thereport24.com
ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ৯ মে 24, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১,  ১ জিলকদ  1445

ছয়মাস পর্যন্ত কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না ডেঙ্গু রোগীরা

২০১৯ আগস্ট ২০ ১০:১৩:১৪
ছয়মাস পর্যন্ত কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না ডেঙ্গু রোগীরা

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক: ডেঙ্গু রোগীরা সুস্থ হওয়ার পরবর্তী ছয়মাস কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগীকে সুস্থ হওয়ার পর আরও দশদিন মশারির ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

গণমাধ্যমে কর্মরত ২৯ বছর বয়সী সাফায়েত আহমেদের প্রথম জ্বর হয় গত ২৫ জুলাই।এই সময় দুই দিন বাসায় ছিলেন। ওই সময়ের মধ্যে তিনি কেবল নাপা ট্যাবলেট খেয়েছেন। এরপর শনিবারে ডেঙ্গু টেস্ট করালে তার এনএস-ওয়ান পজিটিভ আসে। সেদিন প্লাটিলেট ছিল এক লাখ ৫০ হাজার। তাকে আরও একদিন অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন চিকিৎসক। পরের দিন টেস্টে দেখা যায় প্লাটিলেটের পরিমাণ এক লাখ ৪০ হাজার। এরপর দিন আবারও টেস্ট করান তিনি। ওই দিন প্লাটিলেট নেমে আসে ৬০ হাজারে। ওই দিনই চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় পরের দিন আবার টেস্ট করালে তার প্লাটিলেট আসে ২০ হাজার, এরপরের দিন ১২ হাজারে নেমে আসে। সাফায়েত টানা ছয়দিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরেন। তবে, চিকিৎসকরা তাকে বাসায় প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। সঙ্গে বিশ্রামেরও পরামর্শ দেন তাকে।

চিকিৎসা নিয়ে ফেরার পরও সাফায়েত এখনও শারীরিকভাবে প্রচণ্ড দুর্বলতা অনুভব করছেন। বন্ধু মহলে তিনি রক্তদাতা হিসেবে পরিচিত। রক্ত লাগবে এমন মানুষের বিপদে সাফায়েত নিজে হাজির হন।

কয়েকদিন আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত এক শিশুর রক্ত প্রয়োজন হলেও ওই তথ্যও ফেসবুকের মাধ্যমে তার নজরে আসে। কিন্ত এবার সাফায়েত আর রক্ত দিতে যেতে পারেননি।

এদিকে, গণমাধ্যমকর্মী গোলাম মওলা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন গত ১৬ জুলাই। এরপর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন এক সপ্তাহ। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি ১৫ দিন বিশ্রাম নেন। চিকিৎসক তাকে প্রচুর তরল খাওয়ার পাশাপাশি সতর্কতার সঙ্গে চলাফেরার পরামর্শও দিয়েছেন।

জানতে চাইলে গোলাম মওলা বলেন, ‘আমি সুস্থ হওয়ার পর একজন রোগীর এ পজিটিভ রক্তের প্রয়োজন হয়। বিষয়টি জেনেও তাকে রক্ত দিতে পারছি না, এটা দুর্ভাগ্য।’

চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু রোগীর শরীরে সাত থেকে দশদিনের মতো এর জীবাণু থাকতে পারে। এই দশ দিনের মধ্যেই ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনও ব্যক্তি কোনও এডিসি মশা কামড় দেওয়ার পর কোনও সুস্থ মানুষকে ফের কামড় দিলেও তিনিও ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হবেন। তাই ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হওয়ার পর তিনিসহ তার পরিবারের সদস্যদের নিরাপদ রাখতে সতর্ক থাকতে হবে। এছাড়া, ডেঙ্গু রোগী সুস্থ হওয়ার পরও পরবর্তী ছয়মাসের ভেতরে কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না। কারণ ছয়মাস পর্যন্ত ওই ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গুর জীবাণু থাকতে পারে। তাই কাউকে রক্ত দিলে তার মাধ্যমে ডেঙ্গু ছড়ানোর আশঙ্কা আছে।

প্রসঙ্গত, এডিস মশার কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে মূলত এডিস এজিপটি প্রজাতির মশাই ডেঙ্গুর ভাইরাস-বাহক হিসেবে কাজ করে।

এই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসাতালের ভাইরোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাহিদুর রহমান, ‘একজন ডেঙ্গু রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে তার শরীরের ভাইরাসের মাধ্যমে আরেকজন আক্রান্ত হতে পারে, এজন্য তাকে মশারীর ভেতরে থাকতে হবে সপ্তাহখানেক। আবার জ্বর হয়তো কমে গেছে কিন্তু হঠাৎ করেই প্লাটিলেট কমে গিয়ে তার অবস্থা খারাপ হতে পারে। এসব কারণে তাকে সতর্ক থাকতে হবে প্রায় দশদিন। তবে, এটি একটি ভাইরাস জ্বর। তাই রোগী বেশ কয়েকদিন দুর্বল থাকবেন। এজন্য তাকে অন্তত দশদিন অন্যান্য খাবারের সঙ্গে তরল খাবার গ্রহণ করতে হবে।’

ডা. জাহিদুর রহমান আরও বলেন, ‘এখন ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষের রক্তের প্রয়োজন হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই রক্তদানে আগ্রহীরা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াবেন। কিন্তু কোনও ডেঙ্গু আক্রান্ত ব্যক্তির অন্তত ছয়মাস আরেকজনকে রক্ত দিতে পারবেন না।’

বিষয়টি নিয়ে রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, ‘এডিস মশা কামড়ানোর পর সাধারণত ৩ থেকে ১০ দিনের ভেতরে জ্বর আসে। জ্বর নামার তিন দিনের মাথায় অনেক সময় জ্বর ভালো হয় যায়। পঞ্চম বা ষষ্ঠদিনে আবার ফেরতে আসতে পারে, জ্বর নেমে যাওয়ার পরের সময়টা মূলত জটিল সময়। এ সময় শকে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এতে প্লাটিলেটও কমতে থাকে। জ্বর আসার আগের দিন থেকে সপ্তম দিন পর্যন্ত মানুষের রক্তে ডেঙ্গুর ভাইরাস সক্রিয় থাকে। এই সময় তাকে এডিস মশা কামড়ালে সেই মশা জীবাণু বহনে সক্ষম হবে। তাই জ্বর আসার পর সাতদিনের সঙ্গে আরও তিন দিন মশারির ভেতরে তাকে থাকতে হবে।’

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল আরও বলেন, ‘মানুষ থেকে মানুষে রক্তদানের মাধ্যমেও ডেঙ্গু ছড়াতে পারে। তাই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ার ছয়মাস পর পর্যন্ত কাউকে রক্ত দিতে পারবেন না।’ তিনি আরও বলেন, ‘জ্বরের সপ্তম দিনের পর থেকে রক্তচাপ স্বাভাবিক হয়ে এলে অতিরিক্ত তরল খাবারের প্রয়োজন হয় না। তবে সাধারণ ক্ষেত্রে দিনে দুই লিটার পানি পান করতে হবে।’ তবে, বিশেষ কোনও জটিলতা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে বলেও তিনি জানান।

(দ্য রিপোর্ট/আরজেড/আগস্ট ২০, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

জাতীয় এর সর্বশেষ খবর

জাতীয় - এর সব খবর