথে পার্লামেন্টের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছি। এসব দেশের সরকার পার্লামেন্টের কথা শুনতো না। এখন এর পরিবর্তন আসছে। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী বৈষম্য ও সুশাসনের অভাবের কারণে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। আমরা এর মূল উৎপাটন করতে চাই।

এ বিষয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, এবারের আইপিইউ সম্মেলন খুবই ফলপ্রসূ হচ্ছে।কোনো সার্বভৌম দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের হস্তক্ষেপ বন্ধে একটি প্রস্তাবের উপর ভোটাভুটিতে প্রস্তাবটি পাশ হয়েছে। এটি কাল (বুধবার) আইপিইউ এর সাধারণ অধিবেশনে পাশ হবে। এছাড়া জঙ্গিবাদ নিয়ে এবারে সরব হয়েছে আইপিইউ সম্মেলন। তরুণ পার্লামেন্টারিয়ানদের বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। গণতন্ত্র সুশাসন, বৈষম্য দুরীকরণ ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মোট কথা এবারের আইপিইউ সম্মেলন খুবই কার্যকরী হবে এবং আমরা একটি কার্যকরী ‘ঢাকা ডিক্লিয়ারেশন’ পাব আশা করি।

প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১ এপ্রিল) রাতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় আইপিইউ সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার (৫ এপ্রিল) এ সম্মেলন শেষ হবে। পরবর্তী সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে রাশিয়ায়।

(দ্য রিপোর্ট/কেএ/এপি/এপ্রিল ০৪, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর