thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে 24, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৮ শাওয়াল 1445

আজ যেসব জেলা হানাদার মুক্ত হয়

২০১৬ ডিসেম্বর ০৭ ১২:০০:৩৪
আজ যেসব জেলা হানাদার মুক্ত হয়

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : আজ ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা, চুয়াডাঙ্গা ও মাগুড়া জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। একাত্তরের এদিনে জেলাগুলোয় মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যায়। দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন :

গাইবান্ধা

আজ ৭ ডিসেম্বর গাইবান্ধা হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াইয়ের পর বিজয়ের আনন্দে ফেটে পড়ে গাইবান্ধার মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষ।

গাইবান্ধার যুদ্ধগুলোর মধ্যে উল্লেযোগ্য যুদ্ধ হলো-বাদিয়াখালীর যুদ্ধ, হরিপুর অপারেশন, কোদালকাটির যুদ্ধ, রসুলপুর স্লুইস আক্রমণ, নান্দিনার যুদ্ধ ও কালাসোনার যুদ্ধ।

’৭১-এর এই দিনে কোম্পানি কমান্ডার বীর প্রতীক মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল ফুলছড়ি উপজেলার ফজলুপুর ইউনিয়নের কালাসোনার চর থেকে বালাসী ঘাট হয়ে গাইবান্ধা শহরে প্রবেশ করে।

এদিকে, তাদের আগমণের সংবাদ পেয়ে আগের রাতেই গাইবান্ধা শহরের স্টেডিয়ামে অবস্থিত পাক সেনা ক্যাম্পের সৈনিকরা তাদের তল্পিতল্পা গুটিয়ে রংপুর ক্যান্টনমেন্টের উদ্দেশে পালিয়ে যায়। ফলে বর্তমান স্বাধীনতা প্রাঙ্গণ ও তৎকালীন এসডিও মাঠে মুক্তিযোদ্ধা জনতার মিলন মেলায় পরিণত হয়।

১৯৭১ এর ১৭ এপ্রিল বিকেলে পাক হানাদার বাহিনী মাদারগঞ্জ ও সাদুল্যাপুর হয়ে গাইবান্ধা প্রবেশ করে। তারা টিএন্ডটির ওয়ারলেস দখল করে। পরবর্তীতে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামে (বর্তমান শাহ আব্দুল হামিদ স্টেডিয়াম) ঘাঁটি করে।

এই ঘাঁটি থেকেই তারা শহর ও জেলার বিভিন্ন স্থানে পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞ, নারী নির্যাতন চালাতে থাকে। তাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে অসংখ্য মানুষ ধরে এনে হত্যা করার পর মাটিতে পুঁতে রাখে। বিভিন্ন রাস্তাঘাটের পাশেও অসংখ্য লাশ সে সময় পুঁতে রাখা হয়। তাই এই স্থানগুলো পরে বধ্যভূমি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।

এর মধ্যে গাইবান্ধা স্টেডিয়ামের দক্ষিণ অংশে এবং স্টেডিয়ামের বাইরে অসংখ্য মানুষ হত্যা করে মাটিচাপা দেয়। প্রতি রাতেই স্টেডিয়ামের পাশে কফিল শাহের গোডাউন নামে পরিচিত প্রাচীরঘেরা এই এলাকায় দালালদের সহায়তায় অসহায় মানুষদের ধরে এনে পাকসেনারা তাদের নৃশংসভাবে হত্যা করত। বিভিন্ন বয়সী মেয়েদের এখানে ধরে এনে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। পার্শ্ববর্তী রেল লাইনের ধারেও গর্ত করে লাশ পুঁতে রাখা হতো লাশ।

দেশের অন্যান্য স্থানের মতো গাইবান্ধাতেও মুক্তিযোদ্ধা এবং পাক সেনাদের লড়াই অব্যাহত থাকে। একপর্যায়ে ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা খবর পায় পাকসেনারা গাইবান্ধা ছেড়ে চলে গেছে। ৬ ডিসেম্বর সকালে ভারতীয় বিমান বাহিনীর দুটি বিমান গাইবান্ধা রেলস্টেশনের পাশে বোমা ফেলে এবং বিকালে ট্যাংক নিয়ে মিত্রবাহিনী প্রবেশ করে শহরে।

অপরদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব এলাহী রঞ্জুর নেতৃত্বে দেড় শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ৭ ডিসেম্বর সকালে বিজয়ীর বেশে হাজার হাজার মানুষের আনন্দ উৎসবের মধ্য দিয়ে শহরে প্রবেশ করে।

হানাদার মুক্ত দিবস উপলক্ষে বুধবার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শহরে‌ র‌্যালি, দোয়া ও আলোচনাসভা।

চুয়াডাঙ্গা

আজ ৭ ডিসেম্বর চুয়াডাঙ্গার জন্য এক স্মরণীয় দিন। বর্তমানে জেলা সদর চুয়াডাঙ্গা ৯ মাসব্যাপী স্বাধীনতাযুদ্ধের পর দখলদার ও হানাদার বাহিনীর দখলমুক্ত হয়। এদিনে চুয়াডাঙ্গা হয় মুক্ত বা স্বাধীন।

ডিসেম্বর মাসের প্রথম থেকেই চুয়াডাঙ্গা মহকুমার সর্বত্র ভারতীয় সীমান্ত সংলগ্ন এলাকাগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ জোরদার হতে থাকে। এরই ফলশ্রুতিতে ৬ ডিসেম্বর পরিস্থিতি হয়ে ওঠে চরম উত্তেজনাকর।

চুয়াডাঙ্গা মহকুমা সদরসহ মহকুমার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত পাক হানাদার বাহিনী ৬ ডিসেম্বর রাত ৮-৯ টার মধ্যেই চুয়াডাঙ্গা ত্যাগ করে । পাক হানাদার বাহিনীর চুয়াডাঙ্গা ছাড়ার এ খবর চুয়াডাঙ্গা মহকুমার বিভিন্ন স্থানে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা খবর পাওয়ার পর তারা ৭ ডিসেম্বর ভোর থেকে চুয়াডাঙ্গা আসতে শুরু করেন এবং এভাবেই চুয়াডাঙ্গা এদিন হয় পূর্ণ হানাদার বাহিনী দখলমুক্ত।

মাগুরা

আজ ৭ ডিসেম্বর মাগুরা মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা ও মিত্রবাহিনীর বিমান হামলায় মাগুরা জেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। এ উপলক্ষে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের আয়োজনে বেলায় ১১টায় নোমানী ময়দান থেকে শহরে একটি র‌্যালি বের করা হয়। সন্ধ্যায় জাগো মাগুরার আয়োজনে চৌরঙ্গী মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে মোমবাতি প্রজ্বালন, আলোচনাসভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মাগুরা মুক্ত দিবস পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

(দ্য রিপোর্ট/এম/ডিসেম্বর ৭, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর