thereport24.com
ঢাকা, বুধবার, ১৫ মে 24, ৩১ চৈত্র ১৪৩১,  ৭ জিলকদ  1445

ধেয়ে আসছে বন্যা, সতর্ক প্রশাসন

২০২০ জুলাই ০৫ ২০:২৪:৪৪
ধেয়ে আসছে বন্যা, সতর্ক প্রশাসন

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: দেশে করোনা মহামারির পাশাপাশি ধেয়ে আসছে বন্যা। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে বন্যা কবলিত জেলা প্রশাসন। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে বন্যা কবলিত জেলার মানুষের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন।

ইতোমধ্যে বন্যা কবলিত জেলাগুলোয় সাধারণ মানুষের জন্য ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হচ্ছে। পাঠানো হয়েছে শুকনো খাবারসহ শিশুখাদ্য। ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বিভিন্ন খামারে বড়ে ওঠা গবাদিপশুর যাতে কোনও ক্ষতি না হয়, সেদিকে নজর রাখাসহ কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খামারে বা কৃষকের গোয়ালে পালিত পশুগুলোকে এই মুহূর্তে যেকোনও রোগবালাই থেকে মুক্ত রাখতে ব্যবস্থা গ্রহণেরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এদিকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মুহূর্তে দেশের ১৫টি জেলা বন্যা কবলিত। এসব জেলার ওপর দিয়ে বহমান নদ-নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে জেলায় বসবাসকারী মানুষের ঘরবাড়িতে পানি উঠে গেছে। তলিয়ে গেছে ফসলি জমি ও মাছের ঘের। জেলাগুলো হচ্ছে, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট, নীলফামারী, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, রাজবাড়ী, মানিকগঞ্জ, ঢাকা, ফরিদপুর, মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর ও মাদারীপুর।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, দেশের ১১টি নদীর পানি ১৫টি পয়েন্টে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে দেশের উত্তর-পূর্বাংশের কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলা বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পয়েন্টগুলো হচ্ছে ধরলা নদীর কুড়িগ্রাম পয়েন্ট, ঘাগট নদীর গাইবান্ধা পয়েন্ট, ব্রহ্মপুত্র নদীর নুনখাওয়া ও চিলমারী পয়েন্ট, যমুনা নদীর ফুলছড়ি, বাহাদুরাবাদ, সারিয়াকান্দি, কাজীপুর, সিরাজগঞ্জ পয়েন্ট, আত্রাই নদীর বাঘাবাড়ি পয়েন্ট, ধলেশ্বরীর এলাসিন, পদ্মার গোয়ালন্দ, সুরমার কানাইঘাট ও সুনামগঞ্জ পয়েন্ট এবং পুরাতন সুরমার দিরাই এলাকা। বন্যা পরিস্থিতি মনিটরিং করতে কন্ট্রোল রুম চালু করেছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ১০১ পর্যবেক্ষণাধীন পানি স্টেশনের মধ্যে ১৭টিতে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর ৬১টি স্টেশনের পানি বাড়ছে, কমছে ৩৯টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে একটির। ধরলার কুড়িগ্রাম পয়েন্টে বিপদসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে ১৮, ঘাগটের গাইবান্ধা পয়েন্টে ২৭, ব্রহ্মপুত্রের নুনখাওয়া পয়েন্টে ২৪, ব্রহ্মপুত্রের চিলমারী পয়েন্টে ২৯, যমুনার ফুলছড়ি পয়েন্টে ৫৬, যমুনার বাহাদুরাবাদ পয়েন্টে ৫৯, যমুনার সারিয়াকান্দি পয়েন্টে ৫১, যমুনার কাজিপুর পয়েন্টে ৫৫, যমুনার সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৩৫, যমুনার আরিচা পয়েন্টে ১০, বাঘাবাড়ির আত্রাই পয়েন্টে ৪৯, ধলেশ্বরীর এলাসিন পয়েন্টে ৪৬, পদ্মার গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৪৬, পদ্মার ভাগ্যকূল পয়েন্টে ২০, পদ্মার মাওয়া পয়েন্টে ১১ এবং পুরাতন সুরমার দিরাই পয়েন্টে বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

বন্যা পরিস্থিতির পর্যবেক্ষণে কন্ট্রোল রুম চালুর বিষয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা আসিফ আহমেদ জানান, বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তথ্য সংগ্রহে কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুমের নম্বর হচ্ছে ০১৩১৮-২৩৪৫৬০।

এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, এখন যে পরিস্থিতি আছে তা আগামী ৪-৫ দিন প্রায় একই রকম থাকবে। এরপর আবার বৃষ্টি শুরু হলে পানি বাড়তে পারে। এতে দেশের উত্তর-পূর্ব ও মধ্যাংশের যেসব এলাকা এখন প্লাবিত, সেখানে পানির উচ্চতা বাড়বে এবং নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়বে। তিনি আরও বলেন, তবে আগামী সপ্তাহে নতুন এলাকা আবার প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, আগামী ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর আরিচা এবং ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর ভাগ্যকূল পয়েন্টে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে।

জানতে চাইলে নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান খান ও গাইবান্ধার জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মতিন জানিয়েছেন, আমরা সার্বক্ষণিক উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পর্যন্ত বন্যা কবলিত সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা এতে সহায়তা করছেন। সরকারের মানবিক সহায়তা বাবদ ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত বন্যায় কেউ প্রাণ হারায়নি, তবে নদ-নদীর পানি বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সামর্থ্য নিয়ে প্রস্তুত রয়েছি বলে জানিয়েছেন উভয় জেলা প্রশাসক।

এদিকে সরকারের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, বন্যা কবলিত জেলার জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসকরাও উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। তিনি বলেন, একদিকে করোনার ছোবল, অন্যদিকে বন্যা। রাস্তাঘাট ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্নাঞ্চলের বন্যাদুর্গত মানুষরা। বন্যা কবলিত জেলা অভিমুখে প্রধানমন্ত্রীর উপহার নিয়ে দ্রুতগতিতে ছুটছে ত্রাণবাহী ট্রাক। ডা. এনাম বলেন, বন্যার্তদের ত্রাণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর নিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নির্দেশেই আমরা সবাই মাঠে আছি। বন্যার্তদের ভয়ের কিছু নেই।

এদিকে প্রতিদিনই বন্যা কবলিত জেলাগুলোর জন্য সরকারের ত্রাণ সহায়তা বাবদ চাল, গম ছাড় করা হচ্ছে। ছাড় করা হচ্ছে নগদ টাকা, শুকনো খাবার ও শিশুখাদ্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে, শনিবার (৪ জুলাই) পর্যন্ত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যেমন- বন্যা, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প, অগ্নিকাণ্ড ইত্যাদি কারণে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের ৬৪ জেলার মানুষের জন্য মানবিক সহায়তা বাবদ ১০ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন চাল, এক কোটি ৭৩ লাখ নগদ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এর বাইরে রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, নীলফামারী, লালমনিরহাট, সিলেট, সুনামগঞ্জ, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, জামালপুর, টাঙ্গাইল ও মাদারীপুর—বন্যা কবলিত এই ১২ জেলায় ২৪ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার সরবরাহ করা হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/০৫জুলাই, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর