রাজধানীতে ঢিলেঢালা হরতাল

দিরিপোর্ট২৪ প্রতিবেদক : বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ডাকা ৮৪ ঘণ্টার হরতালের প্রথমদিন রবিবার রাজধানীতে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে। হরতালে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে ককটেল বিস্ফোরণ, পুলিশের রাবার বুলেটে আহত ও বাসে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। হরতালকে কেন্দ্র করে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে ও রাজধানীবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক রয়েছেন। পাশাপাশি বিজিবির সদস্যরাও রবিবার সকাল থেকে টহল দিচ্ছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (সদর) উপকমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, হরতালে নাশকতা ঠেকাতে রাজধানীজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সকাল থকেই রাজধানীর প্রতিটি মোড়ে সতর্ক অবস্থায় আছে পুলিশ ও র‌্যাব। রাতের অন্ধকারে যেকোনো ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে রাজধানীসহ কয়েকটি জেলায় বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। রাজধানীতে সন্ধ্যা ৭টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ২০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

পুলিশের তথ্য অনুসারে, হরতালের শুরতে রবিবার সকালে রাজধানীর মিরপুর বাঙলা কলেজ, মহাখালীসহ বিভিন্ন স্থানে হরতাল সমর্থকরা মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানেও মিছিল, পিকেটিং, ভাঙচুর, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

সরজমিনে দেখা গেছে, হরতালের মধ্যে রাজধানীর সড়কগুলোতে রিকশা ও অটোরিকশা চলাচল করলেও গণপরিবহন ও ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা কম। গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। তবে ট্রেনচলাচল স্বাভাবিক বলে জানিয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ। হরতালের শুরুতে মিরপুর মাজার রোডে জুবায়ের পরিবহনের একটি বাসে আগুন দেয় হরতালকারীরা।

ফায়ার ব্রিগেড নিয়ন্ত্রণ কক্ষের কর্মকর্তা মো. ফরহাদুজ্জামান বলেন, কয়েকজন যুবক রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখা বাসটিতে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট আগুন নেভায়। বাসে আগুন দেওয়ার সময় দুটি ককটেল ফাটানো হয় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

লালবাগ : সকাল পৌনে ৭টার দিকে আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা মিছিল বের করে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া দিয়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। লালবাগের ওসি নূরুল মুত্তাকিন বলেন, শিবিরকর্মীরা আজিমপুর ছাপড়া মসজিদের পাশে দুটি হাতবোমা ফাটায়। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে আরও দুটি হাতবোমা উদ্ধার করেছে। এ সময় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কয়েকজনকে আটক করলেও ওসি তাদের পরিচয় জানাতে পারেননি।

মহাখালী : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মহাখালীর মেট্রোপলিটন হাসপাতালের সামনে স্বেচ্ছাসেবক দল মিছিল বের করে। সেখানেও দুটি ককটেল ফাটানো হয়। এ ছাড়াও সকাল পৌনে ৭টায় শিবিরের তিতুমীর কলেজ শাখা মিছিলটি বের করে। এ সময় তারা ৫টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। একপর্যায়ে পুলিশ বাধা দিলে সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশ শিবিরকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে কলেজ সভাপতি নিজাম উদ্দিনসহ পাঁচজন আহত হন বলে জানিয়েছেন বনানী থানার ওসি ভূঁইয়া মাহবুব।

মিরপুর : সকাল সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজের কাছে দায়িত্বপালন করছিলেন চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের ক্যামেরাপারসন আনিসুর রহমান। এ সময় ছাত্রদলের কর্মীরা ওই এলাকায় হরতালের সমর্থনে মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে তারা দুটি হাতবোমা ফাটায় এবং একটি পেট্রল বোমা ছোড়ে। ওই পেট্রল বোমায় ক্যামেরাপারসন আনিসুরের হাতের কিছু অংশ পুড়ে যায় বলে জানিয়েছেন আহত রওনক। তাকে স্থানীয় একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

মোহাম্মদপুর : সকাল ৮টার দিকে মোহাম্মদপুরের গ্লাস ফ্যাক্টরি মোড়ে ছাত্রশিবির কর্মীরা পিকেটিং করছিল। ওই সময় একটি মোটরসাইকেলযোগে দুই র‌্যাব সদস্য যাচ্ছিলেন। তাদের লক্ষ্য করে শিবিরকর্মীরা একটি ককটেল নিক্ষেপ করে। এতে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার পরপরই শিবিরকর্মীরা পালিয়ে যায়। খবর পেয়ে র‌্যাবের অতিরিক্ত সদস্য এসে সেখানে ব্যাপক তল্লশি চালায়। তবে কাউকে আটক করতে পারেনি।

রামপুরা : সকাল ৭টার দিকে রামপুরার হাজীপাড়ায় মিছিল করে ছাত্রশিবির মহানগর পূর্ব শাখা। এ সময় তারা রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ সৃষ্টি করে রাখে। পরে পুলিশ এলে তারা পালিয়ে যায়।

হরতালের আওতামুক্ত : সংবাদপত্রের গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি ওষুধ সরবরাহে নিয়োজিত গাড়ি ও সিটি করপোরেশনের আবর্জনাবাহী গাড়ি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়।

উল্লেখ্য, গত শুক্রবার বিকালে ১৮ দলের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তৃতীয় দফায় ১০, ১১ ও ১২ নভেম্বর টানা ৭২ ঘণ্টার হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন। শুক্রবার রাতে বিএনপির শীর্ষ ৫ নেতার মুক্তি ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ১২ ঘণ্টা বাড়িয়ে ৮৪ ঘণ্টার হরতালের ডাক দেওয়া হয়।

(দিরিপোর্ট২৪/কেজেএন/এএস/নভেম্বর ১০, ২০১৩)