thereport24.com
ঢাকা, রবিবার, ১৬ জুন ২০২৪, ২ আষাঢ় ১৪৩১,  ৯ জিলহজ ১৪৪৫

ভাস্কর্য পুনঃস্থাপিত হওয়ায় বিস্মিত শফী

২০১৭ মে ২৮ ২০:৫০:৫৩
ভাস্কর্য পুনঃস্থাপিত হওয়ায় বিস্মিত শফী

চট্টগ্রাম অফিস : সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের (অ্যানেক্স) সামনে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপিত করাকে অত্যন্ত হতাশাজনক বলে উল্লেখ করেছেন হেফাজতে ইসলামের আমির শায়খুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফী।

তিনি বলেন, ‘দেবী থেমিসের মূর্তি অপসারিত হয়েছে জেনে তখন অসুস্থ শরীরেও আনন্দ পেয়েছিলাম এবং দেশবাসীর সঙ্গে শুকরিয়া জ্ঞাপন করছিলাম। কিন্তু মাত্র দু’দিনের মাথায় যখন দেশবাসী রহমত, বরকত ও মাগফিরাতের মাস পবিত্র রমযানকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলো, প্রথম রোযার তারাবিহ আদায় করে প্রশান্ত চিত্তে ঘরে ফিরেছিল, তখনই দেশবাসীর সাথে আমিও জানতে পারলাম থেমিস মূর্তি সুপ্রিম কোর্টের অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপিত হয়েছে। এমন সংবাদে সমগ্র দেশবাসীর সঙ্গে আমরা বিস্মিত হতবাক এবং বাকরুদ্ধ।’

রবিবার (২৮ মে) দুপুরে সংবাদপত্রে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা আগেই জানিয়েছিলাম- গ্রিক দেবী থেমিসের এই প্রতীককে চিরতরে পরিত্যাগ করতে হবে। এই মূর্তি জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্থাপিত হয়েছিল। তাকে বাংলাদেশের কোথাও স্থান দেওয়া যাবে না। আমাদের সকল আবেদন নিবেদন এবং শান্তিপূর্ণ দীর্ঘ আন্দোলনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে থেমিসের মূর্তি পুনঃস্থাপন এটাই প্রমাণ করে যে, এ দেশের মানুষের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষাকে সরকার বিন্দুমাত্র গুরুত্ব দিচ্ছে না।’

বিবৃতিতে আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘থেমিস মূর্তি সুপ্রিম কোর্টের সামনে থাকবে নাকি পেছনে থাকবে, এইটা কোনো ইস্যু কখনো ছিল না। নামাজের সময় কালো কাপড়ে মুড়ে দেওয়া হবে কি হবে না, এইটাও ইস্যু ছিল না। ইস্যু ছিল, থেমিস থাকবে কি থাকবে না। এখানে মধ্যপন্থা নেওয়ার কোনো সুযোগ নাই।’

আমরা বারে বারে বলেছি, ‘ইসলামে ইনসাফ বা ন্যায়ের ধারণা একটি মৌলিক ধারণা বা গুরুত্বপূর্ণ বিধান। এমনকি ইনসাফ কায়েম ছিল বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ঘোষিত লক্ষ্যও। সেই ন্যায়ের বা ইনসাফের কোনো প্রতীকায়ন যদি গ্রিক ঐতিহ্য থেকে ধার করা হয়, তবে প্রকারান্তরে এটাই ধরে নেওয়া হয় যে, আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্যে ও ধর্মে ন্যায়ের কোনো ধারণা বা অবস্থান ছিল না। এটা ঔপনিবেশিক ভাবাদর্শ।’

হেফাজত আমির আরও বলেন, ‘আমরা আমাদের ঈমান ও আকিদার জমিনে দাঁড়িয়ে এই ঔপনিবেশিক ভাবাদর্শের বিরুদ্ধেই বলেছি। অথচ স্যেকুলার মিডিয়া আমাদের যুক্তি বারবার উপেক্ষা করেছে। আমাদের এই যুক্তির কথা তাদরে বারবার জানানো হলেও তারা ছাপায় না। এমনকি আমরা এ-ও বলেছি, দেবী থেমিস আধুনিক রাষ্ট্র ধারণায় বিচার বিভাগের যে অবস্থান, তারও পরিপন্থি। কারণ থেমিস গ্রিক সংস্কৃতির ঐশ্বরিক আইনের (ডিভাইন ল’) প্রতীক। যে রাষ্ট্র নিজেকে আলাদাভাবে স্যেকুলার বলে পরিচয় দিয়ে নিজের কৌলীন্য জারি করে, সে কীভাবে গ্রিক ঐশ্বরিক আইনের প্রতীককে নিজের বলতে পারে?’

হেফাজত আমির বলেন, ‘এ পর্যায়ে দ্বিতীয় প্রশ্নটি আরও মারাত্মক। গ্রিক পুরাণমতে, থেমিস সোশ্যাল অর্ডার বা সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। সে শুধু ন্যায়বিচারই করে না, সে শক্তি প্রয়োগে সামাজিক শৃঙ্খলাও রক্ষা করে। থেমিসের হাতের তরবারি সেই শক্তি প্রয়োগের প্রতীক। আধুনিক রাষ্ট্র সামাজিক শৃঙ্খলার দায়িত্ব বিচার বিভাগকে দেয় না। তা থাকে নির্বাহী বিভাগে। আমরা বিস্ময় প্রকাশ করেছিলাম যে, ঠিক কোন যুক্তিতে নিজেদের আধুনিক ও প্রগতিশীল দাবি করা বাম স্যেকুলারেরা থেমিসের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন?’

তিনি বলেন, ‘থেমিস অপসারণে যখন আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছিলাম। রমজানের আগেই কোনো সংঘাত ছাড়াই থেমিস অপসারণে ভেবেছিলাম সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, ঠিক তখন মুসলমানদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র মাস রমযানের প্রথম রাত্রে থেমিসকে পুনঃস্থাপন করে জাতির ধর্মীয় বিশ্বাস ও আবেগের সাথে তামাশা করা হয়েছে।’

আহমদ শফী বলেন, ‘আমি খবর পেয়েছি থেমিস পুনঃস্থাপনের প্রতিবাদ জানাতে গভীর রাতেও তৌহিদি ছাত্র-জনতা প্রেস ক্লাবে সমবেত হয়েছেন। তারা সেখানে রাস্তায় সাহরি করেছেন। রমজানের প্রথম রাতেও তারা তাদের পরিবারের সাথে সাহরি করতে পারেন নাই। এটা অতি হতাশা ও বেদনার। শুধু তাই নয়, আমি শুনেছি প্রতিবাদ মিছিলে পুলিশি হামলা হয়েছে, গ্রেফতার হয়েছেন অনেকে। এই সংবাদে আমি মর্মাহত এবং ক্ষুব্ধ।’

আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাস্তবতা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আবারও অনুরোধ জানাই। আজকের মধ্যেই সকল গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি চাই এবং কার উস্কানিতে হামলা হয়েছে তার তদন্ত করে দোষীদের বিচার চাই। সংশ্লিষ্ট সবাইকে আহ্বান জানাই, নাগরিকদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও আমাদের জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্য নিয়ে তামাশা বন্ধ করে গ্রিকদের দেবী থেমিসকে চিরতরে দেশ থেকে অপসারণ করুন। আমার বিশ্বাস, পরম করুণাময় আল্লাহ সবাইকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার তাওফিক দেবেন।’

(দ্য রিপোর্ট/এমএইচএ/এনআই/মে ২৮, ২০১৭)

পাঠকের মতামত:

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ

M

M

SMS Alert

এর সর্বশেষ খবর

- এর সব খবর