thereport24.com
ঢাকা, মঙ্গলবার, ৭ মে 24, ২৪ বৈশাখ ১৪৩১,  ২৮ শাওয়াল 1445

‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতির আশায় এক বীরযোদ্ধা

২০১৬ ডিসেম্বর ১৮ ১৭:২৭:১০
‘মুক্তিযোদ্ধা’ স্বীকৃতির আশায় এক বীরযোদ্ধা

হবিগঞ্জ প্রতিনিধি : মুক্তিযোদ্ধা মো. আলতাব মিয়া (৭০)। অসহায় ও অসুস্থ অবস্থায় বিছানায় শুয়ে শুয়ে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্বীকৃতির আশায় প্রহর গুনছেন। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি তিনি।

হবিগঞ্জ জেলা শহরের শায়েস্তানগরের বাসিন্দা মুক্তিযোদ্ধা মো. আলতাব মিয়া। বাবা মৃত. হিলাল উদ্দিন ও মা রহিমা খাতুনের ৫ ছেলে ও ৪ মেয়ের মধ্যে বড় সন্তান তিনি। এ মুক্তিযোদ্ধার ৩ ছেলে ও ৫ মেয়ে রয়েছে। স্ত্রীকে নিয়ে ছেলেদের কাছেই থাকেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধের আগে তিনি সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে কর্মরত ছিলেন। পরে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে হবিগঞ্জ অস্ত্রাগার থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে বেঙ্গল রেজিমেন্ট কমান্ড্যান্ট মানিক চৌধুরী ও ইউনূস চৌধুরীর নেতৃত্বে তিনি ৩০ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত তেলিয়াপাড়া ৩নং সেক্টরের অধীনে হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, মাধবপুর, শেরপুর ও সিলেটে যুদ্ধে অংশ নেন।

যুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দ্য রিপোর্ট টুয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে একান্ত আলাপকালে তিনি বলেন, সেদিন বেঙ্গল রেজিমেন্টের ক্যাপ্টেন আজিজের নেতৃত্বে আমিসহ প্রায় ৩০০ সৈনিক সিলেটের শেরপুর সাদীপুর অংশে অবস্থান নেই। এ সময় পাকহানাদার বাহিনীর সঙ্গে তুমুল যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে হাফিজ উদ্দিন ও মফিল হোসেন নামে দুই মুক্তিযুদ্ধা নিহত হন। এ সময় আহত হন আরও অনেক মুক্তিযোদ্ধা।

তিনি বলেন, যুদ্ধের আগে ১৯৫২ সালে হবিগঞ্জের প্রথম আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটিতে আমি সম্মানিত সদস্য ছিলাম। তা ছাড়া যুদ্ধের পর ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার প্রতিবাদে হবিগঞ্জে আমরা কয়েকজন মিছিল করছিলাম। এ সময় পুলিশ আমাকেসহ আরও কয়েক জনকে আটক করে। ১১ মাস কারাভোগ শেষে আমি মুক্তি পাই।

মুক্তিযোদ্ধা আলতাব মিয়া বলেন, খন্দকার মোস্তাক সরকারের সময়ও আমি দীর্ঘদিন কারাভোগ করি। পরে জিয়া সরকার গঠন করলে আবারও শেখ মুজিব সমর্থিত ২০০০ জনের তালিকা তৈরি করা হয়। এই তালিকায় হবিগঞ্জ থেকে আমিসহ টিপু মিয়া, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মানিক চৌধুরী, মোহনপুর এলাকার বাচ্চু মিয়া, চুনারুঘাটের ফিরোজ মিয়ার নাম অন্তর্ভুক্ত হয়।

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সদর উপজেলা কমান্ডার লে. নায়েক আব্দুল সহিদ আমার সনদে স্বাক্ষর করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমাকে মুক্তিযোদ্ধার কোনো মর্যাদা দেওয়া হয়নি। আমি টাকা বা কোনো প্রকার ভাতা চাই না। শুধু জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানের স্বীকৃতি পেয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।

তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর ছেলে-মেয়েকে নিয়ে অনেক কষ্টে দিনাতিপাত করেছি। কিন্তু সরকারের কোনো সহযোগিতা পাইনি। এখন জীবনের শেষলগ্নে এসে ছেলেদের ওপর ভর করে আছি। রাতে ঘুমালে এখনো যুদ্ধের সেই দিনগুলোর ছবি স্বপ্নে ভেসে ওঠে।

তিনি বলেন, কষ্ট হয় তখনই, যখন দেখি ১৯৭১ সালে যারা মুক্তিযুদ্ধ করেনি, তারা আজ মুক্তিযোদ্ধা সেজে বুক ফুলিয়ে ঘুরছে। স্বাধীনতার পরে অনেক রাজাকারও মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন। কিন্তু অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা আড়ালেই রয়েছেন।

তিনি বলেন, মাঝে মধ্যে নিজের প্রতি ঘৃণা হয়। এমন একটা দেশ দেখার জন্যই কি রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছিলাম। স্বপ্ন ছিল স্বাধীন রাষ্ট্রে বাস করব। কিন্তু পরাধীন জাতির মতো দীর্ঘ ৪৫টা বছর কাটছে অনেক মুক্তিযোদ্ধারই। অনেক মুক্তিযোদ্ধার বউ ছেলে-মেয়েরা মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।

প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, যখন সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেয়নি তখন কি মুক্তিযোদ্ধা সনদ পেতে কেউ মরিয়া হয়ে উঠেছিল, ওঠেনি। তখন মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত ছিল, আর আজ কত?

তিনি বলেন, টাকা বা সম্মানীর জন্য মুক্তিযুদ্ধে যাইনি। স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য যুদ্ধে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমরা স্বাধীনভাবে এ দেশে বাস করতে পারলাম কই? অথচ যারা যুদ্ধের সময় ভীরু-কাপুরুষের মতো দেশ ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল, তারা আজ দেশে এসে রাজত্ব করছেন। তাদের সিদ্ধান্তেই চলছে দেশের চাকা।

(দ্য রিপোর্ট/এইচ/এপি/ডিসেম্বর ১৮, ২০১৬)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর