thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে 24, ২৩ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৮ শাওয়াল 1445

সেদিন গণআদালতের রায়ে ১২ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল

২০১৬ ডিসেম্বর ১২ ১৯:১২:২৪
সেদিন গণআদালতের রায়ে ১২ রাজাকারের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছিল

নেত্রকোনা প্রতিনিধি : বাংলাদেশের স্বাধীনতার উষালগ্নে ’৭১ এর মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবীতে নেত্রকোনায় গঠিত গণআদালতের বিষয়টি দেশবাসীর কাছে আজো রয়েছে অজানা। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন প্রকাশনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, নেত্রকোনায় ’৭১ এর ১২ ডিসেম্বর গণআদালতের মাধ্যমে দালাল রাজাকারদের যে বিচার কার্যকর করা হয় তা স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম ঘটনা।

এ প্রসঙ্গে কথা হয় মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান ও মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক হিরার সাথে। তারা জানান, ’৭১ এ মোহনগঞ্জের গণ আদালতে দেশের ইতিহাসে রাজাকারদের প্রথম বিচার কার্যকর সম্পাদনের ঘটনা।

তারা জানান, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলায় দালাল-রাজাকাররা অগ্নিসংযোগ, হত্যা ও ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক কাজ করে। বিশেষ করে হিন্দু অধ্যুষিত মাইলোরা, দেওথান, দৌলতপুর, খুরশীমুলসহ প্রায় ৬টি গ্রামে পাচঁশতাধিক হিন্দু বাড়িতে ব্যাপক লুটপাট এবং বসতভিটা দখল করে নিয়েছিল দালাল-রাজাকাররা।

১৯৭১ সালের ৮ ডিসেম্বর ভোরে মুক্তিযোদ্ধারা মিত্রবাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মোহনগঞ্জের চারিদিক ঘিরে ফেলে। জয় বাংলা ধ্বনিতে মোহনগঞ্জ থেকে পাক সেনাদের তাড়িয়ে স্বাধীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন মুক্তিযোদ্ধারা। এ সময় মুক্তিযোদ্ধারা বেশ কয়েকজন দালাল-রাজাকার হত্যা করে এবং ১০ জন দালাল রাজাকারকে ধরে এনে থানা হাজতে আটকিয়ে রাখে।

মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে দালাল রাজাকারদের আটকের খবরটি ছড়িয়ে পড়লে সম্রাট এবং খালেক নামে দুই রাজাকার নেত্রকোনায় পালিয়ে আসে। দুই রাজাকারকে ধরতে মোহনগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধারা নেত্রকোনার মুক্তিযোদ্ধাদেরকে বিষয়টি জানায়। ’৭১ এর বিএলএফ কমান্ডার তৎকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চৌধুরী ওই দুই রাজাকারকে আটক করে নেত্রকোনার থানা হাজতে আটকিয়ে রাখে।

’৭১ এর ঘৃণিত এসব অপরাধীদের বিচারের জন্য গণআদালতের প্রস্তুতি নিতে থাকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা। অবশেষে ১২ ডিসেম্বর টেংগাপাড়া খেলার মাঠে হাজারো জনতার উপস্থিতিতে গণ আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ডা. আখলাখ হোসাইন আদালতের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। থানা হাজত থেকে আটককৃত ১০ যুদ্ধাপরাধীকে মঞ্চে নিয়ে আসা হয়। এ সময় তৎকালীন ছাত্রলীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা গোলাম এরশাদুর রহমান, মীর্জা তাজুল ইসলাম, জহিরুল হক হীরা, আমীর উদ্দিন, যুদ্ধচলাকালীন মোহনগঞ্জের বিভিন্ন অমানবিক নারকীয় চিত্র তুলে ধরেন। উপস্থিত হাজারো জনতা গণআদালতের সমন্বয়কের কাছে চিৎকার করে বলে উঠেন-রাজাকারদের ক্ষমা নেই, তাদের বিচার মৃত্যুদণ্ড।

এদিকে ১২ ডিসেম্বর বিকেলে মুক্তিযুদ্ধা মির্জা তাজুল ইসলামের কাছে নেত্রকোনায় পালিয়ে যাওয়া আব্দুল খালেক ও সম্রাটকে তুলে দেন মুক্তিযোদ্ধা হায়দার জাহান চেীধুরী ও মুক্তিযোদ্ধা বাদল মজুমদার। অবশেষে ওই দিন রাতেই পাথরঘাটা লঞ্চঘাট এলাকার নদীর পাড়ে ১২ জন যুদ্ধাপরাধীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

যেসব দালাল রাজাকারদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয় তারা হলো- শেখ আবুল হোসেন, নজরুল শেখ, নরু শেখ, সম্রাট, আব্দুল খালেক, আব্দুল আজিজ নায়েব, নান্নু, নূরুল ইসলাম, লাল হোসেন, সব্দু মিয়া, ইব্রাহিম, চানঁমিয়া।

ঐতিহাসিক গণআদালতের এই মাঠটি সঠিকভাবে সংরক্ষণ এবং মাঠের কোনো এক স্থানে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ জন দালাল রাজাকারের নামের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিফলক নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধের সন্তান কমান্ড।

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/জেডটি/ডিসেম্বর ১২, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর