thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১,  ১৩ জমাদিউল আউয়াল 1446

পটুয়া কামরুল হাসান

২০১৩ ডিসেম্বর ০১ ১২:৩০:২৬
পটুয়া কামরুল হাসান

দ্য রিপোর্ট ডেস্ক : পটুয়া কামরুল হাসানের জন্ম ১৯২১ সালের ২ ডিসেম্বর। তিনি বাংলাদেশের অগ্রগণ্য শিল্পগুরুদের অন্যতম। ছবি আঁকার সাথে সাথে তিনি রাজনীতি ও সমাজ সংস্কারে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।

কামরুল হাসান ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান জেলার কালনা থানার নারেঙ্গা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পুরো নাম আবু শরাফ মোহাম্মদ কামরুল হাসান। মোহাম্মদ হাশিম ও মোসাম্মৎ আলিয়া খাতুন দম্পতির সন্তান তিনি। ১৯৩০ সালে কলকাতার এম ই স্কুলের ইনফ্যান্ট ক্লাস থেকেই কামরুল হাসানের শিক্ষা জীবনের শুরু। এ স্কুলে কামরুল হাসান ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়েন। পরে বাবার আগ্রহে তিনি কলকাতা মাদ্রাসার অ্যাংলো-পার্সিয়ান বিভাগে সপ্তম শ্রেণীতে ভর্তি হন। ১৯৩৮ সালের জুলাই মাসে তিনি কলকাতার গভর্নমেন্ট স্কুল অফ আর্টসে ভর্তি হন। আর্ট স্কুলে পড়ার যাবতীয় খরচ কামরুল হাসানকেই যোগাতে হতো। টাকা উপার্জনসহ নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকায় ৬ বছরের কোর্স শেষ করতে তার ৯ বছর লেগেছিল। আর্থিক সমস্যা ও পারিবারিক চাপে ভর্তি হয়েছিলেন ড্রাফটসম্যানশিপ বিভাগে। কারণ ওই বিভাগ থেকে পাস করে বেরুলে চাকরি পাওয়া সহজ ছিল। বলা হয়ে থাকে এ বিভাগে ফাইন আর্টসের ছেলেরা গিয়ে স্ট্যান্ড করে। সেখানে কামরুল হাসান করলেন ফেল। ড্রাফটসম্যানশিপ বিভাগ থেকে পরে তাকে ভর্তি করে নেয়া হয়েছিল চারুকলা বিভাগে এবং চারুকলা বিভাগ থেকেই ১৯৪৭ সালে তিনি ডিপ্লোমা অর্জন করেন।

১৯৬০ সালের ১৬ মার্চ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সংস্থার ডিজাইন সেন্টারে চিফ ডিজাইনার হিসেবে তিনি যোগদান করেন। গভর্নমেন্ট ইনস্টিটিউট অফ আর্টস (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউট) এ কামরুল হাসান এগারো বছরের বেশি সময় শিক্ষকতা করেন।

তিনি দেশ ও দেশের বাইরে একক ও যৌথ বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ঢাকায় ১৯৬৪ সালের একক প্রদর্শনী ও ১৯৬৯ সালে রাওয়ালপিন্ডি সোসাইটি অফ কনটেম্পরারি আর্ট গ্যালারিতে একক প্রদর্শনী। স্বাধীনতা-উত্তরকালে তার বেশ কয়েকটি একক শিল্প প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে শিল্পকলা একাডেমীর একক প্রদর্শনীটি ছিল নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছিল ১৯৪৩ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তাঁর আঁকা ১৫৬টি শিল্পকর্ম। প্রদর্শনী অথবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হয়ে কামরুল হাসান মায়ানমার, জাপান, সোভিয়েত ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের বহু দেশ ভ্রমণ করেছেন।

তার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ-বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার চূড়ান্ত নকশা অঙ্কন। তিনি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সরকারের প্রতীকেরও ডিজাইন করেন। তার অন্যান্য উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে- বাংলাদেশ বিমান, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের প্রতীক অঙ্কন। বাংলাদেশের সংবিধানের কভার ডিজাইনেরও রূপকার তিনি। তিনি বাংলাদেশের জামদানির প্রসারে কাজ করেছিলেন।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে কামরুল হাসান নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকে যোগ দেন। ১৯৫০ সালে আর্ট ইনস্টিটিউটের বাইরে শিল্প আন্দোলন ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে তিনি গড়ে তোলেন 'ঢাকা আর্ট গ্রুপ'। জয়নুল আবেদিন এই গ্রুপের সভাপতি এবং কামরুল হাসান সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানে তিনি বিক্ষুব্ধ শিল্পী সমাজের সদস্য হিসেবে এই আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন। ঢাকা শহরে বৈশাখী মেলা আয়োজনেরও অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন তিনি। ১৯৭১ সালের শুরু থেকেই রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের সঙ্গে তিনি ছিলেন পুরোপুরিভাবে সক্রিয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের পর সর্বত্র প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়। ঢাকায় হাতিরপুল এলাকার প্রতিরোধ কমিটির চেয়ারম্যান হন শিল্পী কামরুল হাসান ।

১৯৭১ সালে ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি সম্বলিত পোস্টার এঁকে কামরুল হাসান বিশেষভাবে খ্যাতি অর্জন করেন। ওই সময় তার নেতৃত্বে কাজ করেন শিল্পী দেবদাস চক্রবর্তী, নিতুন কুন্ডু, জহির আহমদ প্রমুখ। তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে একাধিক পোস্টার আঁকেন। এসব পোস্টারের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কামরুল হাসানের আঁকা ইয়াহিয়ার দানবমূর্তি বিষয়ক কার্টুন (এই জানোয়ারদের হত্যা করতে হবে)।

তিনি জীবদ্দশায় বিভিন্ন পুরষ্কারে ভূষিত হন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- প্রেসিডেন্ট পুরস্কার (তমঘা-ই-পাকিস্তান, ১৯৬৫), স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার (১৯৭৯), বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ সম্মান (১৯৭৯), কাজী মাহবুবউল্লাহ ফাউন্ডেশন পুরস্কার (১৯৮৫) এবং ১৯৮৫ সালে তিনি বাংলা একাডেমীর ফেলো মনোনীত হন। এছাড়া ছাত্রজীবনে শরীরচর্চায় পারদর্শিতার কারণে মিস্টার বেঙ্গল উপাধি লাভ করেন।

কামরুল হাসান ১৯৫৯ সালে মরিয়ম বেগমকে বিয়ে করেন।তাদের একমাত্র সন্তানের নাম সুমনা হাসান।

তিনি ১৯৮৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।

(দ্য রিপোর্ট/ডব্লিউএস/ডিসেম্বর ০২, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

SMS Alert

এই দিনে এর সর্বশেষ খবর

এই দিনে - এর সব খবর