thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৯ মে 24, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ১১ জিলকদ  1445

উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে ভোট শুরু

২০১৪ জানুয়ারি ০৫ ০৮:২৮:৩৭
উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কে ভোট শুরু

মাহফুজ স্বপন, দ্য রিপোর্ট : উৎকণ্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। সারাদেশে রবিবার সকাল ৮টা থেকে ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। টানা ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে এ ভোট গ্রহণ ঠেকাতে সকাল সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে ১৮ দলীয় বিরোধী জোট।

এ দিকে ভোট গ্রহণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠে কাজ করছে এক লাখ ২০৮ জন পুলিশ, ৫০ হাজার সেনাবাহিনী, ৩০ হাজার র‌্যাব ও ২লাখ ২০ হাজার আনসার। তবে এ নিরাপত্তার মধ্যেও ভোটের আগের দিন শনিবার রাতে ঠাকুরগাঁয়ের প্রিজাইডিং কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।

জানা গেছে, বিরোধী দলবিহীন এ নির্বাচনে ইতোমধ্যে ১৫৩ জন প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিগত দিনের ৯টি সংসদ নির্বাচনে এমন ঘটনার নজির নেই। এত কম সংখ্যক রাজনৈতিক দলও নির্বচনে অংশ নেয়নি। এ বার মাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্তাধীন ১২টি রাজনৈতিক দল অংশ নিচ্ছে। এ বার ভোট হচ্ছে ১৪৭ আসনে। এতে প্রার্থী রয়েছেন মাত্র ৩৯০ জন। এ নির্বাচনে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রায় ৫ কোটি ভোটার।

ইসি সূত্র জানায়, এ বারের বিরোধী দলবিহীন নির্বাচনের ৫৯ জেলার প্রায় ১৮ হাজার ২০৮ ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ৭৫ ভাগ ভোটকেন্দ্রই ঝুকিপূর্ণ। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই এ সংখ্যা নির্ধারণ করেছে ইসি।

রবিবারের ভোট নির্বাচন নিয়ে কমিশনের কর্মকর্তরা আশঙ্কা করছেন, ৯৬ সালের আলোচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের চেয়েও এ বারে ভোটার উপস্থিতি কম হতে পারে। ওই নির্বাচনে ২৬ শতাংশ ভোট পড়েছিল।

দশম সংসদ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ থাকলেও পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, প্রতিদ্বন্দ্বিতা না থাকায় ভোটে নির্বাচনী আমেজ থাকবে না।

অন্যদিকে নির্বাচনে ভোটের হার বাড়াতে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে উদ্বুদ্ধ করতে তথ্যমন্ত্রণালয়ও কর্মসূচি নিয়েছে। অংশগ্রহণকারী দলগুলোও কেন্দ্রে যেতে আহ্বান জানাচ্ছে। তবে এ বার প্রার্থীদের পক্ষ থেকে বাড়ি বাড়ি ভোটার স্লিপ দেয়নি কোনো প্রার্র্থী।

নির্বাচনে দল, প্রার্থী ও ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা : রবিবারের ভোটের আগেই ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩ আসনের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ নিশ্চিত করেছেন। এতে ওই আসনগুলোর ৪ কোটি ৮০ লাখেরও বেশি ভোটার এই ভোটে অংশ নিচ্ছে না। ভোটে ১৪৭ আসনের মোট ৪ কোটি ৩৯ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৮ ভোটার ভোট দেওয়ার কথা। এই আসনগুলোতে মোট ভোটকেন্দ্র রয়েছে ১৮ হাজার ২০৯টি। এতে ৯১ হাজার ২১৩ ভোট কক্ষ রয়েছে।

এর আগে ১৯৯৬ সালের বহুল আলোচিত ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে বিএনপিসহ ৪১টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়। ভোট পড়ে মাত্র ২৬ শতাংশ। এর মধ্যে বিএনপি পেয়েছিল ৭৭ শতাংশ।

ভোটারদের কেন্দ্রে নিয়ে আসতে তৎপরতা : ইসি কর্মকর্তারা জানান, তথ্যমন্ত্রণালয় সব মোবাইল ফোন অপারেটরের গ্রাহকদের কাছে ভোটে অংশ নিতে এসএমএস দেওয়া হয়েছে। বার্তাগুলো হচ্ছে- ‘ভোট গণতান্ত্রিক অধিকার, নির্বাচনে ভোট দিয়ে আপনার অধিকার প্রতিষ্ঠা করুণ’। ‘শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ বজায় রাখুন’। ‘নির্বাচনে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে, নির্ভয়ে, নির্বিঘে ভোট দিতে কেন্দ্রে যাবেন’ বরাবরের মতো এ বারও ভোটের আগের দিন বিশেষ নম্বরে এসএমএস করে কেন্দ্র ও ভোটার নম্বর জানানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এর আগের নির্বাচনগুলোর ভোটের হার : নবম সংসদে রেকর্ড সংখ্যক সর্বমোট ৮৭ শতাংশ ভোট পড়ে। ২০০৮ সালের নবম সংসদে ৩৮টি নিবন্ধিত দল অংশ নেয়। বিরোধী দল বিএনপি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩২ শতাংশ ভোট পায়। আওয়ামী লীগ পায় ৪৭ শতাংশ। সর্বশেষ গত অক্টোবরে বরগুনা-২ উপ-নির্বাচনে ৫১ শতাংশ ভোট পড়েছিল। এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অংশ নিয়েছিল। নবম সংসদ নির্বাচনে ৮৭ শতাংশ ভোট পড়লেও পরে উপ নির্বাচনে ৩৪-৭৩ শতাংশ ভোটের নজিরও রয়েছে।

অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ৫৪টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল। সে নির্বাচনে ভোট পড়ে ৭৫ শতাংশ। ৮১টি রাজনৈতিক দলের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ৭৫ শতাংশ ভোট পড়ে। ৫৫ শতাংশ ভোট পড়ে পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে। এতে ৭৫টি দল অংশ নেয়। ১৯৮৮ সালের চতুর্থ সংসদ নির্বাচনে ৮টি দলের নির্বাচনে ভোট পড়েছিল ৫৫ শতাংশ। তৃতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৮টি দল অংশ নিয়েছিল। তাতে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। ২৯টি দল অংশ নিলে দ্বিতীয় সংসদ নির্বাচনে। ভোট পড়েছিল ৫১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালের প্রথম সংসদ নির্বাচনে ১৪টি দল অংশ নিয়েছিল। তাতে ভোট পড়ে ৫৪ শতাংশ। দেশের প্রথম নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১১ সংসদ সদস্য বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মত নির্বাচন বাতিল হয় ২০০৬ সালের ২২ জানুয়ারি।

যানচলাচল বন্ধ : ভোটের আগের দিন শনিবার রাত ১২টা থেকে রবিবার ভোটের দিন রাত ১২টা পর্যন্ত ৫৯ জেলায় সব ধরণের যান চলাচল বন্ধ থাকবে। মটরসাইকেল ক্ষেত্রে সামনের ৭ জানুয়ারি মধ্যরাত পর্যন্ত চলাচল বন্ধ থাকবে।

বিশেষ মনিটরিং সেল : নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১ জানুয়ারি থেকেই কাজ শুরু করেছে বিশেষ মনিটরিং সেল। প্রাপ্ত পরিস্থিতি তাৎক্ষণিকভাবে কমিশনকে অবহিত করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বিচারবিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে প্রতিটি এলাকায় ভিজিল্যন্সটিম ও অবজারবেশন টিম কাজ করছে। একই সঙ্গে এ সব এলাকায় সকল ধরণের বৈধ অস্ত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষক : নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইলেকশন ওয়ার্কিং গ্রুপের ২৯টিসহ ৪৪টি দেশী সংস্থা নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করবেন। তবে এখন পর্যন্ত বিদেশি কোনো পর্যবেক্ষক সংস্থা পর্যবেক্ষণের সম্মতি জানায়নি।

ফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘোষণা : রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ফল পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংগ্রহ ও পরিবেশন করা হবে। পাশপাশি কমিশন সচিবালয়ে ফলাফল সংগ্রহের জন্য ১১টি তথ্য সংগ্রহ সেল রয়েছে।

তিন স্তরের নিরাপত্তায় সাড়ে চার লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন : নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে ইসি। ভোটের মাঠে রয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য। নির্বাচন পরিচালনা কর্মকর্তার বাইরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, অঙ্গীভূত আনসার/ভিডিপি, আনসার ব্যাটালিয়ান ও এপিবিএন সদস্যরা মাঠে সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। একই সঙ্গে গ্রাম্য পুলিশ, চোকিদার ও তদফাদারও নয়োজিত রয়েছে। পাশপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচ/এআইএম/জানুয়ারি ০৫, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

ভোটের খবর এর সর্বশেষ খবর

ভোটের খবর - এর সব খবর