thereport24.com
ঢাকা, সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১,  ২৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

‘গুলি কইরা ছাত্র মাইরা হালাইছে’

২০১৪ ফেব্রুয়ারি ২২ ১৫:৩৫:৩৭
‘গুলি কইরা ছাত্র মাইরা হালাইছে’

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : একুশে ফেব্রুয়ারির মর্মান্তিক ঘটনা সারাদেশের জনগণকে স্পর্শ করে। আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে মাইকে প্রচার করা গুলিবর্ষণের বার্তা কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। ঢাকায় জনগণের ক্ষোভ প্রকাশে দেরি হয় না, প্রকাশ ঘটে ওই দিন বিকেলেই। দলে দলে মানুষ ছুটতে থাকে ছাত্রাবাস প্রাঙ্গণে, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ব্যারাক প্রাঙ্গণে আম জনতার ঢল নামে। পুরনো ঢাকার নানা বয়সী মানুষ ঘুরে ঘুরে পুলিশি হত্যাকাণ্ডের আলামত দেখে ক্ষোভে উত্তাল হয়। প্রাঙ্গণে রক্তের ছাপ আর ছাত্রাবাসের শেডগুলোতে গুলির চিহ্ন তাদের মধ্যে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, তা একটিমাত্র বাক্যে প্রকাশ পায়- ‘গুলি কইরা ছাত্র মাইরা হালাইছে।’ দেখা যায় রাষ্ট্রভাষা বাংলার বিপক্ষে থাকা অথবা নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছেন এমন অনেকে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। তারা ছাত্রদের সঙ্গে এক কাতারে আন্দোলনে শামিল হন।

২২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার দিনের সূচনায় মেডিকেল কলেজ হোস্টেল প্রাঙ্গণে একুশের শহীদদের জন্য গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কয়েক হাজার মানুষের উপস্থিতিতে জানাজার পর ইমাদুল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয় সংক্ষিপ্ত শোকসভা। এরপর সেখান থেকে শুরু হয় মিছিলের যাত্রা। মিছিলে আসে নতুন শ্লোগান- ‘শহীদ স্মৃতি অমর হোক’, ‘খুনী নুরুল আমিনের বিচার’, ‘রক্তের বদলা রক্ত চাই’ ইত্যাদি।

কিন্তু শাসকগোষ্ঠী এই ঘটনা থেকে তাৎক্ষণিক কোনো শিক্ষা পেয়েছে বলে মনে হয় না। কারণ পরের দিনও একই ঘটনা ঘটে। সে দিন ছাত্র-জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেয় ইপিআর বাহিনী। কিন্তু ছাত্র-জনতাকে স্তব্ধ করা যায়নি। মিছিলে মিছিলে সয়লাব শহরে সে দিন স্বতঃস্ফূর্ত হরতাল। সড়কের সঙ্গে আরও বন্ধ ছিল ঢাকার ফুলবাড়িয়া রেলস্টেশনে রেলের চাকা। সে দিন শুধু বাজার, দোকান-পাটই বন্ধ থাকেনি, অফিস-আদালতের বাঙালি কর্মচারী ও কারখানার শ্রমিক সবাই বিনা আহ্বানে শামিল হয় মিছিলে। মসজিদে মসজিদে আয়োজন করা হয় গায়েবানা জানাজা ও মোনাজাত। ক্ষুব্ধ জনতার মিছিল নাজিমুদ্দিন রোড, চকবাজার, ইসলামপুর, সদরঘাটে পৌঁছে। মিছিলের সামনে গুলিতে নিহত-আহতদের রক্তেমাখা জামাকাপড়ের অংশবিশেষ লাঠির মাথায় পতাকার মত উড়েছিল। এভাবে বিভিন্ন জায়গায় মিছিল হতে থাকে। শান্তিপূর্ণ শোকমিছিলে পুলিশ পুনরায় গুলি করে। এতে শহীদ হন হাইকোর্টের কর্মচারী সফিউর রহমান, রিক্সাচালক আবদুল আউয়াল, কিশোর অহিউল্লাহ, তাঁতীবাজারের যুবক সিরাজউদ্দিন এবং নাম না জানা আরও কয়েকজন, যাদের সামরিক যানে ও পুলিশ ভ্যানে তুলে নিতে দেখা গেছে। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে সেই খবর ছাপে দৈনিক আজাদ।

উত্তেজিত জনতা রথখোলায় অবস্থিত সরকারপক্ষীয় পত্রিকা ‘দি মর্নিং নিউজ’র অফিসে আগুন ধরিয়ে দেয়। আর্মি ও পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতা ভিক্টোরিয়া পার্ক (বর্তমানে বাহাদুর শাহ পার্ক) এ জমায়েত হয় এবং সেখানে অলি আহাদ, আব্দুল মতিন, কাজী গোলাম মাহবুব বক্তব্য রাখেন।

পর দিন দৈনিক আজাদে লেখা হয়- ‘শুক্রবার শহরের অবস্থার আরও অবনতি। সামরিক বাহিনী তলব। পুলিশ ও সেনার গুলিতে চারজন নিহত। শতাধিক ব্যক্তি আহত।’ আরও লেখা হয়- ‘সমস্ত ঢাকা শহরে উত্তেজনাময় পরিস্থিতি বিরাজ করতে থাকে। সারা শহরটি আপাতদৃষ্টিতে একটি সামরিক ছাউনি বলিয়া প্রতীয়মান হইতে থাকে।’ রক্ষণশীল পত্রিকাটি লিখে- ‘গত দুইদিন ধরিয়া ঢাকা শহরের বুকে যেসব কাণ্ড ঘটিতেছে, সে সমস্ত শুধু শোকাবহ নয়, বর্বরোচিত বটে।’ রাষ্ট্রভাষা বাংলা সম্পর্কে পত্রিকাটি মন্তব্য করে- ‘এ যদি এখানকার জনমতের দাবি হয়, তবে পাকিস্তানকে ইহা মানিয়া লইতে হইবে।’

উপায়ন্তর না দেখে নুরুল আমিন তড়িঘড়ি করে আইন পরিষদে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব আনেন এবং প্রস্তাবটি সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/এইচএসএম/সা/ফেব্রুয়ারি ২২, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

অমর একুশে গ্রন্থমেলা এর সর্বশেষ খবর

অমর একুশে গ্রন্থমেলা - এর সব খবর