thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে 24, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৮ শাওয়াল 1445

আজ যেসব জেলা হানাদার মুক্ত হয়

২০১৬ ডিসেম্বর ০৬ ১০:৩৫:৪৬
আজ যেসব জেলা হানাদার মুক্ত হয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আজ ৬ ডিসেম্বর বেশ কয়েকটি জেলা হানাদার মুক্ত হয়। জেলাগুলো হলো ফেনী, হবিগঞ্জ, লালমনিরহাট ও ঝিনাইদহ। ১৯৭১ সালের এ দিনে মুক্তিযোদ্ধারা পাক-হানাদার বাহিনীকে হটিয়ে জেলা শত্রুমুক্ত করেন। দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন।

ফেনী

আজ ৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস। এই বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসরদের হটিয়ে ফেনীকে স্বাধীন করেন। ফেনী মুক্ত দিবস উপলক্ষে ৬ ডিসেম্বর জেলা শহরের রাজপথে হবে এক হাজার মিটার দৈর্ঘ্যের জাতীয় পতাকা র‌্যালি। ‘উড়াই বিজয় নিশান’ এ স্লোগানকে সামনে রেখে ফেনী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মঙ্গলবার বেলা ১১টার এ র‌্যালিটিতে নেতৃত্ব দেবেন মুক্তিযুদ্ধের ২নং সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার, ১০ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাতা সিও লে. কর্নেল (অব.) জাফর ইমাম বীর বিক্রম। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন চৌধুরী নাসিম, ফেনী-১ আসনের সংসদ সদস্য শিরিন আখতার এবং ফেনী ২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ মুক্তিযোদ্ধা, জেলা প্রশাসন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীসহ জেলার সর্বস্থরের মানুষ অংশ নেবেন। পতাকা হাতে উঠবে বিজয় নিশান।

এ ছাড়াও দিবসটি উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অর্ধশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা দেওয়া হবে বেলা সাড়ে ১১টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে। এ ছাড়াও বিভিন্ন সংগঠন আলোচনা সভা, র‌্যালি এবং নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাক হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীকে হটিয়ে ফেনীকে স্বাধীন করেন। ওই দিন সকাল থেকে সশস্ত্র মুক্তিযোদ্ধারা ক্যাপ্টেন জাফর ইমামের নেতৃত্বে দলে দলে ফেনী শহরে প্রবেশ করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিতে শুরু করেন। ফেনী শহরবাসী ৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর বাহিনীর সশস্ত্র মহড়া দেখেছিল। ফলে সকালে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান শুনে অনেকেই হকচকিত হয়ে ওঠেন এবং অনেকে মুক্তিযোদ্ধাদের এ স্লোগান প্রথম বিশ্বাসই করতে পারেননি। কিন্তু বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই পরিচিত মুক্তিযোদ্ধাদের মিছিলে দেখতে পান। তখন লোকজনের ভুল ভাঙতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সাধারণ মানুষ মিছিলে যোগ দিতে শুরু করে।৬ ডিসেম্বর ফেনী মুক্ত দিবস উপলক্ষে প্রতিবছরই জেলা
প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে।

হবিগঞ্জ

আজ ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক বাহিনীর কবল থেকে হবিগঞ্জ জেলা মুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের উপ-সর্বাধিনায়ক মেজর জেনারেল এম এ রব (বীর উত্তম) ও মেজর জেনারেল এজাজ আহমেদ চৌধুরীর নির্দেশে ভারতের খোয়াই বাঘাই ক্যাম্পের ২২ কোম্পানির ১নং প্লাটুন কমান্ডার আব্দুস শহীদের নেতৃত্বে ৩৩ মুক্তিযোদ্ধা ৩ ডিসেম্বর হবিগঞ্জের বাহুবলে অবস্থান নেন। এরপর তারা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হবিগঞ্জের বিভিন্ন পাক কাম্পে হামলা চালান। এ সময় বেশ কয়েকজন পাকসেনা প্রাণ হারান। একটানা ৩ দিনের অভিযানের পর ৬ ডিসেম্বর ভোরে পাক হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। মুক্ত হয় হবিগঞ্জ।

এদিন কমান্ডার (অবসরপ্রাপ্ত) সুবেদার আব্দুস সহিদের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ মোস্তাফিজুর রহমান বাচ্চু, শুকুর মিয়া, সিরাজুল ইসলাম, সিরাজ মিয়া, রইছ আলী, আব্দুল কুদ্দুছ, আবু মিয়া, আব্দুল লতিফ, গিয়াস উদ্দিন, কালা মিয়া, ছাবু মিয়াসহ ৩৩ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধার এ দলটি বিজয়ী বেশে হবিগঞ্জ শহরে ঢোকেন। তারা শহর প্রদক্ষিণ করে সদর থানায় বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করেন। একই সঙ্গে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ, লাখাই, চুনারুঘাট ও অন্যান্য উপজেলাও মুক্ত হয়।

হবিগঞ্জ মুক্ত করতে গিয়ে বানিয়াচং উপজেলার মাকালকান্দি, লাখাই উপজেলার কৃষ্ণপুর, চুনারুঘাট উপজেলার লালচান চা বাগান, নালুয়া চা বাগান ও বাহুবল উপজেলার রশিদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে সহস্রাধিক মুক্তিকামী নারী-পুরুষকে প্রাণ দিতে হয়েছে।

জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী পাঠান জানান, হবিগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে ৬ ডিসেম্বর হবিগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট, সদর ও পৌর ইউনিট মুক্তিযুদ্ধের দুর্জয় স্মৃতিসৌধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের নামফলকে পুষ্পমাল্য অর্পণ, আলোচনা সভাসহ অন্যান্য কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

লালমনিরহাট

আজ ৬ ডিসেম্বর লালমনিরহাট পাক হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে লালমনিরহাট জেলা পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে শত্রুমুক্ত হয়। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিগামী মানুষের দুর্বার প্রতিরোধে এ জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাটকে শত্রু মুক্ত করেছিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে সুর্যোদয়ের সাথে সাথে বাংলার বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধারা জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিজয়ের পতাকা উড়িয়েছিলেন।

এই দিনটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য লালমনিরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নিয়েছে।

ঝিনাইদহ

আজ ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদার মুক্ত হয় ঝিনাইদহ। আকাশে ওড়ে লাল-সবুজের স্বাধীন পতাকা। ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডার মকবুল হোসেন জানান, ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঝিনাইদহ দখলের উদ্দেশে এগিয়ে আসতে থাকলে বিষয়খালী ব্রিজের এপার থেকে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের বাধা দেন। প্রায় তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর তারা পিছু হটে যায়। ১৬ এপ্রিল হানাদার বাহিনী আবারো বিষয়খালী বেগবতী নদীর তীরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রবল বাধার মুখে পড়ে। এখানে প্রায় ৬ ঘণ্টা তুমুল যুদ্ধ হয়।

এই যুদ্ধে ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। ব্রিজের পাশেই তাদের গণকবর দেওয়া হয়। এ থেকেই জেলায় ছড়িয়ে পড়ে মুক্তিযুদ্ধ। বিভিন্ন স্থানে পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় মুক্তিযোদ্ধাদের। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য যুদ্ধের মধ্যে ছিল বিষয়খালী যুদ্ধ, গাড়াগঞ্জ যুদ্ধ, শৈলকুপা থানা আক্রমণ, কামান্না, আলফাপুর ও আবাইপুরের যুদ্ধ।

ঝিনাইদহ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সূত্রে জানা গেছে, ১ থেকে ১৬ এপ্রিল বিষয়খালী যুদ্ধে ৩৫ জন, ১৪ অক্টোবর আবাইপুর যুদ্ধে ৪১ জন, ২৬ নভেম্বর কামান্না যুদ্ধে ২৭ জনসহ ঝিনাইদহ জেলায় ২৭৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এদের মধ্যে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে দুই জন। তারা হলেন বীর শ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান ও বীর প্রতীক সিরাজুল ইসলাম।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের অনেককে বিভিন্ন স্থানে গণকবর দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকের নাম ঠিকানা আজও মেলেনি। ৬ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ জেলা শহর শত্রুমুক্ত হয়। এর আগে ৩ ডিসেম্বর মহেশপুর, ৪ ডিসেম্বর কোটচাঁদপুর, ৫ ডিসেম্বর কালীগঞ্জ এবং সর্বশেষ ১১ ডিসেম্বর শৈলকুপা উপজেলা শত্রুমুক্ত হয়।

মুক্তিযুদ্ধকালীন ঝিনাইদহ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেলা কমান্ডার আমির হোসেন মালিতা জানান, মিত্রবাহিনী ঝিনাইদহের হলিধানী বাজারে খবর নিতে আসেন। মিত্র বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন কর্নেল বাহেলে ও লে. কর্নেল পিকে দাস গুপ্ত। ঝিনাইদহের ইউনিট কমান্ডার হিসেবে তিনিসহ ইউনিয়ন কমান্ডার রজব আলী, বাকুয়া গ্রামের মরহুম মনিরুল ইসলাম, নারিকেল বাড়িয়ার বুলু মিয়া, গাবলা গ্রামের মকছেদ আলীসহ অনেকে মিত্র বাহিনীকে স্বাগত জানায়।

৫ ডিসেম্বর বিকালে মুক্তি ও মিত্রবাহিনী ঝিনাইদহ শহরের চারপাশে অবস্থান নেন। গোলাবর্ষণ করতে থাকে পাক সেনা অবস্থানের ওপর। ৬ ডিসেম্বর সকালে পাকসেনারা ঘাঁটি ছেড়ে মাগুরার দিকে পালিয়ে যায়। অনেক পাক সেনা বন্দি হয়। ঝিনাইদহ হানাদার মুক্ত হয়। হাজার হাজার মানুষ ঘর থেকে রাস্তায় নেমে আনন্দ উল্লাস করতে থাকে।

(দ্য রিপোর্ট/এম/ডিসেম্বর ৬, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর