thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৪ মে 24, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১,  ৬ জিলকদ  1445

রমজান প্রতিদিন

রমজানে পাপ মুক্তির অবারিত সুযোগ

২০১৯ মে ২২ ০৯:০৪:৫১
রমজানে পাপ মুক্তির অবারিত সুযোগ

এ.কে.এম মহিউদ্দীন

আজ ১৬ রমজান বুধবার । মাগফেরাতের দশক শেষ হতে আর মাত্র চারদিন বাকি। মাহে রমজান বিশেষভাবে দোয়া কবুলের মাস। মাহে রমজানের সিয়াম সাধনা মানুষের সামনে পাপমুক্তির অবারিত সুযোগ উন্মোচন করে। আল্লাহ তাআলার অসংখ্য মহান গুণের একটি হলো ক্ষমা। আল্লাহ ‘গাফুরুর রাহিম’ অর্থাৎ তিনি পরম ক্ষমাশীল, অতি দয়ালু। মানুষ মহান আল্লাহ্‌র ক্ষমা ও দয়া লাভ করে পাপমুক্ত হতে পারে, সৌভাগ্যবান হতে পারে। তবে সৃষ্টিকর্তার ক্ষমা লাভ করতে হলে তাঁর সৃষ্টিকে ক্ষমা করতে শিখতে হবে। জানতে হবে মানুষকে ক্ষমা করতে । এ মাসের প্রথম দশক রহমতের, দ্বিতীয় দশক ক্ষমা বা মাগফিরাতের এবং তৃতীয় দশক দোজখ থেকে নাজাত বা মুক্তি লাভের জন্য নির্ধারিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘আর এটি এমন একটি মাস, যার প্রথম ভাগে আল্লাহ্‌র রহমত, মধ্যভাগে গুনাহের মাগফিরাত এবং শেষভাগে জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ রয়েছে।’ (মিশকাত)

মাহে রমজানের প্রতিটি মুহূর্ত বিরাট কল্যাণ, রহমত ও বরকতের বাহক। তাই মহান আল্লাহ্‌র দরবারে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনার মাধ্যমে নিজের দুই হাত অবশ্যই সম্প্রসারণ করা উচিত। ইফতারের আগে, সেহিরর আগে ও পরে, তাহাজ্জুদ নামাজ সমাপনান্তে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি তা কবুল করেন। সাধারণ সময় ছাড়াও এ সময়গুলোতে বেশি বেশি করে দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, তওবা, ইস্তেগফার, দরুদ শরিফ, তাসবিহ, তাহলিল প্রভৃতি জিকরের মাধ্যমে দিন অতিক্রম করা অত্যন্ত জরুরি। নবী করিম [সা.] বলেছেন, ‘প্রতিটি জিনিসের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র আছে আর অন্তরের মরিচা পরিষ্কার করার যন্ত্র হলো আল্লাহর জিকর।’ (বায়হাকি)

আল্লাহ্‌র কাছে এমনভাবে দোয়া করতে হবে যেন নিজেদের মন ও হৃদয় পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়। সর্বোপরি মুসলমানেরা যেন সুস্থ থেকে পবিত্র রমজান মাসের রোজাগুলো সঠিকভাবে পালন করতে পারে সে জন্য সব সময় খোদার কাছে এভাবে দোয়া ও ইস্তেগফার করতে হবে, ‘হে আল্লাহ! তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে তুমি পছন্দও করো, অতএব আমাকে ক্ষমা করো।’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বাণী প্রদান করেছেন, ‘রোজাদারের নিদ্রা ইবাদততুল্য, চুপ থাকা তাসবিহ-তাহলিলতুল্য, আমল ইবাদত সওয়াব হাসিলে বেশি অগ্রগণ্য, দোয়া কবুলযোগ্য ও তার গুনাহ ক্ষমার যোগ্য।’ (বায়হাকি)

আল্লাহর জিকর মানবজীবনে অমূল্য সম্পদ। যে রোজাদার ব্যক্তি আল্লাহর জিকর করেন, আল্লাহ তার ওপর অত্যন্ত সন্তুষ্ট হন এবং তিনি আল্লাহর অফুরন্ত রহমত থেকে বঞ্চিত হন না। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘অনন্তর তোমরা আমাকে স্মরণ করো, আমিও তোমাদের স্মরণ করব আর তোমরা আমার শুকরিয়া আদায় করো এবং অকৃতজ্ঞ হয়ো না।’ (সূরা আল বাকারা, আয়াত-১৫২)

নবী করিম (সা.) রমজান মাসে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনা সম্পর্কে বলেছেন, ‘এ মাসে তোমরা চারটি কাজ অধিক পরিমাণে কর, তন্মধ্যে দুটি কাজ এমন, যা দ্বারা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করা যাবে। আর অপর দুটি এমন যা থেকে তোমরা মুখাপেক্ষীহীন হতে পারবে না। প্রথম দুটি হলো: ১. বেশি বেশি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’-এর জিকর করা; ২. আল্লাহর কাছে মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যে দুটি কাজ না করে আমাদের কোনো উপায় নেই তা হলো: ১. জান্নাত চাওয়া, ২. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া।

রমজান মাসের রাতে নামাজে দাঁড়িয়ে পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করা, আত্মসমালোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা প্রভৃতি ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকার চেষ্টা করা উচিত। এটা তাকওয়া অর্জনের জন্য অত্যন্ত জরুরি। মাহে রমজান মানুষের সামনে এমন একটা সুবর্ণ সময় যে, খোদা তাআলা রোজাদারদের গুনাহ থেকে মুক্ত হয়ে নতুন জীবন লাভ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন। সিয়াম সাধনার মাধ্যমে আত্মসমালোচনা ও আত্মোপলব্ধিতে মানুষ যখন পৌঁছাতে সক্ষম হয়, তখন মহান প্রভু তার দোয়া কবুল করেন ও গুনাহ মাফ করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা (মাহে রমজানে) দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে আসেন এবং ডেকে বলেন, ‘ কে আছে এমন যে আমার কাছে নিজের গুনাহ মাফ চাইবে আর আমি মাফ করে দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম)

রোজাদার দিনে রোজা রেখে রাত জেগে জিকর-আজকার, পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত ও তাহাজ্জুদ নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করার কারণে রোজাদারের দোয়া কবুল হয়। রোজার মাধ্যমে রোজাদার নিজেকে পুরস্কার, সম্মান, দয়া, অনুগ্রহসহ আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতের উপযুক্ত করে তোলেন। একপর্যায়ে রোজাদার খোদার প্রিয় বান্দা হিসেবে গণ্য হন। আর তাই রোজাদার মাহে রমজানে দোয়া ও ইস্তেগফার করে আল্লাহর কাছে যা চান, তিনি তার সে প্রার্থনা কবুল করেন। হাদিসে কুদসিতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘রোজা শুধু আমারই জন্য এবং আমি নিজেই এর প্রতিদান দেব।’ (বুখারি ও মুসলিম) পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘আর যখন আমার বান্দারা আমার সম্পর্কে তোমাকে জিজ্ঞাসা করে (তাদের জানিয়ে দাও) নিশ্চয়ই আমি তাদের কাছেই আছি। আহ্বানকারী (প্রার্থনাকারী) যখন আমাকে আহ্বান করে (দোয়া করে) আমি তার আহ্বানে সাড়া দিই (দোয়া কবুল করি)। সুতরাং তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার ওপর ঈমান আনুক, যাতে তারা ঠিক পথে চলতে পারে।’ (সূরা আল-বাকারা, আয়াত-১৮৬)

রোজাদারদের ওপর যেন সর্বদা আল্লাহর রহমত বর্ষিত হতে থাকে সে জন্য দোয়া ও মোনাজাত করা দরকার। অপরাধী যখন অনুশোচনায় সিক্ত হয়, অন্যায় ও অপরাধকর্ম থেকে বিরত হওয়ার প্রতিশ্রুতিতে যখন আল্লাহর দরবারে হাজির হয়, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তিন ধরনের লোকের দোয়া কখনো ফেরত দেওয়া হয় না। ইফতারের সময় রোজাদারের দোয়া, জালেমের বিরুদ্ধে মজলুমের দোয়া, বাড়িতে ফিরে না আসা পর্যন্ত মুসাফিরের দোয়া।’ (তিরমিজি)

আল্লাহর দরবারে রোজাদারের মর্যাদা অনেক বেশি। কিয়ামতের দিনও রোজাদারকে সাদরে গ্রহণ করা হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘জান্নাতের একটি দরজা আছে, যার নাম “রাইয়্যান”, কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে একমাত্র রোজাদার প্রবেশ করবে। অন্য কারও এ দরজা দিয়ে প্রবেশাধিকার থাকবে না। আল্লাহর পক্ষ থেকে ডাকা হবে রোজাদারগণ কোথায়? তখন তারা দাঁড়িয়ে যাবেন। আর সবাই ওই দরজা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করবেন। তাদের প্রবেশের পর দরজাটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। আর কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম)

সুতরাং রমজান মাসের বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিবস ও রজনীগুলোর সঙ্গে সঙ্গে সর্বদা আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর জিকর, দোয়া, ইস্তেগফার ও ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকতে হবে।

(দ্য রিপোর্ট/একেএমএম/ মে ২২,২০১৯)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ধর্ম এর সর্বশেষ খবর

ধর্ম - এর সব খবর