thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

একুশের আগের দিন

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২০ ১৬:৩৬:৫৯
একুশের আগের দিন

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ছিল পূর্ববঙ্গ আইনসভার প্রথম বাজেট অধিবেশনের শুরু। সে কথা মাথায় রেখে একুশে ফেব্রুয়ারিতে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয়। ফেব্রুয়ারির চার তারিখ থেকে পরবর্তী দিনগুলোতে দিবসটি নিয়ে নেওয়া উদ্যোগ শাসকগোষ্ঠীকে শংকিত করে তোলে। তাই একুশের কর্মসূচিকে ব্যর্থ করতে তারা ২০ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা জারি করে। এক মাসের জন্য ঢাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল-বিক্ষোভ সবকিছু নিষিদ্ধ করা হয়। ২০ ফেব্রুয়ারিতে ছাত্রাবাস এলাকায় মাইকিং করে এই ঘোষণা দেওয়া হয়। যা আন্দোলনকারী ছাত্রদের ক্ষুদ্ধ করে তোলে।

তখন আন্দোলনকারীদের মধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে ১৪৪ ধারা অমান্য করা হবে কিনা? এই নিয়ে ভিন্নতা দেখা যায়। যেমন- পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, তমদ্দুন মজলিশ এবং একটি ছাত্রাবাসের ইউনিয়ন প্রতিনিধি ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার বিপক্ষে মত দেয়। আবার আওয়ামী মুসলিম লীগের রাজনৈতিক সমর্থক স্থানীয় কমিউনিস্ট পার্টির অবস্থান ছিল নিরক্ষরেখায়। তবে এ সব নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে। কিন্তু তর্কটা অনেকটা এমন যে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা মানা হবে কি হবে না। যা রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য গুরুতর প্রশ্ন ছিল।

২০ ফেব্রুয়ারি রাতে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদ এক সভা আয়োজন করে। মওলানা ভাসানীর অনুপস্থিতিতে সভাপতিত্ব করেন আবুল হাশিম। সভায় রাজনৈতিক নেতারা ও অধিকাংশ ছাত্রনেতা ১৪৪ ধারা অমান্য করে সরকারের সঙ্গে সংঘাতে যেতে রাজি হননি। সভাপতিও তাদের বক্তব্য সমর্থন করেন। সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তে আপত্তি জানান যুবলীগের অলি আহাদ, বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক আবদুল মতিন এবং ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ইউনিয়নের ভিপি গোলাম মাওলা। তাদের মত হল ১৪৪ ধারা অমান্য করে নির্ধারিত কর্মসূচি চালিয়ে যেতে হবে। ১১-৩ ভোটের সংখ্যাগরিষ্টতায় জয়ী হলেও ভিন্নমতের গুরুত্ব উপেক্ষা করতে পারেননি বৈঠকের সভাপতি। তাই ঘোষণা হয় পরদিন সকালে আমতলায় উপস্থিত ছাত্রদের মতামতই চূড়ান্ত বলে গণ্য হবে। তবে সভাপতি সেই সঙ্গে শর্ত জুড়ে দেন, যদি ছাত্রসভার মতামত সংগ্রাম পরিষদের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে যায়, তাহলে এ পরিষদ বিলুপ্ত গণ্য হবে। সন্ধ্যায় একই বিষয়ে আরেকটি সভায় সলিমুল্লাহ হলে ফকির শাহাবুদ্দীনের সভাপতিত্বে ১৪৪ ধারা ভঙ্গের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। অন্যদিকে ফজলুল হক মুসলিম হলে অনুষ্ঠিত সভায় নেতৃত্ব দেন আবদুল মোমিন। শাহাবুদ্দিন আহমদের প্রস্তাব অনুযায়ী রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদকে এই সিদ্ধান্তটি জানিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন আবদুল মোমিন এবং শামসুল আলম।

কিন্তু রাজনীতি-সচেতন সাধারণ ছাত্রদের মনোভাব ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। তারা যে কোনো মূল্যে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করার পক্ষে। একই মনোভাব ছিল যুবলীগ এবং ছাত্র নেতৃত্বের বাম অংশের। ফজলুল হক হল, ঢাকা হল, মেডিক্যাল কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের ছাত্রসংগঠনসহ অধিকাংশ ছাত্রাবাসের ইউনিয়ন নেতাদের মনোভাব ছিল নিষেধাজ্ঞা ভাঙ্গার পক্ষে।

সে রাতে ছাত্রাবাসগুলোতে ছাত্রদের চোখে ঘুম ছিল না। গভীর রাত পর্যন্ত তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেছেন। কেউ কেউ পোস্টার-ব্যানার লেখায় ব্যস্ত। কেউ কেউ অন্যান্য ছাত্রাবাসের ছাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। এ সব আলোচনার মূল কথা ছিল একটাই, ১৪৪ ধারা অমান্য কারা সিদ্ধান্তে নিশ্চিত থেকে নির্ধারিত কর্মসূচি পালন। সর্বোপরি রাষ্ট্রভাষার দাবি মেনে নিতে আইনসভার সদস্যদের বাধ্য করা। এই আপষহীন অবস্থানের অন্য একটি তাৎপর্য আছে। তারা বুঝতে পেরেছিলেন ১৪৪ ধারা আসলে একটি শেকল। এই শেকল তাদের আন্দোলনকে লাগাম পরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র। এই শেকল ভাঙ্গতে না পারলে সামনে আর কোনো ন্যায়সঙ্গত দাবিতে তারা এগুতে পারবেন না।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/আরকে/ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এর সর্বশেষ খবর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা - এর সব খবর