thereport24.com
ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ মে 24, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১,  ৯ জিলকদ  1445

২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনা মোতায়েন : সিইসি

২০১৩ ডিসেম্বর ২০ ১৮:৩৯:৩৪
২৬ ডিসেম্বর থেকে সেনা মোতায়েন : সিইসি

দ্য রিপোর্ট প্রতিবেদক : দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ২৬ ডিসেম্বর থেকে নির্বাচনী এলাকায় সেনা মোতায়েন করা হচ্ছে। ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত নির্বাচনের আগে ও পরে মোট ১৫ দিন নির্বাচনী এলাকায় তারা অবস্থান করবেন।

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভা শেষে প্রধান নির্বচিন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।

এনইসির সম্মেলন কেন্দ্রে শুক্রবার বিকেল ৩টায় অনুষ্ঠিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইসির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকায় এবং ডিসিদের (রিটার্নিং কর্মকর্তা) পরামর্শ অনুযায়ী সেনা মোতায়েনের এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানা সিইসি।

কাজী রকিবউদ্দীন সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ করতে সশস্ত্রবাহিনী কাজ করবে। কারণ এটি একটি বিশাল নির্বাচন। পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি দিয়ে এতো বড় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভব নয়। ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনগুলোতেও সেনা মোতায়েন করা হয়েছিল।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে তারা দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের প্রতি টিমের সঙ্গে একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োজিত থাকবেন। প্রায় ৫০ হাজার সেনা এবার নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করবেন।

সিইসি বলেন, যে পাঁচ জেলায় নির্বাচন হবে না সেসব জেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাখা হবে কিনা সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

তিনি বলেন, ২২ ডিসেম্বর থেকে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার ও সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারসহ সব ধরনের অভিযান নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগের দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। ভোটারদের নিরাপত্তায় এবং ভোটদানে সহযোগিতা করতে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

অপরাধীদের তাৎক্ষণিক শাস্তির ব্যবস্থা করতে সেনাবাহিনী ও বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা কাজ করবেন। এছাড়া যেসব প্রার্থী নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছেন তাদের নিরাপত্তা দেওয়া হবে এবং কয়েকজনকে ইতোমধ্যে তা দেওয়াও হয়েছে।

বৈঠকে রিটার্নিং কর্মকর্তারা আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেন। তারা সেনাবাহিনীকে ২৬ ডিসেম্বর থেকে মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অধিক ফোর্স চেয়ে আবেদন করছেন তারা।

বৈঠকে বিএনপিবিহীন নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ, নির্বাচনী এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের তালিকা ধরে ধরে গ্রেফতার, বাজার পরিস্থিতি বিবেচনায় বরাদ্দ দ্বিগুণ এবং রাস্তা-কালভার্ট কেটে নির্বাচন ভন্ডুল করার চেষ্টাকারীদের প্রতিহত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করার তাগিদ দেওয়া হয় সভায়।

সিইসি বলেন, আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্তণে রাখা, প্রার্থীদের নির্বাচনী কার্যক্রম ও প্রচারণা করা এবং ভোটারদের নির্ভয়ে ভোট দেওয়া নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সব সময় প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।

তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নে দল মত নির্বিশেষে চিহ্নিত অপরাধী, চাঁদাবাজ, মাস্তান, অস্ত্রবাজ ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক বা বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেন।

নির্বাচনী এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে সশস্ত্র বাহিনী, বিজিবি, কোস্ট গার্ড, র‌্যাব ও আর্মড পুলিশ। আনসার সহযোগী ফোর্স হিসেবে পুলিশের সঙ্গে মোবাইল টিমে থাকবে।

ভোটদানের জন্য ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ও স্বাচ্ছন্দে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন সে জন্য নিশ্চিয়তামূলক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভ্রাম্যমান ইউনিটকে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ও ভোটকেন্দ্রগুলোতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা এবং যে কোন প্রকার অশুভ কার্যকলাপ প্রতিরোধে সজাগ থাকতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

নির্বাচন কমিশন সচিবালয় এবং রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি মনিটরিংয়ের জন্য ১ জানুয়ারি থেকে একটি সেল খোলা হবে। ওই সেল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পর্যবেক্ষণ করবে এবং প্রাপ্ত পরিস্থিতি সম্বন্ধে সম্মিলিত বাহিনীকে অবহিত করবে।

বৈঠকে উপস্থিত রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিরা তাদের এলাকার সার্বিক পরিস্থিতি সম্পর্কে জানান। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অস্ত্র উদ্ধার অভিযান, চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার এবং প্রার্থীদের নানা অনিয়ম প্রতিরোধে নির্বাচন কমিশনের দিক-নির্দেশনা চান।

সিইসি জানান, প্রতি কেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারীসহ ১৫ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পাঁচজন অস্ত্রধারীসহ ১৬ জন দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া মেট্রোপলিটন এলাকায় প্রতিকেন্দ্রে চারজন অস্ত্রধারীসহ ১৬ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে পাঁচজন অস্ত্রধারীসহ ১৮ জন দায়িত্ব পালন করবেন। পার্বত্য এলাকায় ছয়জন অস্ত্রধারীসহ ১৭ জন ও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে আটজন অস্ত্রধারীসহ ১৯ জন পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্য কাজ করবেন।

নির্বাচনের আগে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ১৫৪ জন প্রার্থী নির্বাচিত হওয়ায় বাকি ১৪৬টি আসনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এতে ৬১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ২৮৬ জন সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা চার কোটি ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭০ জন। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সংখ্যা ৩৮৬ জন। ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১৮ হাজার ১২৩টি এবং ভোট কক্ষের সংখ্যা ৯০ হাজার ৭২৪টি।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার এ বি এম শফিউল হক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাক আহমেদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক হাছান মাহমুদ খন্দকারসহ, অর্থমন্ত্রণালয়ের সচিব, মহাপরিচালক-বিজিবি, আনসার, ভিডিপি, কোস্টগার্ড, এনএসআই, এসবি, ডিজিএফআই ও র‌্যাব, অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক পুলিশ, বিভাগীয় কমিশনার, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, উপ-মহাপরিদর্শক (সকল রেঞ্জ), ডিসি (রিটার্নিং কর্মকর্তা), পুলিশ সুপার, আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা, পরিচালক-আনসার ভিডিপি (সকল রেঞ্জ), সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা।

(দ্য রিপোর্ট/এমএস/এমএআর/ডিসেম্বর ২০, ২০১৩)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

SMS Alert

রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর

রাজনীতি - এর সব খবর