thereport24.com
ঢাকা, শনিবার, ২৭ এপ্রিল 24, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ১৮ শাওয়াল 1445

রাজশাহীতে গ্রেফতার ৮ ‘জঙ্গি’ রিমান্ডে

২০১৭ জুন ১৩ ২২:৫২:৩০
রাজশাহীতে গ্রেফতার ৮ ‘জঙ্গি’ রিমান্ডে

রাজশাহী অফিস : রাজশাহীর তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙাপাড়া গ্রামে অপারেশন রিবার্থে গ্রেফতার আট জনকে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত। এদের মধ্যে ছয়জনের ১০ দিন ও ২ জনের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

আদালত পরিদর্শক খুরশিদা বানু কনা জানান, মঙ্গলবার (১৩ জুন) বিকেলে আট জনকে রাজশাহীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এ হাজির করে তানোর থানার মুন্ডুমালা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক সিদ্দিকুর রহমান ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করেন। আবেদনের শুনানি শেষে বিচারক সাইফুল ইসলাম ৬ জনের ১০ দিন করে এবং ২ জনের ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে আদালত থেকে তাদের তানোর থানায় পাঠানো হয়।

খুরশিদা বানু কনা বলেন, বাড়ির মালিক ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রমজান আলী, তার স্ত্রী আয়েশা বেগম, দুই ছেলে ইব্রাহিম হোসেন ও ইসরাফিল হোসেন, জামাতা রবিউল ইসলাম এবং পুত্রবধূ হাওয়া খাতুনের ১০ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে। রমজানের পুত্রবধূ মর্জিনা খাতুন ও মেয়ে হাওয়া খাতুনের সাথে শিশু সন্তান থাকায় তাদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম বলেন, যে দুই শিশুর বয়স তিন মাস ও ছয় মাস তারা তাদের মায়ের সঙ্গে থাকবেন। আর মর্জিনার নয় ও ছয় বছরের দুই শিশুকে তাদের নানা-নানির জিম্মায় দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

এর আগে মঙ্গলবার সকালে গ্রেফতার ৮ জনের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক ও অস্ত্র আইনে তানোর থানায় মামলা দায়ের করেন থানার পিএসআই জাহিদুল ইসলাম।

গত রবিবার গভীর রাতে বগুড়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তথ্যে রাজশাহী জেলা পুলিশ তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের ডাঙাপাড়া গ্রামের স্কুল শিক্ষক রমজান আলীর বাড়ি ঘিরে ফেলে। এ সময় পুলিশ বাড়ির ভেতর থেকে সবাইকে বের হয়ে আসতে হ্যান্ডমাইকে আহ্বান জানালে রমজানের দুই ছেলে ইব্রাহিম হোসেন (৩৫) ও ইসরাফিল হোসেন (২৬)এবং জামাতা রবিউল ইসলাম (২৫) বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পুলিশের দাবি, তারা নব্য জেএমবির সদস্য। এরপর সোমবার সকালে বাড়ির মালিক গৌরাঙ্গপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রমজান আলী (৫৪), তার স্ত্রী আয়েশা বেগম (৫০), ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী মর্জিনা বেগম (২৮), তার তিন মেয়ে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী তামান্না খাতুন (৯), তাসকিরা খাতুন (৪), ছয় মাসের শিশু তানসিরা, রমজানের ছোট ছেলে ইসরাফিলের স্ত্রী হারেছা খাতুন (২১), রমজানের মেয়ে হাওয়া খাতুন (২০) ও তার তিন মাসের শিশু বাড়ি থেকে বের হয়ে আসে। পরে ওই বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ দু’টি সুইসাইডাল ভেস্ট, ৫ রাউন্ড গুলিসহ একটি পিস্তল ও চারটি বোমা উদ্ধার করে।

এদের মধ্যে মঙ্গলবার সকালে তানোর থানায় দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত আট আসামি হলেন রমজান আলী, তার দুই ছেলে ইব্রাহিম হোসেন ও ইসরাফিল হোসেন, জামাতা রবিউল ইসলাম, রমজান আলীর স্ত্রী আয়েশা বেগম, মেয়ে হাওয়া খাতুন, ইব্রাহিমের স্ত্রী মর্জিনা বেগম ও ইসরাফিলের স্ত্রী হারেছা খাতুন।

এদিকে, সোমবার সকালে ওই বাড়িতে পাওয়া বোমা নিষ্ক্রিয় করতে খবর পাঠানো হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের বোমা নিষ্ক্রিয়কারী টিমকে। সোমবার রাত সাড়ে ৯টার পর তারা এলাকায় পৌঁছে অভিযান শুরু করে। এ সময় তারা ওই বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই ও সিডি, একটি ল্যাপটপ, পাঁচটি মোবাইল ফোন, দুটি মোটর সাইকেল ও নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা উদ্ধার করে বলে পুলিশ দাবি করেছে। এসময় বাড়িতে পাওয়া বোমাগুলো নিষ্ক্রিয় করার পর রাত ১১টার দিকে অভিযান সমাপ্ত করে নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন রিবার্থ’।

এদিকে মঙ্গলবার দুপুরে অপারেশন রিবার্থ সম্পর্কে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন রাজশাহী রেঞ্জ পুলিশের ডিআইজি এম খুরশিদ হোসেন। তিনি বলেন, চলতি রমজান মাস এবং আসন্ন ঈদকে ঘিরে গ্রেফতার ‘জঙ্গি’রা নানা ধরণের নাশকতার পরিকল্পনা করছিল। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ডাঙাপাড়া গ্রামের বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

এদিকে, দীর্ঘ ৩০ ঘণ্টার উদ্বেগ-উৎকন্ঠার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে তানোর উপজেলার ডাঙ্গাপাড়ার জনজীবন। সোমবার রাতে ওই বাড়িতে উদ্ধার হওয়া বোমা নিষ্ক্রিয় করার মধ্যে দিয়ে পুলিশ অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করে। এরপর মঙ্গলবার সকাল থেকে ওই বাড়ির আশপাশে বসবাস করা মানুষগুলো তাদের বাড়ি ফিরতে শুরু করে। সেই সঙ্গে যে বাড়িটিকে ঘিরে এতো উত্তেজনা, তা ঘিরে উৎসুক জনতার ভিড় বাড়তে থাকে। বাড়িতে তালা থাকায় কেউ বাড়ির ভেতর ঢুকতে পারেনি। অভিযান শেষে পুলিশ ওই বাড়ির চাবি গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনের জিম্মায় রেখে গেছে।

ডাঙাপাড়া গ্রামের ইউপি সদস্য মঞ্জু রহমান জানান, রোববার রাতে জঙ্গি আস্তানা ঘিরে পুলিশের অভিযান শুরু হলে জনজীবনে আতঙ্ক নেমে আসে। মানুষের মনে বিষয়টি ভীতির সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও জঙ্গি আস্তানার আশপাশের ১৫ থেকে ১৬টি পরিবারকে পুলিশ বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছিল। ওইসব পরিবারের লোকজন নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছিল।

সাবেক চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন জানান, রোববার রাতে বাড়িটি ঘিরে রাখার পরে আশেপাশের মানুষদের বাড়ি ফাঁকা করে দিতে বলে পুলিশ। সে কারণে অনেকেই সে রাতে সেহেরি খেতে পারেননি। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে অভিযান শেষ হওয়ার পর থেকে জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে।

(দ্য রিপোর্ট/এজে/এনআই/জুন ১৩, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর